হোম > শিক্ষা

২০ লাখেরও বেশি ত্রুটিপূর্ণ বই বাতিল

আমার দেশ অনলাইন

ছবি: সংগৃহীত

বছরের শেষ সময়ে এসে তাড়াহুড়া করে নিম্নমানের পাঠ্যবই ছাপিয়ে সরকারি বিপুল অর্থ আত্মসাতের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে অর্ধশতাধিক ছাপাখানার বিরুদ্ধে। ইতোমধ্যে এসব ছাপাখানায় ২০ লাখেরও বেশি ত্রুটিপূর্ণ বই বাতিল করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কর্তৃপক্ষ। যার বাজারমূল্য প্রায় ১৫ কোটি টাকা। বাতিল করা এসব বই কাটিং মেশিন দিয়ে কেটে ফেলা হয়েছে। এছাড়া এসব ছাপাখানার তিন হাজার টনের বেশি নিম্নমানের কাগজ অনুমোদন না করে বাতিল করা হয়েছে।

এনসিটিবির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. একেএম রিয়াজুল হাসান জানান, এর আগে গত বছরও ছয় লাখেরও বেশি নিম্নমানের ত্রুটিপূর্ণ বই বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া ৩৬টির মতো ছাপাখানাকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল।

পাঠ্যবইয়ের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বেশির ভাগ ছাপাখানার মালিক আওয়ামী মতাদর্শে বিশ্বাসী। দীর্ঘদিন ধরে তারা একটি বিশাল সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। বিগত ১৫ বছরে পাঠ্যবই ছাপায় নয়ছয় করে কয়েক হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এরপরও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এসবের পরও আওয়ামী সরকারের আমলে কোনো বইও বাতিল করা হয়নি। এদিকে জুলাই বিপ্লবের পর চেষ্টা করেও সেই সিন্ডিকেট এখনো ভাঙতে পারেনি অন্তর্বর্তী সরকার। আগের ছাপাখানার মালিকরাই পাঠ্যবই ছাপাচ্ছেন।

এর সত্যতা মিলেছে বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাবেক সভাপতি তোফায়েল খানের বক্তব্যেও। সম্প্রতি তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, সাবেক সরকারের কিছু দুর্নীতিবাজের আশীর্বাদপুষ্ট সিন্ডিকেট বিগত বছরগুলোয় নিম্নমানের বই সরবরাহ করেছে। চক্রটি এখনো এনসিটিবিতে সক্রিয়। তাদের কেউ কেউ এ বছরও নিম্নমানের বই সরবরাহ করছে বলে আমরা জেনেছি। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। এ বছর যে প্রতিষ্ঠানেরই নিম্নমানের বই পাওয়া যাবে, তদন্তের মাধ্যমে তাদের কালো তালিকাভুক্ত করা উচিত। তাহলে পরবর্তী বছরগুলোতে আর কেউ নিম্নমানের বই দিতে সাহস পাবে না।

এনসিটিবি সূত্র জানায়, ছাপাখানার মালিকরা এতটাই কৌশলী যে, তারা একেবারে শেষ মুহূর্তে চুক্তি করে থাকে। যাতে শেষ সময়ে সময় স্বল্পতায় তাড়াহুড়ার মধ্যে যথেচ্ছভাবে নিম্নমানের বই ছাপিয়ে সরবরাহ করতে পারে। অতীতে তারা এমন নয়ছয় করে সরকারের অর্থ আত্মসাৎ করে। এ নিয়ে এবার কঠোর অবস্থানে রয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এনসিটিবি।

এনসিটিবি সূত্র জানায়, ফর্মা মিসিং, ডাবল ফর্মা, পতাকা পরিবর্তন, আলট্রা ভার্নিশ না করা, বাঁধাইয়ে ত্রুটিসহ বিভিন্ন অনিয়মের দায়ে ইতোমধ্যে অর্ধশতাধিক ছাপাখানার ২০ লাখের বেশি প্রাথমিকের পাঠ্যবই বাতিল করেছে এনসিটিবি ইন্সপেকশন কোম্পানি। এছাড়া এসব ছাপাখানার তিন হাজার টন নিম্নমানের কাগজ অনুমোদন না করে বাতিল করা হয়েছে। টেন্ডারের শর্তানুযায়ী, পাঠ্যবইয়ের কাগজ হতে হবে শতভাগ ভার্জিন পাল্পে তৈরি। কিন্তু এসব কাগজে ২০ শতাংশ ভার্জিন ও ৮০ শতাংশ রিসাইকেলড পাল্প ব্যবহার করা হয়।

গতকাল সোমবার রাতে এনসিটিবি মাধ্যমিকের পাঠ্যবই মনিটরিংয়ের সঙ্গে জড়িত প্রি-ডিস্ট্রিবিউশন এজেন্ট কন্ট্রোল ইউনিয়ন বিডি-এর প্রজেক্ট ডাইরেক্টর রাফি মাহমুদ বিপ্লব আমার দেশকে বলেন, টেন্ডারের শর্তানুযায়ী মান পাওয়া না গেলেই ওইসব বই জব্দ করা হচ্ছে। ছাপা, কাটিং ও বাঁধাই পর্যায়ে বিভিন্ন ত্রুটির কারণে এসব বই বাতিল করা হয়েছে।

অন্যদিকে এনসিটিবি প্রাথমিকের বই প্রি-ডিস্ট্রিবিউশন এজেন্ট ইনফিনিটি সার্ভে অ্যান্ড ইন্সপেকশন বিডি-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সিরাজীম মুনির গণমাধ্যমকে বলেন, বিভিন্ন অনিয়ম ও ত্রুটির কারণে সব মিলিয়ে এবার প্রাথমিকের পাঠ্যবইয়ের আড়াই কোটি ফর্ম কাটা হয়েছে। অধিকাংশ ছাপাখানাই এই অনিয়মে জড়িত। এদিকে মুনিরকে ম্যানেজ করতে না পেরে তাকে জীবননাশের হুমকি দিয়েছিলেন কয়েকটি ছাপাখানার মালিক। নিম্নমানের কাগজকে ভালো মান করতে মুনিরকে অর্থ দিয়ে ম্যানেজ করতে চেয়েছিল অর্ধ শতাধিক ছাপাখানার মালিক।

এর আগে ২০২৫ শিক্ষাবর্ষেও অর্ধশতাধিক ছাপাখানার নিম্নমানের কাগজে পাঠ্যবই ছাপানোর বিষয়টি ইন্সপেকশন কোম্পানির তদন্তে ধরা পড়ে। কিন্তু কারও বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অতীতে টাকা দিয়ে নিম্নমানকে ভালো মান করা হয় বলে সম্প্রতি একটি ছাপাখানার মালিকের ফাঁস হওয়া অডিও রেকর্ডে তা স্পষ্ট হয়েছে। ওই অডিও রেকর্ডে জনতা প্রেসের মালিক নজরুল ইসলাম কাজলকে বলতে শোনা যায়, এক যুগ ধরে সব ছাপাখানা নিম্নমানের কাগজে পাঠ্যবই ছাপিয়েছে, আমিও ছাপিয়েছি।

জানা যায়, এভাবে নিম্নমানের পাঠ্যবই ছাপিয়ে আওয়ামী সরকারের গত দেড় যুগে লুটপাট করা হয়েছে কয়েক হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু ২০২৩ সালেই ২৬৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকার অনিয়ম পেয়েছে বাংলাদেশ মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের অধীন শিক্ষা অডিট অধিদপ্তর। বইয়ের মান ও আকার কমিয়ে এবং নিউজপ্রিন্টে ছাপিয়ে লোপাট করা হয় ২৪৫ কোটি টাকা। আর অযাচিত বিল, অতিরিক্ত সম্মানী, আয়কর কর্তন না করা, অগ্রিম সমন্বয় না করাসহ নানা কারণ দেখিয়ে আরো প্রায় ২৫ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছিল শিক্ষা অডিট অধিদপ্তর। এতে পাঠ্যবই ছাপায় দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশও করা হয়েছিল। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

এ প্রসঙ্গে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সদস্য (পাঠ্যপুস্তক) অধ্যাপক ড. রিয়াদ চৌধুরী আমার দেশকে বলেন, পাঠ্যবইয়ের মানের বিষয়ে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। ইতোমধ্যে অর্ধশতাধিক ছাপাখানার বিপুলসংখ্যক নিম্নমানের বই বাতিল ও বিনষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। এ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। বিধি অনুযায়ী আরো কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে।

এনসিটিবির বিতরণ নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মতিউর রহমান খান পাঠানও আমার দেশকে বলেন, এবার ছাপাখানাগুলোকে নিবিড়ভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে। যেখানেই মান খারাপ পাওয়া যাচ্ছে তা জব্দ করে সঙ্গে সঙ্গে বিনষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে।

প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকের বেতন বেড়ে দশম গ্রেডে

মাওলানা ভাসানী ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করেননি

জাবিতে ভর্তি পরীক্ষায় চ্যাটজিপিটি ব্যবহারের সময় শিক্ষার্থী আটক

বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষার প্রবেশপত্র ও ফরম পূরণে নতুন নির্দেশ

মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তিতে অনিয়মের অভিযোগ

জোরালো হচ্ছে শেখ পরিবারের নাম মুছে ফেলার দাবি

ঢাবি বিজ্ঞান ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা ২৭ ডিসেম্বর

জাবিতে ভর্তি পরীক্ষা শুরু

তিন দাবিতে ভিসি অফিস ঘেরাওয়ের ঘোষণা ডাকসুর

নূরানী বোর্ডের ফল প্রকাশ, পাসের হার ৯০ দশমিক ৩৬