হোম > ফিচার

মদিনায় খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট

মারজুক আহমেদ

এটা সর্বজনবিদিত যে, ইন্তেকালের আগে নবীজি (সা.) মুসলিমদের রাষ্ট্রকে যথাযথ ও কার্যকরভাবে পরিচালনার জন্য কাউকে নির্দিষ্টভাবে নিযুক্ত করেননি; তারপর শাসক নির্বাচন পদ্ধতি কী হবে—তাও নির্ধারণ করে দেননি। তবে যেসব সাধারণ মূলনীতি ও মৌলিক বিধান জনগণের সঙ্গে আচরণ এবং রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে আবশ্যকীয়ভাবে মেনে চলতে হবে, আল্লাহর রাসুল (সা.) সেগুলো নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। একই সঙ্গে নিজের জীবনাচার ও বাণী-বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি এমন সব উত্তম আদর্শ মানুষের সামনে তুলে ধরেছেন, যেগুলোর প্রতি শাসক ও শাসিত—উভয়েরই সমানভাবে অনুগত থাকা এবং সেগুলো মান্য করে চলা অপরিহার্য।

সুনির্দিষ্ট মূলনীতি, সুস্পষ্ট বিধান, মূল্যবোধ ও নৈতিক আদর্শের সীমার মধ্য থেকে ইজতিহাদ ও কোরআন সুন্নাহয় অনুল্লিখিত বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ ইসলাম রেখেছে এবং সময় ও স্থানের পরিবর্তন, প্রজন্মের ধারাবাহিক অগ্রগতি, সমাজ, রাজনীতি এবং অর্থনীতির রূপান্তরসহ শাসনব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ ও প্রভাবিত করে এমন সব বিষয়ের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রেখেছে। কাজেই রাসুলুল্লাহ (সা.) শাসক নির্বাচন এবং শাসনব্যবস্থার রূপ নির্ধারণের বিষয়টি মানুষের ওপরই ন্যস্ত করে গেছেন—যাতে তারা সময়, স্থান ও পরিবর্তনশীল পরিস্থিতির চাহিদা অনুযায়ী নিজেদের জন্য উপযুক্ত শাসন পদ্ধতি ও উত্তম শাসক নির্ধারণ করে নিতে পারে।

বনু সায়িদার প্রাঙ্গণে জমায়েত

আল্লাহর রাসুল (রা.)-এর ইন্তেকালের পর সাহাবিরা উপলব্ধি করতে পারলেন, এখন তাদের সবচেয়ে বড় ও প্রধান কর্তব্য হলো মুসলিম উম্মাহর জন্য একজন খলিফা নির্ধারণ করা এবং অতিদ্রুত সময়ে এই কাজ শেষ করা। সেই লক্ষ্যে মদিনার আনসার সাহাবিরা বনু সাকিফার প্রাঙ্গণে খাজরাজ গোত্রের নেতা সাদ ইবনু উবাদা (রা.)-কে কেন্দ্র করে সমবেত হলো। আর মুহাজিররা অন্য এক স্থানে সমবেত হলো। (আর তারিখুল ইসলামি, খণ্ড : ৯, পৃষ্ঠা : ২১) উভয় পক্ষের উদ্দেশ্য–নিজেদের মধ্য থেকে একজনকে খলিফা নির্ধারণ করবেন। মুহাজিররা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছিলেন। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তারা আনসার সাহাবিদের সঙ্গে বলা বলার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলেন।

মুহাজিরদের সিদ্ধান্ত

যখন মুহাজিররা বনু সাঈদার প্রাঙ্গণে আনসারদের সমবেত হওয়ার বিষয়টি জানতে পারলেন, তখন তাদের মনে খিলাফত রাষ্ট্রের নাগরিক-ঐক্যের বিচ্যুতি, সম্মিলিত কার্যক্রম ও প্রচেষ্টার ক্ষয়, পারস্পরিক অসংহতি এবং রাষ্ট্রের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করতে লাগলেন। মুহাজিররা চাইলে নিজেদের মধ্যে আলাদা একটি বৈঠক ডেকে এ বিষয়ে এককভাবে আলোচনা করতে পারতেন। কিন্তু তাদের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, সুস্থ বিচারবুদ্ধি ও দূরদর্শিতার কারণে এবং বিশেষ করে আবু বকর, উমর ও আবু উবাইদা (রা.)-এর প্রজ্ঞা ও হিকমতের ফলে, তারা দ্বীনি ভাই আনসারদের সামনে সরাসরি উপস্থিত হয়ে বুদ্ধিমত্তা ও সুচিন্তিত মতামত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধা করার সিদ্ধান্ত নেন। এটাই ছিল খিলাফতকেন্দ্রিক উদ্ভূত সমস্যার সর্বোত্তম ও যথাযথ সমাধান। (বিনাউদ দাওলাতিল মাদানিয়্যাহ বাদা ওয়াফাতির রাসুল, আলি সাল্লাবি, আল-জাজিরা)

খলিফা নির্বাচনকেন্দ্রিক মতভেদ

এর পরের ঘটনা ইমাম বুখারি সংকলিত দীর্ঘ হাদিসে উমর (রা.)-এর সূত্রে উল্লেখ করেছেন। হাদিসের সারসংক্ষেপ এখানে তুলে দেওয়া হলো। উমর (রা.) বলেন,

মুহাজির সাহাবিরা জানতে পারলেন, আনসাররা বনু সায়িদার প্রাঙ্গণে সমবেত হয়েছে। তারা সেখানে গেলেন। দেখতে পেলেন—সাদ ইবনু উবাদা (রা.) জ্বরে আক্রান্ত হয়ে চাদর গায়ে জড়িয়ে বসে আছেন। মুহাজিররা আনসারদের সঙ্গে বসলেন। এরপর সমবেত আনসারদের একজন উঠে দাঁড়িয়ে (আল্লাহর প্রশংসা করে) মুহাজিরদের উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘আপনারা হলেন ক্ষুদ্র এক গোষ্ঠী। আপনাদের কয়েকজন এখানে এসে আমাদের অধিকার বঞ্চিত করতে চাইছেন।’

উমর ও আবু উবাইদা (রা.)-এর নাম প্রস্তাব

আনসার সাহাবির কথা শুনে উমর (রা.) কিছু বলতে চাইলে আবু বকর (রা.) তাকে থামিয়ে দিলেন। এরপর আবু বকর (রা.) উঠে দাঁড়িয়ে আনসারদের প্রশংসা করে বললেন, ‘নবীজির খলিফা হওয়ার অধিকার একমাত্র কুরাইশদের রয়েছে। বংশমর্যাদা, মাতৃভূমি উভয় দিক থেকে তারা আরবের শ্রেষ্ঠ মানুষ। তাই খলিফা হওয়ার জন্য কুরাইশ গোত্রের দুজন ব্যক্তির নাম আমি প্রস্তাব করছি—উমর ইবনুল খাত্তাব ও আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ।’

এই প্রস্তাব উমর (রা.)-এর মনঃপূত হলো না। আবু উবাইদা (রা.) প্রতিবাদ জানিয়ে বললেন, ‘যে উম্মতের মধ্যে আবু বকরের মতো মানুষ আছে, তাদের নেতা হওয়ার সাহস আমার নেই।’

খলিফা হলেন আবু বকর (রা.)

এরপর আনসারদের আরেকজন সদস্য বললেন, ‘আমি একটা প্রস্তাব দিচ্ছি। কুরাইশদের মধ্য থেকে একজন নেতা আর আনসানদের থেকে আরেকজনকে নির্বাচন করলে কেমন হয়?’

তার প্রস্তাবে সমস্যার সমাধান হওয়ার চেয়ে পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে হয়ে গেল। আনসার মুহাজির উভয় পক্ষ বিবাদে জড়িয়ে পড়ল। তাদের গলার আওয়াজ উঁচু হয়ে উঠতে লাগল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিল। এ অবস্থায় উমর (রা.) অগ্রসর হয়ে আবু বকর (রা.)-এর হাত ধরলেন এবং তার হাতে খিলাফতের বায়াত গ্রহণ করলেন। উমরের দেখাদেখি মুহাজিররা, তারপর আনসাররা উৎফুল্ল মননে তাকে খলিফা হিসেবে স্বীকার করে নিলেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস নম্বর : ৬৮৩০; সংক্ষেপিত)

এভাবে আবু বকর (রা.) মুসলিমজাহানের খলিফা নির্বাচিত হলেন এবং মদিনার বুকে নতুন খিলাফত রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপিত হলো।

রাবিতে আওয়ামীপন্থি ৬ ডিনের অফিসে শিক্ষার্থীদের তালা

নতুন বছরে প্রথম ক্লাস পায়ে থাক নতুন জুতা

বেশি ক্যালোরি হলেও পুষ্টি কমছে খাবারে

খোলাফায়ে রাশেদিনের রাষ্ট্র পরিচালনার বুনিয়াদ

কেন হজরত আবু বকরই হলেন প্রথম খলিফা

শাবিপ্রবি ভর্তি পরীক্ষার আবেদনের সময় বৃদ্ধি

উসকানিমূলক কনটেন্ট সরানোর অনুরোধ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ ওসমান হাদির গায়েবানা জানাজা

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের প্রবেশপথগুলো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত

বেরোবিতে ওসমান হাদির গায়েবানা জানাজার নামাজ আদায়