দীর্ঘ ১৫ বছরের প্রতীক্ষার পর বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (বাকসু) বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে ধীরগতির কারণে বাকসু বাস্তবায়ন ঘিরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা বাড়ছে। তাদের দাবি, দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে নির্বাচন আয়োজন করা হোক।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে গত ৬ অক্টোবর তিন সদস্যের বাকসু গঠনতন্ত্র প্রণয়ন কমিটি ঘোষণা করে ববি প্রশাসন। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দুই দফা আলোচনা শেষে সেই কমিটি গত ১৮ নভেম্বর চূড়ান্ত খসড়া প্রশাসনের কাছে জমা দেয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, খসড়াটি এখন একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেট সভায় অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এরপর যাবে ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। তাই কবে নাগাদ গঠনতন্ত্র সম্পূর্ণভাবে অনুমোদন পাবে এবং নির্বাচন কবে হবে সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারছে না প্রশাসন।
এখনো খসড়াটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ অনুমোদন না পাওয়ায় শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রশাসন অহেতুক কালক্ষেপণ করছে এবং এ বিষয়ে তাদের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। তারা জানান, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে। এর আগে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হবে এর কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ বিষয়ে এক ধরনের উদ্বেগ কাজ করছে।
শাখা শিবিরের দপ্তর সম্পাদক এবং মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী জাকারিয়া ইসলাম বাবু আমার দেশকে বলেন, ছাত্র সংসদ নির্বাচন শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি। কার্যক্রম শুরু হওয়ার দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও অনুমোদন পায়নি চূড়ান্ত খসড়া। প্রশাসনের দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি লক্ষ করা যাচ্ছে না। প্রয়োজনে জরুরি সিন্ডিকেট আহ্বান করে খসড়াটি অনুমোদনের দাবি জানাচ্ছি ।
ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী এবং ছাত্রদল নেতা মোশাররফ হোসেন বলেন, দ্রুত আইন পাস করে বাকসু বাস্তবায়ন করা হোক। তবে প্রশাসনের সামর্থ্য ও ইচ্ছা নিয়েই আমরা সন্দিহান— যারা এক বছরেও ফ্যাসিবাদমুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় গড়তে পারেনি, তারা বাকসু করবে কি না আমাদের প্রশ্ন এখন এটাই।
বাকসু নিয়ে অনিশ্চয়তায় সাবেক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নেতা ও আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ওয়াহিদুর রহমান বলেন, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনগুলো হওয়ার পর কিছু সময় পেরিয়ে যাওয়ায় ও সামনে জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় বাকসুকে ঘিরে কিছুটা অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। উপাচার্যের আশ্বাস অনুযায়ী ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যেই বাকসুর সব কার্যক্রম বাস্তবায়ন দেখতে চাই।
এ বিষয়ে ববি ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি ও রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী হাসিবুল হোসেন বলেন, বর্তমান প্রশাসন সব দোদুল্যমান অবস্থায় রেখেছে। শুধু আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু তেমন অগ্রগতি নেই। ছাত্র সংসদ ইস্যুতে আমরা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় অনেক পিছিয়ে আছি। আমাদের শঙ্কা— প্রশাসন আসলেই বাকসু দেবে কি-না। আমরা চাই জাতীয় নির্বাচনের আগেই সব অনিশ্চয়তা কাটিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হোক।
বাকসু সংবিধান প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক সহযোগী অধ্যাপক ড. তাজিজুর রহমান আমার দেশকে বলেন, আমরা ১৮ নভেম্বর চূড়ান্ত খসড়া প্রশাসনের কাছে জমা দিয়েছি। এখন পরবর্তী প্রক্রিয়া প্রশাসনই দেখবে।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তৌফিক আলম আমার দেশকে বলেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দুই দফা আলোচনা শেষে চূড়ান্ত খসড়া তৈরি করেছি। এখন একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেটে তোলা হবে। সেখানে পাস হলে ইউজিসিতে পাঠানো হবে, এরপর তাদের কিছু প্রক্রিয়াগত কাজ আছে।
ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে কি না— এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এটি পুরোপুরি আমার হাতে নেই। ইউজিসির ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। তবে আমরা চেষ্টা করছি।