সার কারখানায় ব্যবহৃত গ্যাসের দাম বাড়িয়ে প্রায় দ্বিগুণ করেছে সরকার। প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ১৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৯.২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন দাম আগামী ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন এই দাম ঘোষণা করে।
এর আগে গত ১০ আগস্ট সার কারখানায় গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয় পেট্রোবাংলা ও গ্যাস বিতরণকারী কোম্পানিগুলো। তারা প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ১৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছিল। এরপর ৬ অক্টোবর গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। প্রস্তাবে বলা হয়, প্রতি ঘনমিটার গ্যাসে গড়ে খরচ হয় ২৮.৭৮ টাকা। উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে বিক্রি করলে চলতি অর্থবছরে ১২,২৯১ কোটি টাকার ঘাটতি হতে পারে। সরকার ভর্তুকি বরাদ্দ রেখেছে ৬ হাজার কোটি টাকা। সার কারখানায় গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে ঘাটতি কমানো সম্ভব হবে।
শুনানিতে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের ওপর তীব্র আপত্তি জানিয়ে অংশীজনেরা বলেন, ২০২২ সালে শিল্পে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের কথা বলে দাম ১৭৯ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু পরে বাড়তি দাম দিয়ে গ্যাসও ঠিকমতো পায়নি শিল্প কারখানার মালিকরা। সার কারখানায় প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ৪.৪৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৬ টাকা করার পরও কারখানা বন্ধ ছিল। তারা জানান, বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) অধীনে ৫টি ইউরিয়া সার কারখানা রয়েছে। গ্যাসের অভাবে গত অর্থবছরে যমুনা সার কারখানা ৩৫১ দিন, আশুগঞ্জ সার কারখানা ২৫৯ দিন, শাহজালাল সার কারখানা ১৪৭ দিন এবং চট্টগ্রাম ইউরিয়া কারখানা ৮১ দিন বন্ধ ছিল।
গ্যাসের দাম বাড়ানোর পক্ষে মত দিয়ে সরকারের কর্মকর্তারা জানান, প্রতি টন সারে ভর্তুকি বর্তমানে ১৩ হাজার টাকা। কৃষক পর্যায়ে সারের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই। তারা বলেন, বাড়তি উৎপাদন খরচের দায় যদি সরকার ভর্তুকি দিয়ে মিটায়, তাহলে গ্যাসের দাম বাড়তে পারে।
বিসিআইসির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে গ্যাস সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দাম বাড়ানো হয়েছিল, যা রক্ষা করা হয়নি। এতে আগের চেয়ে বছরে উৎপাদন কমেছে ৩ লাখ টন। গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। আর দাম বাড়াতেই হয়, তাহলে ১৬ টাকা থেকে ৪ টাকা বাড়িয়ে ২০ টাকা করা যেতে পারে। এতে কৃষক বাঁচবে।
কর্মকর্তারা আরও জানান, ২০০৬-০৭ সালে সার উৎপাদন হয়েছিল ১৮ লাখ ১৭ হাজার টন। ২০২১-২২ সালে তা কমে ১০ লাখ ১০ হাজার টনে এসেছে। গ্যাসের দাম বাড়ানোর পর ২০২২-২৩ সালে উৎপাদন হয়েছে ৭ লাখ ১৮ হাজার টন ও ২০২৩-২৪ সালে ৬ লাখ ৯৪ হাজার টন। তবে গত অর্থবছরে উৎপাদন ১০ লাখ টন ছাড়িয়েছে।
ওইদিন শুনানি শেষে বিইআরসির চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, “২০ বছর আগে প্রিপেইড মিটারের কাজ শুরু হয়েছে, এখনো ২০ শতাংশ হয়নি। সদিচ্ছা থাকলে এটা হতো। গ্যাস খাতে সিস্টেম লস কমাতে সদিচ্ছা থাকতে হবে। ১৭ কোটি মানুষকে খাওয়াচ্ছে কৃষি, তাই কৃষির জন্য বোঝা তৈরি করা যাবে না। সার কারখানায় উৎপাদন ধরে রাখতে হবে। আবার পেট্রোবাংলার ঘাটতিও পূরণ করা যাবে না। সব দিক বিবেচনা করে কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে।”
শুনানির গ্রহনের দেড় মাসের মাথায় গ্যাসের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয় গতকাল।
এসআর