হোম > জাতীয়

আওয়ামী আমলে বিদ্যুৎ খাতে সংঘবদ্ধ দুর্নীতি হয়েছে: পর্যালোচনা কমিটি

জাতীয় কমিটির অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন

বিশেষ প্রতিনিধি

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিদ্যুৎ খাতে যে- সংঘবদ্ধ দুর্নীতি হয়েছে তা আইনস্টাইনের পক্ষেও মেলানো কঠিন হতো। বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন থেকে শুরু করে বিদ্যুতের বিল পরিশোধ, জ্বালানি আমদানি ও সংযোগ লাইন স্থাপনে বিলিয়ন ডলার লুট ও অপচয় হয়েছে।’ এমন তথ্য তুলে ধরা হয়েছে ২০১০ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সম্পাদিত চুক্তিগুলো পর্যালোচনায় গঠিত জাতীয় কমিটির অন্তর্বর্তী প্রতিবেনে।

রোববার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের কাছে এ প্রতিবেদন পেশ করে কমিটি। আগামী জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন পেশ করা হবে বলেও জানিয়েছেন কমিটির চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. মইনুল ইসলাম চৌধুরী।

কমিটি গঠনের পর ১৪ মাস অতিবাহিত হলেও প্রতিবেদন তৈরি করতে না পারার ব্যাখ্যা দিয়ে বিচারপতি মইনুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, বিগত সরকারের সময়ে আদানিসহ এমন কিছু চুক্তি করা হয়েছে, যেগুলো ছিল পুরোপুরি আত্মঘাতি। এমন পরিমাণ আর্থিক দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করা হয়েছে, এগুলোর আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করতে আমাদের সময় লাগছে। আমরা চাই এমনটি প্রতিবেদন দিতে যেটির আলোকে অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে সরকার আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারে। আমাদের সবারই একটি বিষয় মাথায় রাখতে হচ্ছে, এসব আন্তর্জাতিক চুক্তি বাতিল করার ক্ষেত্রে চুক্তির ধারাগুলোতে কী বলা হয়েছে। তিনি বলেন, বিষযগুলো কারিগরি। অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া গেছে। বেসরকারি খাত থেকে বিদ্যুৎ কিনতেও অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করা হয়েছে।

বিদ্যুৎ উপদেষ্টা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের করা ২০১০ সালের বিশেষ বিধান বাতিল করা হয়েছে। এ বিধানে বিদ্যুতের চুক্তিগুলোকে ইনডেমনিটি দেওয়া হয়েছিল। এটির মেয়াদ ছিল ২০২৬ সাল পর্যন্ত। আমরা চাই, বিদ্যুৎ খাতের অনিয়ম ও দুর্নীতি বেরিয়ে আসুক। এ জন্যই আমরা একটি জাতীয় কমিটি করে দিয়েছি।

আদানিসহ অসম চুক্তিগুলো বাতিলের বিষয়ে বিচারপতি মইনুল ইসলাম বলেন, নানা কারণে অনিয়ম হলেই চুক্তি বাতিল করা যায় না। তবে অনিমিয় ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা সম্ভব। চুক্তির ধারায় বলা হয়েছে, এক পক্ষ বাতিল করতে চাইলে অপর পক্ষকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এখন এ ক্ষতিপূরণ কত টাকা হবে, সেটা নির্ধারণ করতে আন্তর্জাতিক আদালত। চুক্তিতে বাংলাদেশ সরকার স্বাক্ষর করেছে। সেখানে তো আর আওয়ামী লীগের কথা বলা হয়নি। ফলে এর দায়দায়িত্ব এখন বাংলাদেশকেই নিতে হচ্ছে। এটিই হচ্ছে অসুবিধা।

দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, আমরা কমিটির আংশিক রিপোর্ট পেয়েছি। এগুলো আমাদের মন্ত্রণালয় এখন পর্যালোচনা করবে। এরপর আমরা দুর্নীতি দমন কমিশনের সহায়তা নেবো, যাতে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আবদুল হাসিব চৌধুরী, চাটার্ড একাউন্টেন্ট আলী আশফাক, বিশ্বব্যাংকের সাবেক লিড ইকোনোমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন, অর্থনীতিবিদ মোশতাক হোসেন খান, সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ড. শাহদীন মালিকসহ ছাত্র প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ড. জাহিদ হোসেন বলেন, বিগত সরকারের সময়ে দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে বিদ্যুৎ বিল ২৫ শতাংশ বেড়েছে। আমরা নথি পর্যালোচনা করে দেখেছি, শুধু বিদ্যুৎ কেনা ও বিল পরিশোধের মধ্যে ১১ দশমিক এক শতাংশ টাকার ফারাক রয়েছে।

১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির খতিয়ান শ্বেতপত্রে:

শেখ হাসিনার সরকারের আমলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে দুর্নীতির খতিয়ান তুলে ধরে এরআগে শ্বেতপত্র প্রকাশ করে অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বাধীন অপর একটি কমিটি। আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে এ দুই খাতে এক লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে, যা দিয়ে ৩-৪টি পদ্মা সেতু তৈরি করা যেত। এই দুর্নীতি মূলত হয়েছে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ, নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে কমিশন এবং কেন্দ্র ভাড়া ও অতিরিক্ত মুনাফা এই তিনটি খাতে।

সাড়ে ১৫ বছরের দুর্নীতির বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, ওই আমলে দেশের জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে কমপক্ষে ৩ বিলিয়ন ডলার সরাসরি লুট করা হয়েছে। রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ প্লান্টের ক্যাপাসিটি চার্জের নামে লুট করা হয়েছে এক লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। ভারতের আদানির ঝাড়খণ্ডের বিদ্যুৎ প্লান্ট থেকে মাত্রাতিরিক্ত দামে ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি করা হয়েছে অত্যন্ত গোপনে।

দুর্নীতির পরিসংখ্যান চিত্র তুলে ধরে সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু আমার দেশকে বলেন, বিদ্যুৎখাতে আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরে মোট খরচ করা হয়েছে দুই হাজার ৮৩০ কোটি ডলার। বর্তমান বিনিময় হারে প্রায় ৩ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা। ক্যাপাসিটি চার্জে লুটপাট হয়েছে এক লাখ কোটি টাকার বেশি।

তিনি বলেন, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে হয়েছে এক হাজার ৫০৭ কোটি টাকা, ২০১১-১২ অর্থ বছরে হয়েছে ৫ হাজার কোটি টাকা, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে হয়েছে ৮ হাজার ৯০০ কোটি টাকা এবং ২০২২-২৩ এ হয়েছে ১৭ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা। এর অর্থ হল- বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চলেনি এবং এই টাকা তাদের বসিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ক্যাপাসিটি চার্জের নামে অর্থ লুটের বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, সামিট গ্রুপ নিয়েছে ১০ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা, অ্যাগ্রিকো ইন্টারন্যাশনাল নিয়েছে ৭ হাজার ৯৩২ কোটি টাকা, আল্ট্রা পাওয়ার হোল্ডিংস নিয়েছে ৭ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা, ইউনাইটেড গ্রুপ নিয়েছে ৬ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা, আরপিসিএল নিয়েছে ৫ হাজার ১১৭ কোটি টাকা। শেখ হাসিনার সরকার ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির নামে ৯ বছরে ক্যাপাসিটি চার্জ দিয়েছে ১১ হাজার ১৫ কোটি টাকা।

তিন বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর যৌথ সিদ্ধান্ত চায় সরকার

মেট্রোরেলের নকশায় ত্রুটি থাকতে পারে : পরিচালক ফারুক

উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি সভায় যেসব সিদ্ধান্ত

গণভোটের বিষয়ে দলগুলো একমত না হলে সরকার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে

সাবেক মুখ্যসচিব কামাল সিদ্দিকীর মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টার শোক

রাজনৈতিক দলগুলোকে সরকারের এক সপ্তাহের আল্টিমেটাম

সাবেক মুখ্যসচিব কামাল সিদ্দিকী মারা গেছেন

গণতন্ত্র উত্তরণ নির্ভর করছে জাতীয় নির্বাচনের ওপর

জুলাই সনদ ও গণভোট ইস্যুতে বৈঠকে উপদেষ্টা পরিষদ

জটিলতার মেঘ কেটে যাচ্ছে