ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেছেন, যারা ককটেল এবং বাসে আগুন দেয়ার চেষ্টা করবে তাদের গুলি করার নির্দেশ পুলিশ আইনেই বলা আছে। তিনি বলেন, নাগরিকদের সাইবার অপরাধের অভিযোগ দ্রুত গ্রহণ ও সমাধানে ২৪ ঘণ্টা কাজ করবে ডিএমপির সাপোর্ট সেন্টার।
বৃহস্পতিবার সকালে ডিএমপির সাইবার সাপোর্ট সেন্টারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ বলেন। থানার সামনে নিরাপদ পুলিশ সদস্যকে ককটেল মেরে আহত করার ঘটনায় ডিএমপি কমিশনার বলেন, এতে করে পুলিশের মনোবল ভেঙে যাবে। তাই পুলিশের সাথে বাজে ব্যবহার, তাদের আঘাত করবেন না।
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ককটেল হামলাসহ নাশকতামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে পুলিশের মনোবল ভাঙার চেষ্টা করা হচ্ছে। কমিশনার বলেন, ‘অভ্যুত্থানের পর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অনেক ভঙ্গুর অবস্থায় ছিল। আমাদের অনেক চেষ্টা ও কষ্টের ফলে, আপনাদের সহযোগিতায় আজকে পুলিশ অফিসাররা মনোবল ফিরে পেয়েছেন। এ মনোবল ভাঙার চেষ্টা প্লিজ করবেন না।’
ডিএমপি কমিশনার বলেন, বর্তমান বিশ্বে প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে সাইবার জালিয়াতি, অনলাইন প্রতারণা, ডিজিটাল হয়রানি, মানহানি এবং অনলাইন গ্যাম্বেলিংয়ের মতো অপরাধের ধরনও পাল্টে যাচ্ছে, যা নাগরিকদের ব্যক্তিগত ও আর্থিক সুরক্ষার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ডিএমপি একটি অত্যাধুনিক, প্রযুক্তিনির্ভর সাইবার সাপোর্ট সেন্টার চালু করেছে।
তিনি জানান, এই সেন্টারে অত্যাধুনিক ল্যাব, দক্ষ তদন্তকারী দল, ডিজিটাল ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ এবং ২৪ ঘণ্টার রেসপন্স টিম থাকবে। বিশেষ করে নারী ও কিশোর-কিশোরীদের অনলাইন হয়রানি রোধে গুরুত্ব দেওয়া হবে। নাগরিকেরা এখন আরও দ্রুত ও কার্যকর সেবা পাবেন এবং সাইবার অপরাধ সংক্রান্ত অভিযোগ সরাসরি ফেসবুক পেজ (Cyber Support Centre- DB, DMP) বা ই-মেইলের (cybersupportdbdmp@police.gov.bd) মাধ্যমে অনলাইনে জানাতে পারবেন।
কমিশনার আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, এই উদ্যোগের ফলে পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থা বাড়বে এবং নিরাপদ সাইবার স্পেস গড়ে উঠবে। তিনি ডিজিটাল নিরাপত্তা রক্ষায় শুধু পুলিশের নয়, বরং নাগরিক, পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সমাজের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ওপর জোর দেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার সাম্প্রতিক ককটেল হামলা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন। তিনি স্বীকার করেন যে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণ ঘটলেও পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক এবং জনগণ আতঙ্কিত নয়। তবে, গত রাতে থানার সামনে একজন পুলিশ সদস্য ককটেল হামলায় আহত হওয়ার ঘটনাকে দুঃখজনক হিসেবে উল্লেখ করেন।
কমিশনার জনগণকে মনে করিয়ে দেন, পুলিশের মনোবল ভেঙে গেলে এর পরিণতিতে জনগণকেই নিজেদের ঘরবাড়ি পাহারা দিতে হতে পারে।
ককটেল নিক্ষেপকারীদের প্রতি গুলি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ সাজ্জাত আলী স্পষ্ট করে বলেন, তিনি নিজে কোনো নতুন আইন বা নির্দেশ তৈরি করেননি। তিনি তার অফিসারদের শুধুমাত্র বিদ্যমান আইনের কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন।
কমিশনার বলেন, ‘আপনারা আইনটা দেখেন। আমি নিজে কোনো আইন বানাইনি। আইন বানায় পার্লামেন্ট। আমি কোনো নির্দেশ দেইনি। আমার অফিসারদের আমি শুধু বলছি, আইনে এ কথাটা বলা আছে।’
তিনি আরো জানান, নাশকতা সৃষ্টিকারী দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানের জন্য পুলিশ আইন (পিআরবি ও সিআরপিসি) অনুযায়ী নির্ধারিত পরিস্থিতিতেই সর্বোচ্চ বল প্রয়োগ করতে দ্বিধাবোধ করবে না।
তিনি অরাজকতা ঠেকানোর সময় পুলিশ অফিসারদের সঙ্গে অপমানজনক আচরণ না করার জন্যও অনুরোধ জানান। ডিএমপি কমিশনারের এই দ্বিমুখী বার্তা, সাইবার নিরাপত্তা জোরদার এবং একই সাথে কঠোর হাতে নাশকতামূলক কার্যক্রম দমনের দৃঢ়তা প্রকাশ করে।