ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় চারদিন পার হয়ে গেলেও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। গ্রেপ্তার এড়াতে ফয়সাল ও আলমগীর সব ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার বন্ধ করে দেওয়ায় প্রথাগত সোর্স দিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ম্যানুয়ালি তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের ধরতে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে একাধিক জেলায় ম্যারাথন অভিযান চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রথমে কারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তাদের চিহ্নিত করতে বেগ পেতে হয়েছিল। তবে দুজন চিহ্নিত হওয়ার পর তারা গুলিবর্ষণের কিছুটা মোটিভ পেয়েছেন। ডিবি পুলিশের ৯টি টিম ঢাকাসহ সারাদেশে অভিযান চালায়। নারায়ণগঞ্জ এলাকায় সোমবার রাতে র্যাবের একটি টিম অভিযান চালায়।
তবে এখন পর্যন্ত শুটার ফয়সাল ও মোটর সাইকেল চালক আলমগীরকে পাওয়া যায়নি। ডিবি জানায়, এ দুজন ধরা পড়লে এদের অর্থায়ন কে করেছে তাদের চিহ্নিত করা যাবে। আপাতত হাদির রাজনৈতিক শত্রুরা তাকে গুলি করেছে বলে ধরা হচ্ছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, সন্দেহভাজন দুই হামলাকারী ফয়সাল ও আলমগীর ঘটনার পরদিন ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার ভুটিয়াপাড়া সীমান্ত দিয়ে
মোটরসাইকেলযোগে পালিয়ে যায়। ঘটনার পরপরই তারা একটি প্রাইভেট কারে প্রথমে মিরপুর থেকে আশুলিয়া, পরে গাজীপুর হয়ে ময়মনসিংহে ঢোকে। ময়মনসিংহে এসে গাড়ি পালটে অন্য আরেকটি গাড়িতে উপজেলার ধারাবাজার পেট্রোল পাম্পে পৌঁছায়। সেখান থেকে স্থানীয় এক ব্যক্তি তাদের মোটরসাইকেলযোগে ভুটিয়াপাড়া সীমান্তে নিয়ে যান। সেখানে তারা সীমান্ত পার হলে আরেকজন তাদের রিসিভ করে নিয়ে যান।
তবে মোটরসাইকেল চালক কে ছিলেন, তা এখনো শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। ইতোমধ্যে সেই সীমান্ত এলাকায় অবস্থান করা মানব পাচারকারী চক্রের দুই সদস্য সিবিরন দিও ও সঞ্জয় লিপিকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন গোয়েন্দারা। তাদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করা হচ্ছে। পাশাপাশি সন্ত্রাসীদের অবস্থান শনাক্তের চেষ্টা চলছে।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) শফিকুল ইসলাম জানান, হাদির ঘটনায় কোনো আপডেট নেই। তবে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার এম জেড এম ইন্তেখাব চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, কবির নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার
এদিকে বিজিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, হাদির ওপর গুলিবর্ষণে জড়িত ব্যক্তিদের পালানো ঠেকাতে সীমান্তে তল্লাশি চৌকিতে সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। সীমান্তের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চেকপোস্ট স্থাপন করে তল্লাশি কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। সীমান্ত এলাকায় নজরদারি বৃদ্ধি, সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের চলাচল নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ, অনুপ্রবেশ প্রতিরোধসহ সার্বিক নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত স্থানীয় জনসাধারণের সহযোগিতার মাধ্যমেও সীমান্তে নজরদারি করা হচ্ছে। সীমান্তে একাধিক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছিল বলেও জানায় বিজিবি।
ফয়সালের সহযোগী কবির রিমান্ডে
ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় প্রধান সন্দেহভাজন ফয়সাল করিমের ঘনিষ্ঠ সহযোগী কবিরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। ঢাকা মহানগর চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট হাসিবুজ্জামান গতকাল মঙ্গলবার এই আদেশ দেন। কবিরকে সোমবার রাতে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার বক্তাবলী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। পরে র্যাব তাকে পল্টন থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। হাদি হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কবিরকে মঙ্গলবার বিকেলে আদালতে হাজির করে ডিবি। পরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তার ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন গোয়েন্দা পুলিশের মতিঝিল জোনাল টিমের পরিদর্শক ফয়সাল আহম্মেদ।
কবিরকে রিমান্ড চেয়ে পুলিশের আবেদনে বলা হয়, আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করা, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি এবং প্রার্থীদের মনোবলকে দুর্বল করার জন্য ওসমান হাদিকে গুলি করা হয়েছে। ঘটনার পরপর কবির আত্মগোপনে চলে যান। তিনি এ মামলার এজাহারনামীয় আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে রাহুল দাউদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। মামলার রহস্য উদঘাটন ও সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাকে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের পুলিশ রিমান্ড প্রয়োজন। পরে আদালত সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।
জানা গেছে, কবির রাজধানীর আদাবর থানা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের একটি ওয়ার্ড শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক। তিনি আদাবরের নবোদয় হাউজিং সোসাইটিতে বসবাস করেন। গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী জেলার সদর থানার বড় বিঘাই গ্রামে। ফয়সাল করিমের গ্রামের বাড়িও পটুয়াখালীতে। এ ঘটনায় সোমবার ফয়সালের স্ত্রী সাহেদা পারভীন সামিয়া, শ্যালক ওয়াহিদ আহমেদ সিপু এবং বান্ধবী মারিয়া আক্তার লিমাকে ৫ দিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ। এর আগের দিন রোববার হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আব্দুল হান্নানের ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।