তিন দাবিতে বুধবার তৃতীয় দিনেও কর্মবিরতি ও কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি পালন করছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। এতে বেশির ভাগ স্কুলে পরীক্ষা হয়নি। তবে কোথাও কোথাও প্রধান শিক্ষক ও প্রশাসনের সহায়তায় পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবার খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চলমান কর্মসূচি প্রত্যাহারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অন্যথায় ফৌজদারি আইনে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
বুধবার বিকালে প্রাথমিক ও গণ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র ইনফরমেশন অফিসার আব্দুল্লাহ শিবলী সাদিক স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের কয়েকটি সংগঠনের কর্মবিরতি ও পরীক্ষা বর্জনের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে কাজে যোগদানের নির্দেশনার কথা জানানো হয়।
এতে বলা হয়, দেশের সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকগণকে অবিলম্বে কাজে যোগদান করে শিক্ষার্থীদের ৩য় প্রান্তিকের পরীক্ষা গ্রহণ সংক্রান্ত বিদ্যালয়ের যাবতীয় কার্যক্রম যথাযথভাবে সম্পন্নের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হলো। অন্যথায় এ ধরণের শৃঙ্খলা-বিরোধী কার্যক্রমে সম্পৃক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে চাকুরি আইন, আচরণ বিধিমালা ও ফৌজদারী আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তিন দাবি আদায়ে বুধবার থেকে প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’ এর ডাকে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি পালন করছেন দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। একই সঙ্গে শিক্ষকরা নিজ-নিজ উপজেলা বা থানা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার (এটিইও) কার্যালয়ের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় অসংখ্য বিদ্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন শিক্ষকরা। এতে চলমান বার্ষিক পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। আবার কোনো কোনো উপজেলায় পরীক্ষা চলছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের অন্যতম আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ দাবি করেছেন, সারা দেশে আমাদের কর্মসূচি চলছে। শিক্ষকরা স্বত:স্ফূর্তভাবে কর্মসূচি পালন করছেন। তবে বিচ্ছিন্ন দু-একটি জায়গায় ভিন্ন চিত্র রয়েছে বলেও স্বীকার করেন তিনি।
বুধবার বিকাল ৫টার দিকে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি-এর সাধারণ সম্পাদক এবং প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক খায়রুন নাহার লিপি আমার দেশ বলেন, আমাদের কর্মবিরতি অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া তিনি অন্য কোনো কথা বলতে রাজি হননি। পরে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
পিরোজপুরের কাউখালীতে ২৩ নম্বর কাউখালী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে আসা শিক্ষার্থীদের হল থেকে টেনে-হিঁচড়ে বের করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। পরে উপজেলা প্রশাসন ও শিক্ষা কর্মকর্তা এসে সেই স্কুলে পরীক্ষা নিয়েছেন। সাময়িক আতঙ্ক সৃষ্টি হয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে। পরে পরীক্ষা শুরুর আগে উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্বজল মোল্লা ছোট ছোট শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক দূর করার জন্য নিজ হাতে চকলেট বিতরণ করেন।
এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুব্রত রায় বলেন, সহকারী শিক্ষকরা পরীক্ষা বর্জন করায় উপজেলা প্রশাসন ও শিক্ষা অফিসার এসে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নিয়েছেন।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. মুনিবুর রহমান বলেন, স্কুলের সহকারী শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদেরকে হল থেকে টেনে হিঁচড়ে বের করে দিয়েছেন এমন সংবাদ পেয়ে স্কুল আসি। পরে বিষয়টি ঊর্র্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার (ভূমি), ইউপি চেয়ারম্যান, সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় প্রধান শিক্ষককে নিয়ে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেই।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্বজল মোল্লা বলেন, স্কুলের সহকারী শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নিচ্ছেন না এমন সংবাদ পেয়ে স্কুলে এসে আমরা তাদের পরীক্ষা নিয়েছি।
এছাড়া জেলা অধিকাংশ স্কুলের সহকারী শিক্ষকরা পরীক্ষা বর্জন করে কর্মবিরতি পালন করায় প্রধান শিক্ষক ম্যানেজিং কমিটির সদস্য, অভিভাবকদের সহযোগিতায় পরীক্ষা নেয়ার খবর পাওয়া গেছে।
সহকারী শিক্ষকদের চলমান কর্মবিরতির কারণে নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ পৌর শহরের মাইলোড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাড়ে চারশো শিক্ষার্থীর বার্ষিক পরীক্ষা একাই নিয়েছেন প্রধান শিক্ষক মো. শাহজাদা ওসমানী।
অভিভাবকরা জানান, সকালে কয়েকজন ম্যাডাম আসছিলেন, তবে প্রধান শিক্ষক পরীক্ষা শুরু করলে তারা স্কুল থেকে চলে যান।
প্রধান শিক্ষক মো. শাহজাদা ওসমানী বলেন, সহকারী শিক্ষকদের আন্দোলনের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা আছে। আমরা চাই তাদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়া হোক। আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। জবাবদিহিতার জায়গা থেকে আমাকে পরীক্ষা নিতে হচ্ছে। তাছাড়া ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যৎ যেন নষ্ট না হয়, সেই দিকটাও আমাদেরকে খেয়াল রাখতে হবে। আমি প্রাক্তন কয়েকজন শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও আমার অফিস সহায়কের সহযোগিতা নিয়ে পরীক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, ৫টি শ্রেণির মোট ৫১৭ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৪৫০ জন আজ পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। সবার দায়িত্ব একাই পালন করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
সহকারী শিক্ষকদের তিন দফা দাবি বাস্তবায়ন আন্দোলনের মোহনগঞ্জ শাখার আহ্বায়ক ও কাজীয়াটি পালেহা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শাহজাহান আলম বিপ্লব বলেন, সরকার আমাদের তিন দফা দাবি বাস্তবায়ন করে দ্রুত সিদ্ধান্ত দিলেই এই সংকট নিরসন হবে।
নওগাঁর বেশিরভাগ স্কুলে হয়েছে তৃতীয় প্রান্তিক মূল্যায়ন পরীক্ষা। ফলে শিক্ষকদের শাটডাউন ভেস্তে গেছে।
টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলায় সহকারী শিক্ষকদের চলমান আন্দোলনে পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে একাত্মতা ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি। সকাল ১০ টায় উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের সামনে সমবেত হয়ে শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে কর্মবিরতি পালন করেন।
সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের আন্দোলনে চলমান বার্ষিক পরীক্ষা বুধবার তৃতীয় দিনেও বেশির ভাগ বিদ্যালয়ে হয়নি। বিভিন্ন দাবিতে শিক্ষকদের কর্মবিরতির কারণে দেশের শিক্ষাকাঠামোর সবচেয়ে বড় এই স্তর সংকটে পড়েছে। এতে ক্ষুব্ধ অনেক অভিভাবক। তারা বলছেন, বার্ষিক পরীক্ষার সময় এমন আন্দোলন ঠিক হয়নি। ক্ষতির মুখে পড়ছেন শিক্ষার্থীরা।