সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে এম আবদুল্লাহ
বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম আবদুল্লাহ বলেছেন, জুলাই যোদ্ধারা রক্ত দিয়েছে, অঙ্গ হারিয়েছে, অনেক শহীদের জীবনের বিনিময়ে আজ আমরা দাঁড়িয়ে কথা বলতে পারছি, মঞ্চে বসতে পারছি। সুতরাং এই দায়বদ্ধতার জায়গাটি যদি আমরা ভুলে যাই— তাহলে এটি এই জাতির জন্য হবে দুঃখজনক ও আমাদের জন্য হবে এক ধরনের নিমক হারামির জায়গা।
শনিবার রাজধানীর সালাম ইনস্টিটিউট ভবনে জুলাই যোদ্ধাদের অংশগ্রহণে জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটে ‘অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা’ প্রশিক্ষণের সমাপনী ও সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়াধীন জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট (এনআইএমসি) কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন সম্প্রচার পরিবেশের উন্নয়ন সহায়তা প্রকল্পের আওতায় পাঁচ দিনব্যাপী জুলাই যোদ্ধাদের জন্য ‘অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা’ এই প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করা হয়। এতে ১৯ জন তরুণ জুলাই যোদ্ধা অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব মুহম্মদ হিরুজ্জামান এনডিসি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম আবদুল্লাহ। বক্তব্য প্রদান করেন SIBE–NIMC প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আবু সাদেক এবং কোর্স পরিচালক সুমনা পারভীন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রশিক্ষণার্থী ইসরাত জাহান তুশী।
সভাপতির বক্তব্যে মহাপরিচালক বলেন, আজকের এই অনুষ্ঠান আমাদের বীর যোদ্ধাদের নিয়ে, সত্যিকার অর্থেই আমরা নিজেদেরকে ধন্য মনে করছি। কারণ আমাদের বীর যোদ্ধাদের কারণেই আমরা এখানে বসতে পারছি, এখানে কথা বলতে পারছি। সত্যিকার অর্থেই আপনাদের ঋণ শোধ করার মতো নয়। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশকে ফ্যাসিবাদমুক্ত করার জন্য, দেশের মানুষের জন্য গণতন্ত্র ও মুক্তির স্বাদ এনে দেওয়ার জন্য যে সংগ্রাম করেছেন, যে রিস্ক নিয়েছেন এটা খুব কম মানুষই পারে।
তিনি বলেন, আমাদের রাষ্ট্রে অনেক কাজ বাকি। বিশেষ করে দুর্নীতি লাখ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন অফিস দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। যদি সেখান থেকে দেশকে মুক্ত না করা যায়, তাহলে উন্নতি হবে না। কারণ পাত্রে যদি ছিদ্র থাকে, তাহলে কিছুই থাকবে না। এই কাজ তরুণরাই পারে, আমরা পারিনি। তরুণরা মাঠে নেমে প্রমাণ করেছে যত শক্তিশালী বাধাই হোক, সাহস ও প্রতিজ্ঞা দিয়ে জয় করা যায়। এখন দেশকে এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব আপনাদের।
মুহম্মদ হিরুজ্জামান আরও বলেন, আপনাদের সামনে বিরাট ভবিষ্যৎ। দুর্নীতিমুক্ত, জঞ্জালমুক্ত, মানসিকভাবে পজিটিভ বাংলাদেশ গড়ে তোলার দায়িত্ব আপনাদের। জাতি আপনাদের কখনো ভুলবে না। মনে রাখবে। আমরা আপনাদের কাছে চিরঋণী। চেষ্টা করব যতটুকু পারি সেই ঋণ পরিশোধ করতে।
বিশেষ অতিথি এম আবদুল্লাহ বলেন, জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট যে উদ্যোগ নিয়েছে, বিশেষ করে তথ্য উপদেষ্টার আগ্রহ ও নির্দেশনায় এই প্রশিক্ষণ অত্যন্ত সময়োপযোগী। এটি দ্বিতীয় পর্ব। এই পর্বে যারা অংশগ্রহণ করেছেন, তাদের মধ্যে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে অবদান রাখার যে আকাঙ্ক্ষা আমি দেখেছি, তা আমাকে একজন সংবাদকর্মী হিসেবে অত্যন্ত আশাবাদী করেছে। আমরা সবাই জানি, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম নিয়ে আমাদের সামনে অনেক হতাশার জায়গা রয়েছে। সেই জায়গায় যারা বুক চিতিয়ে, বুক টান করে দেশের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য, দেশকে ফ্যাসিস্টমুক্ত করার জন্য রাস্তায় নামতে পারে, গুলি বুকে নিতে পারে তারা যখন এই পেশায় আসার আগ্রহ দেখায়, তখন এটি নিঃসন্দেহে একটি আশাব্যঞ্জক বিষয়।
তিনি বলেন, আমি প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি, তাদের প্রত্যেকের এই আসার আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে। আগামদিনে তারা এক্ষেত্রে যেসব সহযোগিতা প্রত্যাশা করছে, আমরা যে যেখানে আছি, নিজেদের অবস্থান থেকে সেই সহযোগিতা করাটা আমাদের কর্তব্যের মধ্যেই পড়ে।
প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আবু সাদেক বলেন, জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট গণমানুষের কল্যাণে দক্ষ ও যোগ্য মানবসম্পদ তৈরি করে থাকে, যারা গণমাধ্যম শিল্পে কাজ করতে পারে। আপনাদের এই আয়োজনটি তারই ধারাবাহিকতার অংশ। আমাদের উপদেষ্টা মহোদয়ের বিশেষ আগ্রহের কারণে এই প্রশিক্ষণের সুযোগটি তৈরি হয়েছে। উপদেষ্টা মহোদয়ের নির্দেশনার প্রেক্ষিতে আমাদের ডিজি মহোদয় অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে প্রথম একটি কোর্স সম্পন্ন করেন এবং এটি ছিল দ্বিতীয় কোর্স। স্যারের জন্য আপনাদের তরফ থেকে এবং আমাদের তরফ থেকে আমরা আবারও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। স্যার যদি এই উদ্যোগ না নিতেন, তাহলে হয়ত ১৫–২০ দিন বা এক মাস পরে এই আয়োজন হতো। আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহর অশেষ মেহেরবানিতে তা সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
তিনি বলেন, জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট মেধাকে লালন করে। আমরা বিশ্বাস করি, প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই প্রতিভা থাকে, কিন্তু সেই প্রতিভা বিকাশের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ দরকার। কারো প্রতিভা উপযুক্ত পরিবেশে বিকশিত হয়, আবার কারোটা হারিয়ে যায়। তাই আমরা চাই জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট আপনাদের সেই মেধা বিকাশের সুযোগ করে দিক এবং সে লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আপনারা অনলাইন পোর্টাল বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। আমরা তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি গ্রহণ করে অনলাইন পোর্টালের নিয়ম-কানুন, পদ্ধতি ও প্রযুক্তিগত বিষয় নিয়ে একটি আয়োজনের ব্যবস্থা করেছি। আমাদের সম্পদ ব্যক্তিরা আমাদের সহযোগিতা করেছেন। সম্পদ ব্যক্তি নির্বাচনে আব্দুল্লাহ স্যার আমাদের সহায়তা করেছেন।
তিনি আরও বলেন, এটি একটি টিমওয়ার্ক, একটি প্রতিষ্ঠানের অনেক অদৃশ্য মানুষ পর্দার আড়ালে কাজ করেন। টিমওয়ার্ক ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠান দাঁড়াতে পারে না। সবাই আন্তরিক না হলে কাজ হয়, কিন্তু কাজের সৌন্দর্য থাকে না। ইনস্টিটিউটের কর্মীগণ আন্তরিকভাবে আপনাদের সঙ্গে কাজ করেছেন, তাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞতা জানাই। আমাদের উপদেষ্টা মহোদয় বলেছেন, নতুন ব্লাড আসবে, গণমাধ্যম ক্ষেত্রের যে ব্যর্থতা হয়েছে তা আবার ফিরে আসবে। আমরা আপনাদের এই গণমাধ্যম শিল্পের অগ্রজ হিসেবে দেখি। আপনারাই সেই অগ্রসেনানী। অনেকেই বলেছেন, আগে জীবন যেভাবে কেটেছে এখন কিছু করতে চান আপনাদের সেই আকাঙ্ক্ষা আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই পূরণ করবেন। জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট সবসময় আপনাদের পাশে থাকবে, তৎপর থাকবে। আমরা চেষ্টা করব, যখনই সুযোগ পাবো আপনাদের প্রত্যাশা পূরণে আমাদের পক্ষ থেকে ন্যূনতম হলেও একটি ভূমিকা রাখতে।
প্রশিক্ষণ চলাকালীন অংশগ্রহণকারীরা অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার নীতি, পদ্ধতি, নৈতিকতা, তথ্য যাচাই, উৎস সুরক্ষা, সাক্ষাৎকার কৌশল, ডেটা সাংবাদিকতা, ভিজ্যুয়াল স্টোরিটেলিং ও প্রামাণ্যচিত্র সাংবাদিকতা বিষয়ে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
প্রশিক্ষণার্থী আবু হানিফ বলেন, অনুসন্ধানী বিষয়টা আসলে খুবই জটিল একটা বিষয়। কিন্তু জুলাই বিপ্লবের প্রত্যক্ষ সাক্ষী হওয়ার পর, আমাদের কাছে আসলে জটিল না। এই প্রশিক্ষণও আমাদেরকে তা সহজ করে দিয়েছে। আমি আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে বলতে চাই যে আমি এই পেশা শুরু করতে চাই। তিনি সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
প্রকল্পের আওতায় কোরিয়া সরকারের অনুদানে আধুনিক টিভি স্টুডিও, MAM সিস্টেম ও শুটিং ভ্যান সরবরাহ করা হয়েছে, যা প্রশিক্ষণ কার্যক্রমকে আরও প্রযুক্তিনির্ভর ও গতিশীল করবে।
উল্লেখ, Support the Improvement of the Broadcasting Environment for NIMC (SIBE–NIMC) শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে ইতোমধ্যেই ১৫টি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং ৩৩০-এর বেশি সাংবাদিক ও মিডিয়া সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি প্রশিক্ষণ পেয়েছেন।
সমাপনী দিনে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সনদপত্র বিতরণ করা হয়।