হোম > জাতীয়

সরকারের হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও প্রাথমিকে আন্দোলন

স্টাফ রিপোর্টার

রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রাথমিক শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচি। ছবি : আমার দেশ

সরকারের কঠোর হুঁশিয়ারি উপেক্ষা করে তিন দফা দাবি আদায়ে আন্দোলনে অনড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। ফলে দেশের অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ও ‘তালাবদ্ধ’ কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। এতে বেশির ভাগ বিদ্যালয়ে বৃহস্পতিবারও বার্ষিক পরীক্ষা হয় নি। তবে কোথাও কোথাও প্রধান শিক্ষক ও প্রশাসনের সহায়তায় পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবার খবর পাওয়া গেছে।

এদিকে বৃহস্পতিবার পিরোজপুরের নেছারাবাদে শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে দুই দফায় মারামারির ঘটনা ঘটেছে। বার্ষিক পরীক্ষা না নিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা পরিষদের গেটের সামনে শিক্ষকেরা আন্দোলন করতে গেলে এই ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে

‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের’ আহ্বায়ক খায়রুন নাহার লিপি আজ দুপুরে বৃহস্পতিবার বলেন, আমাদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। দাবি বাস্তবায়নে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কর্মসূচি থেকে সরে আসার কোনো সুযোগ নেই।

এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বুধবার বিকালে জরুরি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে শিক্ষকদের অবিলম্বে কর্মে ফেরার নির্দেশনা দেয়। একই সঙ্গে কর্মবিরতি বা শাটডাউন অব্যাহত থাকলে সরকারি চাকরি আইন, আচরণবিধি ও ফৌজদারি আইনে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে কড়া সতর্কবার্তাও দেওয়া হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়– ১১তম গ্রেড প্রদান; ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেডের জটিলতা নিরসন এবং প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির দাবি উঠেছে। এসব বিষয়ে প্রয়োজনীয় চিঠি ইতোমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। পে-কমিশনের প্রতিবেদন পাওয়ার পর বেতন স্কেল উন্নীতকরণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের এমন দাবি সত্ত্বেও শিক্ষক সংগঠনগুলোর অভিযোগ, বাস্তবে দাবি পূরণে দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। মন্ত্রণালয় ছলচাতুরিপনা মাধ্যমে এ আন্দোলন দমানোর চেষ্টা করছে।

এদিকে তিন দফা দাবি আদায়ে সহকারী শিক্ষকরা কর্মবিরতি ও ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির কারণে সারাদেশে প্রাথমিক শিক্ষায় স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। অসংখ্য বিদ্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে, ফলে বার্ষিক পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে।

শিক্ষকরা নিজ নিজ উপজেলা বা থানা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার (এটিইও) কার্যালয়ের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশও করছেন। তবে ঢাকাসহ কিছু বিভাগীয় শহরে সীমিত আকারে পরীক্ষা নেওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

সারাদেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা লাগাতার কর্মবিরতি পালন করলেও যশোরে এ কর্মসূচির কোনো প্রভাব নেই। মোল্লাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামীমা খাতুন বলেন, কর্মসূচি পালনে আমাদের উপরে কোন চাপ নেই, শিক্ষকরা তাদের একাডেমিক দায়িত্ব পালন করছেন।

যশোর ইনস্টিটিউট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সৈয়দা শিরিন সুলতানা বলেন, এখানে কোন শিক্ষক কর্মবিরতি পালন করছেন না। তাই অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সমস্যা হচ্ছে না। আমরা ১০ডিসেম্বরের মধ্যই বার্ষিক পরীক্ষা শেষ করবো।

প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক খায়রুন নাহার লিপি বলেন, ‘শিক্ষকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে শাটডাউন কর্মসূচি পালন করছেন। দাবি পূরণ না হলে কর্মসূচি চলবে।’

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই) সূত্রে জানা যায়, দেশে ৬৫ হাজার ৫৬৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত তিন লাখ ৮৪ হাজারের বেশি শিক্ষকের বেশির ভাগই সহকারী শিক্ষক। প্রধান শিক্ষকরা দশম গ্রেডে উন্নীত হলেও সহকারী শিক্ষকরা এখনও ১৩তম গ্রেডে রয়েছেন, যা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অসন্তোষ বিরাজ করছে।

দাবি আদায় আন্দোলনের সমন্বয়ক ও আহ্বায়কদের কয়েকজনকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার শোকজ নোটিশ দেওয়ায় ক্ষোভ আরও বেড়েছে। তবে অভিভাবকরা বলছেন, হঠাৎ পরীক্ষা বন্ধ হওয়ায় শিশুরা মানসিক চাপের মধ্যে রয়েছে।

শিক্ষকদের কর্মবিরতির কারণে দেশের শিক্ষাকাঠামোর সবচেয়ে বড় এই স্তর সংকটে পড়েছে। এতে ক্ষুব্ধ অনেক অভিভাবক। তারা বলছেন, বার্ষিক পরীক্ষার সময় এমন আন্দোলন ঠিক হয়নি। ক্ষতির মুখে পড়ছেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষক আদনান হোসেন বলেন, সারা দেশে সহকারী শিক্ষকদের শাটডাউন কর্মসূচি চলছে। কিন্তু নেছারাবাদে সহকারী শিক্ষক ছাড়াই পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছিল। আমরা কোনো বাধা দিইনি। তারপও উপজেলার কোথাও কোথাও কয়েকজন ব্যক্তি শিক্ষকদের হুমকি দিচ্ছিল। নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে আমরা উপজেলা পরিষদে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করছিলাম। এমন সময় রুহুল আমীন নামের একজন এসে গালিগালাজ করেন। প্রতিবাদ করতেই তিনি আমার ওপর অতর্কিত হামলা চালান।

জানা যায়, চলমান আন্দোলনের কারণে নেছারাবাদের সহকারী শিক্ষকেরা পরীক্ষা নিচ্ছেন না। ২ ডিসেম্বর থেকে উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পরীক্ষা শুরু হলেও সহকারী শিক্ষক না থাকায় প্রধান শিক্ষকেরা একাই পরীক্ষা পরিচালনা করছিলেন। বৃহস্পতিবার সকালে ১৬৯টি বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক একযোগে উপজেলা চত্বরে জড়ো হলে কয়েকজন অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ সময় অভিভাবক রুহুল আমীন ও শিক্ষক আদনান হোসেনের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা থেকে হাতাহাতি হয়।

অভিভাবক মো. রুহুল আমীন বলেন, পরীক্ষার সময় স্কুল ফেলে শিক্ষকেরা উপজেলা চত্বরে আসেন। বিষয়টি জানতে চাইতেই শিক্ষক আদনান হোসেন আমার ওপর চড়াও হয়ে হামলা চালান।

প্রাথমিক শিক্ষকদের দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের নেতা আনোয়ার উল্যাহ বলেন, ‘আমরা ২২ দিন অপেক্ষা করেছি। কোনো বাস্তব অগ্রগতি না দেখেই বাধ্য হয়ে শাটডাউনে যেতে হয়েছে।’

ময়মনসিংহের অধিকাংশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বুবার ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষকরা। বার্ষিক পরীক্ষা দিতে এসে শ্রেণিকক্ষে তালা দেখে চরম দুর্ভোগে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। নান্দাইলের বিদ্যালয়গুলোতে হযবরল অবস্থার সৃষ্টি হয়। কোনো কোনো বিদ্যালয়ে পরীক্ষা হতে দেখা গেলেও অধিকাংশ বিদ্যালয়ে হয়নি।

লাগাতার কর্মবিরতি, বার্ষিক পরীক্ষা বর্জনের পর বরগুনার আমতলী উপজেলার ১৫২টি বিদ্যালয়ে কমপ্লিট শাটডাউন পালিত হচ্ছে। বুধবার কোনো বিদ্যালয়ে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। বৃহস্পতিবারও একই অবস্থা বিরাজ করছে। তবে কোনো কোনো স্কুলে প্রধান শিক্ষক, নৈশপ্রহরী ও অভিভাবকদের সহযোগিতায় সব স্কুলে পরীক্ষা হয়েছে।

রাষ্ট্রপতির সাক্ষাৎ চেয়ে ইসির চিঠি

এবার ডিএমপির ৫০ থানার ওসি রদবদল

এক যোগে ডিএমপির ১৩ ডিসি বদলি

আগামী নির্বাচনে পুলিশকে ‘ঐতিহাসিক দায়িত্ব’ পালনের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

এভারকেয়ারের পাশে হেলিকপ্টারের মহড়া

সচিবালয় ও যমুনায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ

‘তামাশার নির্বাচন’ থেকে বেরিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপনের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

পোস্টাল ভোট দিতে ১ লাখ ৭০ হাজার প্রবাসীর নিবন্ধন

মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ার আগে ফোনে স্ত্রীকে যা বলেছিলেন ক্যাপ্টেন তানভীর

আরো দুই দলকে নিবন্ধন দিচ্ছে ইসি