সরকারের অনড় অবস্থান
সরকারের অনড় অবস্থানে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর ব্যবসায়ীদের ঘোষণা ভেস্তে গেছে। বাজারে কার্যকর হয়নি নতুন দর। ফলে কোম্পানিগুলো আগের দামেই বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে সব ধরনের ভোজ্যতেল। গত রোববার শান্তিনগর, সেগুনবাগিচা, হাতিরপুল, নয়াবাজার ও কারওয়ানবাজারসহ রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, পুরোনো দামেই মিলছে তেল। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন ১৮৯ টাকা, খোলা সয়াবিন ১৬৯ থেকে ১৭০। বোতলজাত পাঁচ লিটার সয়াবিন ৯২০ টাকা। এছাড়া খোলা পাম তেল ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
কারওয়ানবাজারের মায়ের দোয়া স্টোরের ইমাম উদ্দিন বাবলু বলেন, সরকারের কঠোর হুঁশিয়ারির কারণে কোম্পানিগুলোর ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর ঘোষণা বাজারে কার্যকর হয়নি। তবে কোম্পানিগুলো আগে যে পরিমাণ কমিশন দিত তা কমিয়ে দিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এসএম নাজের হোসাইন আমার দেশকে বলেন, ব্ল্যাকমেইল করে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু সেটা সফল হয়নি। বিগত ১৫ বছরে মন্ত্রী-এমপি ও আমলাদের ম্যানেজ করে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট বাজারে সংকট তৈরি করে ইচ্ছামতো দাম বাড়িয়েছে। সাধারণ ভোক্তাদের পকেট কেটে রাতারাতি বাজার থেকে হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এখনো তারা সক্রিয়।
তিনি বলেন, বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমতির দিকে। এছাড়া কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়াই গত মাসে তারা সরকারকে উপেক্ষা করে একতরফাভাবে ভোজ্যতেলের দাম লিটারে ১৩ টাকা বাড়ানো ঘোষণা দেন। এ ঘটনায় প্রমাণ করে সরকার কঠোর অবস্থানে থাকলে সিন্ডিকেট করে পণ্যের দাম বাড়াতে পারে না।
ক্যাবের এই নেতা আরো বলেন, গত মাসে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে উপেক্ষা করে যারা ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিল তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা জরুরি। অন্যথা মন্দ নজির সৃষ্টি করবে। জুলাই বিপ্লবের পর আমরা বাজারে কোনো সিন্ডিকেট দেখতে চাই না।
বাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সর্বশেষ চলতি বছরের ১৩ অক্টোবর তেল পরিশোধন ও উৎপাদনকারী কোম্পানিদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। এতে সয়াবিন ৬ টাকা ও পাম তেল লিটারে ১৩ টাকা বাড়ানোর কথা জানায় সংগঠনটি।
ওই দিন রাতে সংগঠনটির পক্ষ থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দাম সমন্বয় করা হয়েছে। পরদিন ১৪ অক্টোবর থেকে নতুন দাম কার্যকর হবে বলে জানানো হয়।
তবে ওই দিনই সয়াবিন ও পাম তেলের দাম বাড়ানো ইস্যুতে ব্যবসায়ীদের দাবি সরকারের পক্ষ থেকে নাকচ করে দেওয়া হয়। এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, বর্তমান অবস্থায় তেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তের কোনো অবকাশ নেই। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে তেলের দাম বাড়ানো হয়নি। কেউ বেশি দামে তেল বিক্রি করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ব্যবসায়ীদের ঘোষণা অনুসারে, প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ৬ টাকা বাড়িয়ে ১৮৯ টাকার বদলে ১৯৫ টাকা, খোলা সয়াবিন ৮ বাড়িয়ে ১৬৯ টাকার বদলে ১৭৭। পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের দাম ২৫ টাকা বাড়িয়ে ৯২০ টাকার বিপরীতে ৯৪৫ টাকা, এছাড়া খোলা পাম তেলের দামও লিটারে ১৩ টাকা বাড়ানোর কথা বলা হয়েছিল। তাতে লিটারপ্রতি দাম ১৫০ টাকার বদলে ৬৩ টাকা করা হয়েছিল।
এর আগে গত এপ্রিলে সর্বশেষ সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানো হয়েছিল। তখন সয়াবিন লিটারে ১৪ টাকা বাড়িয়ে ১৮৯ টাকা করা হয়েছিল। এ ছাড়া প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের দাম ১২ টাকা বাড়িয়ে ১৬৯ করা হয়। পাঁচ লিটার সয়াবিন ৭০ টাকা বাড়িয়ে ৯২০ টাকা নির্ধারণ হয়। অবশ্য আগস্টের মাঝামাঝি খোলা পাম তেলের দাম লিটারে ১৯ টাকা কমিয়ে ১৫০ টাকা করা হয়।
এদিকে, গত আগস্ট মাসেই ফের ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীরা লিটারপ্রতি সয়াবিন তেলের দাম ১০ টাকা করে বাড়ানোর প্রস্তাব করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে দেনদরবার করে আসছিলেন। তবে মন্ত্রণালয় এক টাকা বাড়ানোর অনুমতি দিয়েছিল। এ নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে টানাপোড়েন তৈরি হলে কয়েক দফা বৈঠক হয়। এরপর ১৩ অক্টোবর পুনরায় মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক শেষে রাতে একতরফাভাবে মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণা দেয় ভোজ্যতেল পরিশোধন ও উৎপাদনকারী কোম্পানিদের সংগঠন।