* ত্যাগীদের মূল্যায়নের পরামর্শ
* তৃণমূলে গ্রুপিং মিটিয়ে ফেলার প্রস্তাব
বিএনপির বর্ধিত সভার সমাপনী বক্তব্যে তারেক
আগামী নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য শক্তির ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ থাকার জন্য নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হল প্রাঙ্গণে দিনব্যাপী বিএনপির বর্ধিত সভার রুদ্ধদ্বার দ্বিতীয় অধিবেশনে এ কথা বলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তৃণমূল নেতাদের বক্তব্য শোনার পর সমাপনী বক্তব্য দেন তিনি। সভায় অংশ নেওয়া তৃণমূল নেতাদের সূত্রে এ বিষয়গুলো জানা যায়।
সব ষড়যন্ত্র নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করার আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, বিদেশে বিএনপির কোনো প্রভু নেই। তিস্তা, ফারাক্কা, ফেলানী হত্যা, বিডিআর-পিলখানা নিয়ে আমরা (তৃণমূল নেতারা) যে কথা বলেছি, ওরা (ভারত) থেমে থাকবে না। তাদের সহযোগীরা এ দেশের সীমান্তে আছে। এ কারণে আমাদের অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
জামায়াতের নাম উল্লেখ না করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, কয়েকটি রাজনৈতিক দল জনগণের কাছে বেহেশতের টিকিট বিক্রি করছে। এ বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। যাদের মিথ্যা দিয়ে শুরু তারা আরো অনেক কিছু বলতে পারেন, করতে পারেন। এখন আপনারাই (জনগণ) ঠিক করবেন কী করতে হবে।
তারেক রহমান বলেন, সাড়ে পাঁচ মাস আগে আমি বলেছিলাম, আগামী নির্বাচন ঘিরে অদৃশ্য শক্তি ষড়যন্ত্র করবে। পাঁচ মাসের মাথায় তা অনেকটাই দৃশ্যমান হয়েছে। এ কারণে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বিএনপিই প্রথম সংস্কার প্রস্তাব উত্থাপন করে। বর্ধিত সভায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন তারেক রহমান। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। স্বাগত বক্তব্য দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
দ্বিতীয় অধিবেশনে মূলত দীর্ঘদিন পর দলের তৃণমূল থেকে কেন্দ্রীয় নেতারা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সামনে কথা বলেছেন। প্রায় ১০০ নেতা নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের সাংগঠনিক অবস্থা, নিজেদের প্রত্যাশার কথা এবং আগামী দিনে দলের করণীয় নিয়ে নানা ধরনের সুপারিশ তুলে ধরেন। সেগুলো আমলে নিয়ে বিএনপি তার ভবিষ্যৎ কর্মকৌশল নির্ধারণ করবে বলে জানা গেছে।
নীলফামারী পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আল মাসুদ চৌধুরী বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে দলে বিশৃঙ্খলা দেখতে পাচ্ছি। কিছু সুবিধাবাদী যারা আন্দোলন-সংগ্রামে ছিল না, তারা এখন ত্যাগী নেতাদের বিতাড়িত করতে চায়। যদি ত্যাগীরা হারিয়ে যায়, তাহলে সেটা ভবিষ্যতে বিএনপির জন্য ক্ষতিকর হবে। স্বৈরাচারবিরোধী দীর্ঘ আন্দোলনে আমরা যেন ত্যাগীদের অবদানের কথা ভুলে না যাই।
চাঁদপুরের কচুয়া পৌর বিএনপির আহ্বায়ক হাবিবুল্লাহ হাবিব বলেন, স্বৈরাচারবিরোধী দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামে আমরা জেল-জুলুম, অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হয়েছি। ওই সময় যারা আন্দোলনে ছিলেন না, বিদেশে গিয়ে আয়েশি জীবন কাটিয়েছেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এখন তারা আবার সামনে এসেছেন। ওইসব সুবিধাবাদীর ভিড়ে ত্যাগীরা যেন হারিয়ে না যান। এ বিষয়ে হাইকমান্ড পদক্ষেপ নেবেন বলে বিশ্বাস করি।
রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ওহেদুজ্জামান মাহবুব বলেন, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দলে এখন অতিথি পাখিদের ভিড় বেড়েছে, আন্দোলনের সময় যাদের পাওয়া যায়নি। তাদের ভিড়ে ত্যাগীরা যেন ছিটকে না পড়েন।
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুল করিম প্রধান বলেন, সংগঠনকে গতিশীল করতে মাঝেমধ্যে এমন সাংগঠনিক সভা হওয়া দরকার।
রাজশাহী বিএনপির এক নেতা বলেন, বিএনপি একটি সুশৃঙ্খল দল। কিন্তু অনেকের মধ্যে শৃঙ্খলার অভাব রয়েছে। সামনে নির্বাচন। নিজেদের মধ্যে গ্রুপিং মিটিয়ে তৃণমূলে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে।
নরসিংদীর রায়পুরা পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম পলাশ বলেন, দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অনেকে দূরে সরে আছেন। তাদের ফিরিয়ে আনুন। ৫ আগস্টের পর অনেকে শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজে লিপ্ত হয়েছেন। কিন্তু অনেক কিছু কেন্দ্রের নজরে আসে না। এসব বিষয় মনিটরিং করার জন্য তৃণমূলে পৃথক কমিটি দরকার।
যশোর অঞ্চলের এক নেতা বলেন, সংগঠনের প্রায় প্রতিটি ইউনিটেই গ্রুপিংয়ের বিষয় রয়ে গেছে। মূলত কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে এমনটা হচ্ছে। গ্রুপিং মিটিয়ে ফেলতে হবে। নির্বাচন নিয়েও অনেক ষড়যন্ত্র হচ্ছে। ঐক্যবদ্ধভাবে সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে আগামী নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বিএনপিকে ক্ষমতায় আনতে হবে।
বগুড়া বিএনপির এক নেতা বলেন, অনেককে দলে সাইজ করে রাখা হয়। যারা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শ ধারণ করেন এবং খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বের প্রতি অনুগত, যারা ধানের শীষে ভোট দেন, প্রয়োজনে তাদের সামনের সারি থেকে পেছনের সারিতে নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু সংগঠনে তাদের সাইজ করে রাখা ঠিক নয়।
কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা বিএনপির আবদুর রহিম বলেন, শত নির্যাতন-নিপীড়ন উপেক্ষা করে শেখ হাসিনার পতনের দাবিতে আমরা রাজপথে ছিলাম। অসংখ্য নেতাকর্মীকে গুম, খুন ও পঙ্গু করা হয়েছে। তবুও আমরা ঐক্যবদ্ধ রয়েছি।