হোম > রাজনীতি

ছোট ছোট ভূমিকম্প কী বার্তা দিচ্ছে?

অধ্যাপক মো. মুজিবুর রহমান

সম্প্রতি দেশে একাধিকবার ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ায় মানুষের মধ্যে উদ্বেগ বেড়েছে। গত ১ ডিসেম্বর রাত ১২টা ৫৭ মিনিটে কক্সবাজার শহর, উখিয়া এবং চকরিয়া এলাকায় কয়েক সেকেন্ডের হালকা কম্পন অনুভব করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যমতে, যদিও কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি, তবু রাতের নিস্তব্ধতায় হঠাৎ কম্পন অনুভূত হওয়ায় অনেকে আতঙ্কিত হয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন বাইরে।

প্রশ্ন হচ্ছে এ ধরনের ছোট ছোট ভূমিকম্প কি বড় ভূমিকম্পের আলামত? ভূমিকম্পবিদদের মতে, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলটি ভূমিকম্পের প্রধান ফল্টলাইনের ওপর অবস্থিত হওয়ায় এ অঞ্চলটি ভূকম্পনের ক্ষেত্রে তীব্র ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করেন, ছোট ছোট ভূমিকম্প কখনো কখনো ভূত্বকের চাপ কমাতে ভূমিকা রাখে, ফলে তা বড় ভূমিকম্পের ঝুঁকি সামান্য হলেও হ্রাস করতে পারে। তাদের মতে, ছোট কম্পনগুলো ফল্টে জমা হওয়া শক্তিকে কমিয়ে দিতে পারে, যা বড় ভূমিকম্পের সম্ভাবনা হ্রাস করে।

তবে বিশেষজ্ঞদের অন্য একটি মত হলো, ঘন ঘন মাইক্রো-সিসমিক কার্যকলাপ বা ভূপৃষ্ঠের নিচে ঘটে চলা খুব ছোট মাত্রার ভূমিকম্প বা কম্পন বড় কোনো ভূমিকম্পের পূর্বাভাসও হতে পারে। এগুলোর মাত্রা (Magnitude) সাধারণত ২ দশমিক ৫ বা তার নিচে থাকে এবং যা অনেক সময় মানুষ অনুভবই করতে পারে না। এগুলো পৃথিবীর ভূত্বকের ভেতরে শক্তি সঞ্চালন, চাপ সরণ (প্রাজ্ঞ পাঠকরা জানেন, যখন ভূপৃষ্ঠের নিচে কোনো ফাটল থাকে বা ফল্টলাইনে দীর্ঘদিন চাপ জমে থাকে এবং হঠাৎ সেই জমে থাকা চাপের একটি অংশ মুক্ত হয়, তখন যে পরিমাণ চাপ আগের তুলনায় কমে যায়, সেটাকেই চাপ সরণ বলা হয়), ফাটল সৃষ্টি বা টেকটোনিক প্লেটের অত্যন্ত সূক্ষ্ম নড়াচড়ার ফলে ঘটে থাকে।

অর্থাৎ এটি হতে পারে ভূত্বকের ভেতরে চাপ সঞ্চয়ের ইঙ্গিত। তাই যেকোনোভাবেই হোক, এর প্রতি আমাদের ভূবিজ্ঞানী এবং ভূমিকম্প গবেষকদের তীক্ষ্ণ নজর রাখা জরুরি। এর বাইরে আমাদের দেশের যেসব অঞ্চল অধিক ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত, সেখানে অতিমাত্রায় পূর্বসতর্কমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, অধিক ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকার মধ্যে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার অঞ্চল সবচেয়ে বেশি সক্রিয় এবং ঘনবসতিপূর্ণ। সিলেটও রয়েছে।

এখানে পর্যটনকেন্দ্র, শহর, বাজার, বহুতল ভবন এবং ঘনবসতির কারণে ভূমিকম্পজনিত ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা অনেক বেশি। ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞদের ভাষায়, যেসব এলাকায় ভূমিকম্পের পুনরাবৃত্তি বেশি, সেসব এলাকায় সতকর্তা ও পূর্বপ্রস্তুতি থাকা বাধ্যতামূলক। আমাদের রাজধানী ঢাকাও অধিক ঘনবসতিপূর্ণ। এ ক্ষেত্রেও বাধ্যতামূলকভাবে পূর্বপ্রস্তুতি রাখা জরুরি।

এটা অস্বীকার করার উপায় নেই, ভূমিকম্পের ঝুঁকি সম্পর্কে আমাদের কিছুটা ধারণা থাকলেও প্রস্তুতির দিক দিয়ে এখনো যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। ভূমিকম্পের পূর্বপ্রস্তুতি নিয়ে আমাদের কী পরিমাণ অবহেলা রয়েছে, সেটি বোঝার জন্য কয়েকটি দিক অলোচনায় নিয়ে আসা জরুরি।

যেমন : ১. রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশেই অনেক ভবন ভূমিকম্প-সহনশীল নকশায় নির্মিত নয়; ২. স্কুল, কলেজ, হাসপাতালসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় ভূমিকম্প-সম্পর্কিত জরুরি মহড়া খুব কমই হয়; ৩. নগর-পরিকল্পনায় সরকার নির্ধারিত নিরাপত্তার মানদণ্ড যথেষ্টভাবে বিবেচনায় নেওয়া হয় না; ৪. জরুরি উদ্ধার সরঞ্জাম, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দল এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার সমন্বয়ে ঘাটতি রয়েছে। অথচ একটি বড় ধরনের ভূমিকম্প ঘটলে ক্ষয়ক্ষতি কমানোর প্রধান উপায় হলো পূর্বপ্রস্তুতি, সচেতনতা ও সঠিক পরিকল্পনা। এদিক দিয়ে আমাদের অনেক দুর্বলতা রয়েছে, এটি অস্বীকার করার উপায় নেই।

আকস্মিক ভূমিকম্পজনিত ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনার লক্ষ্যে করণীয় দিকগুলো উল্লেখ করে দেশের ভূবিজ্ঞানী এবং ভূমিকম্প গবেষকরা মাঝেমধ্যেই তাদের পরামর্শ ও মতামত জানিয়ে পত্রপত্রিকায় গুরুত্বপূর্ণ নিবন্ধ লিখে থাকেন। কিন্তু এসব লেখা খুব একটা গুরুত্ব পায় বলে মনে হয় না। আমাদের সমস্যা হলো, আগাম পূর্বাভাস থাকার পরও আমরা পূর্বপ্রস্তুতি বা ব্যবস্থা খুব কমই গ্রহণ করি।

ঘটনা না ঘটা পর্যন্ত যেন আমাদের কোনো কিছু করণীয় থাকে না। এর ফলে আমরা দেখি, কোথাও কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তখন ওই দুর্ঘটনা মোকাবিলা করার জন্য সরকারসহ প্রায় সবাই ঝাঁপিয়ে পড়েন। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা যে আগাম সতর্কতা দিয়ে থাকেন, তা দুর্ঘটনা ঘটার আগে খুব একটা গুরুত্ব পায় না। তবু সাম্প্রতিক সময়ে হয়ে যাওয়া ছোট ছোট ভূমিকম্প লক্ষ করে আমাদের যেসব দিকের প্রতি জরুরি ভিত্তিতে মনোযোগ দেওয়া দরকার, সেগুলো হলো

১. ভবন নির্মাণে নিয়মকানুন সম্পর্কিত কঠোরতা আরোপ এবং বাস্তব প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে; ২. সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়মিত ভূমিকম্প-সম্পর্কিত মহড়া দিতে হবে; ৩. জনগণের জানমাল রক্ষার স্বার্থেই সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে ;

৪. অগ্রাধিকার ও অধিক জনগুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করে জরুরি উদ্ধার দলকে আরো প্রশিক্ষিত ও আধুনিকায়ন করতে হবে; ৫. জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টিমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে; ৬. ভূমিকম্পের সময় কী করতে হবে, কী এড়িয়ে চলতে হবে, তা প্রচার করতে হবে গুরুত্বের সঙ্গে; ৭. আমাদের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রগুলোকে উন্নত প্রযুক্তি দিয়ে আধুনিকায়ন করতে হবে।

লেখক : সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত

সব প্রচারসামগ্রী সরাতে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিলেন জামায়াত আমির

পিলখানা হত্যাকাণ্ড ভিন্ন খাতে নিতেই নাটক সাজান তাপস

তফসিলকে স্বাগত জানিয়ে মিরপুরে জামায়াতের মিছিল

তফসিলকে স্বাগত জানালেন নুরুল হক নুর

তফসিল ঘোষণা করায় নির্বাচনি ট্রেন যাত্রা শুরু করেছে

নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক

নির্বাচনের রূপরেখা সফলে তফসিল গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক

বিএনপির সন্ত্রাস বন্ধে তারেক রহমানের হস্তক্ষেপ কামনা আপ বাংলাদেশের

জাতীয় নির্বাচনের তফসিলের খবরে ঢাবি ছাত্রদলের স্বাগত মিছিল

১০০ আসনে খেলাফত আন্দোলনের প্রার্থী ঘোষণা