হোম > রাজনীতি

জামায়াতকে হাতে রেখে বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় এনসিপি

মাহফুজ সাদি

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) অন্যতম আলোচনার বিষয়। তরুণদের নতুন রাজনৈতিক দলটি কোন বলয়ে থেকে ভোট করবে-তাও চূড়ান্তের পথে। দলটিকে কাছে টানতে চাইছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ। উভয় পক্ষের সঙ্গে নানা মাধ্যমে আলোচনা চলছে এনসিপির। আগামী সংসদে জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে জামায়াতকে হাতে রেখে বিএনপির সঙ্গে আসন সমঝোতার আলোচনা করছে দলটি। এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত আসতে পারে চলতি সপ্তাহেই।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের এনসিপিকে আগামী নির্বাচনে কাছে টানতে চায় বিএনপি ও জামায়াত। এ লক্ষ্যে বিভিন্নভাবে দলটির সঙ্গে দেশের প্রধান দুদলের আলোচনা চলছে অনেক দিন ধরেই। এ ক্ষেত্রে এনসিপির উদ্দেশ্য, আগামী সংসদে বিপ্লবীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা, আর বিএনপি-জামায়াতের উদ্দেশ্য বিপ্লবীদের সঙ্গে থাকার বিষয়টি দেখিয়ে ভোটের মাঠে বাড়তি সুবিধা নেওয়া। তবে এ ক্ষেত্রে বুঝে-শুনে হিসাব করে পা ফেলার নীতি নিয়ে বেশি আসন ছাড় পাওয়ার কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে এনসিপি।

নির্বাচনি আসন সমঝোতা নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতের সঙ্গে এনসিপির চলমান আলোচনা প্রায় শেষ পর্যায়ে আছে। চলতি সপ্তাহে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফেরার পর দলটির সঙ্গে এনসিপির আসন সমঝোতার আলাপ চূড়ান্ত হতে পারে। এ ক্ষেত্রে ইতিবাচক সাড়া মিলতে পারে—এমন শক্ত ইঙ্গিতও আছে। তেমনটি হলে জামায়াতের সঙ্গেও চলমান আসন সমঝোতার আলোচনার ইতি ঘটবে। আর বিএনপির সঙ্গে আলোচনা ভেস্তে গেলে জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতা চূড়ান্ত হতে পারে।

এনসিপির সঙ্গে আসন সমঝোতার বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ আমার দেশকে বলেন, এনসিপিসহ আরো কয়েকটি দলের সঙ্গে আলোচনা চলমান আছে।

গণমাধ্যমে কথা বলার অনুমতি না থাকায় নাম প্রকাশ না করে এনসিপির এক যুগ্ম আহ্বায়ক ও যুগ্ম সদস্য সচিব আমার দেশকে বলেন, তারেক রহমান এলে হয়তো আসন সমঝোতার চলমান আলোচনা পরিণতির দিকে যাবে। তাদের সঙ্গে এনসিপির সমঝোতা হতে পারে, আবার জামায়াতের সঙ্গেও হতে পারে। তা না হলে এনসিপি নেতৃত্বাধীন গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট নিজের মতো করে এগোবে। এ বিষয়ে চলতি সপ্তাহেই চূড়ান্ত হবে সিদ্ধান্ত।

জানতে চাইলে এনসিপির রাজনৈতিক লিয়াজোঁ কমিটির প্রধান ও দলটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব আমার দেশকে বলেন, বিএনপি বা জামায়াতের সঙ্গে জোট বা আসন সমঝোতার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি। এ ক্ষেত্রে অফিসিয়াল-আনঅফিসিয়াল আলোচনা চলছে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ২০ জানুয়ারির আগ পর্যন্ত এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ আছে।

এনসিপির শীর্ষ নেতারা বলছেন, রাজনৈতিক দলগুলো এবং নির্বাচন কমিশন বিদ্যমান কাঠামোর মধ্যে নির্বাচনে যাওয়ায় গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো বিপ্লবীদের প্রতি যে আচরণ করছে, তার প্রভাব সুদূরপ্রসারী হতে পারে। সে কারণে আধিপত্যের রাজনীতি বহাল থাকায় বিপ্লবীদের আগামী সংসদে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা জরুরি হয়ে পড়েছে। জুলাই বিপ্লবের চেতনা এগিয়ে নিতে, আধিপত্যবাদবিরোধী লড়াই অব্যাহত রাখতে এবং রাজনৈতিক নতুন বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠা করতে হলে সংসদের ভেতরে-বাইরে তরুণদের সমান্তরালভাবে এগোতে হবে।

তারা আরো বলেন, শহীদ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ড, জুলাই শক্তির ওপর ক্রমাগত হত্যার হুমকি বিপ্লবী নেতৃত্বকে নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। নতুন করে নির্বাচনকেন্দ্রিক ভয়ের সংস্কৃতি নতুন রূপে ফিরে আসতে দেখা যাচ্ছে। এ অবস্থায় এনসিপিকে নির্বাচনি ও রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। প্রধান দুদলকে বাস্তবতা অনুধাবন করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অনুরোধও জানানো হয়েছে। তারা সাড়া না দিলে নিজেদের মতো করে এগোবে এনসিপি।

গণতান্ত্রিক সংস্কার জোটের সম্ভাব্য কয়েক প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা বিএনপি বা জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতা চান। জোটের মধ্যে অন্তত দুটি দলের তৃণমূলের নেতারাও সমঝোতার পক্ষে। এতে তাদের আসনসংখ্যা বাড়বে বলে মত দিলেও শঙ্কাও আছে। বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা হলেও দলটির বিদ্রোহী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারেন। তবে জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতা হলে হয়তো তাদের থেকে এমনটা এড়ানো সম্ভব হবে বলে বিশ্বাস করেন তারা।

কয়েকটি সূত্র জানায়, গণতান্ত্রিক সংস্কার জোটে আরো একাধিক দল যুক্ত হতে আলোচনা করছে, তাও চলতি সপ্তাহে চূড়ান্ত হতে পারে। এরপর বিভিন্ন আসনে সমন্বিত প্রার্থী ঘোষণা করা হবে। একইসঙ্গে নিবন্ধিত এনসিপির ‘শাপলা কলি’ বা এবি পার্টির ‘ঈগল’ যেকোনো একটি প্রতীকে জোট প্রার্থীদের ভোট করার বিষয়ে শিগগির সিদ্ধান্ত হবে।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট সম্প্রসারণে গণতন্ত্র মঞ্চের কয়েকটি দলের সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে। এছাড়া আরো কয়েকটি দলের সঙ্গে আলোচনা শেষ পর্যায়ে থাকার আভাস পাওয়া গেলেও তাদের নাম প্রকাশ করেনি কোনো পক্ষ। তবে এরই মধ্যে জোটের সমন্বিত প্রার্থী বাছাই ও সমন্বিত রাজনৈতিক ইশতেহার, ব্র্যান্ডিং এবং প্রচার কৌশল তৈরিতে পৃথক দুটি উপকমিটি গঠন করা হয়েছে।

এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু আমার দেশকে বলেন, সম্প্রতি জোট নেতারা জরুরি সভায় মিলিত হয়েছি। সেখানে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে আমরা এখনো পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছি।

রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের এক নেতা বলেন, জোটে আরো একাধিক রাজনৈতিক দল যুক্ত হওয়ার আলোচনা শেষ পর্যায়ে। এ ব্যাপারে শিগগির সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

ইতোমধ্যে এনসিপি প্রথম ধাপে ১২৫ আসনে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে। দ্বিতীয় ধাপে আরো ৪০-৫০ আসনে প্রার্থী তালিকা প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে, যা সহসাই ঘোষণা করা হবে বলে জানা গেছে সংশ্লিষ্ট সূত্রে। এবি পার্টি ১০৯ আসনে প্রার্থী তালিকা আগেই প্রকাশ করেছে। আর গণতন্ত্র মঞ্চের প্রার্থীও ঘোষণা করা হয়; সেখানে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের ৩০ জনের মতো প্রার্থী আছেÑনতুন জোটে এই সংখ্যা ৪০-৫০-এ যেতে পারে। এসব প্রার্থীর মধ্যে সমন্বয় করে ৩০০ আসনে মনোনয়ন ঠিক করার প্রক্রিয়া চলছে।

সিলেটের মাটি ছুঁয়ে বিমানে ঢাকায় পৌঁছাবেন তারেক রহমান

মাকে দেখে ৩০০ ফিটে বক্তব্য দেবেন তারেক রহমান

তফসিল সংশোধনের দাবি এনসিপির

বিএনপিতে যোগ দিলেন দুই দলের প্রধান ও এক দলের মহাসচিব

এবার যেসব আসন শরিকদের ছেড়ে দিল বিএনপি

বিএনপির সঙ্গে জোট নয়, এককভাবে নির্বাচন করবে এলডিপি

আরো ৮ আসন শরিকদের ছেড়ে দিলো বিএনপি

এলডিপি ছেড়ে বিএনপিতে যোগ দিলেন রেদওয়ান আহমেদ

দেশে ফিরেই অসুস্থ মাকে দেখতে যাবেন তারেক রহমান

যে শর্তে হাসিনাকে ফেরত দেবে ভারত