হোম > রাজনীতি

রাজনৈতিক সন্ধিক্ষণে বাংলাদেশ

টিআরটি ওয়ার্ল্ডের নিবন্ধ

আমার দেশ অনলাইন

ফাইল ছবি

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। চিকিৎসার জন্য ৮০ বছর বয়সী এই সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে লন্ডনে নেওয়ার কথা। নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছে। এমন গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবনতি অনেকের কপালে ভাজ ফেলেছে।

২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এটাই প্রথম জাতীয় নির্বাচন। খালেদা জিয়ার দীর্ঘ দিনের এই রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমানে ভারতে নির্বাসনে আছেন। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে গত নভেম্বরে হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আর গত মে মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ার পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে কার্যত অদৃশ্য হয়ে পড়েছে তার দল আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ভাগ্য নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় আসন্ন নির্বাচনে সম্ভাব্য বিজয়ী হিসেবে খালেদা জিয়ার বিএনপি এগিয়ে আছে। তবে খালেদা জিয়ার গুরুতর অসুস্থতা তার দলের ভবিষ্যতের ওপর প্রভাব ফেলেছে। কারণ বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর দলটির নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন খালেদা জিয়া।

এমন পরিস্থিতিতে বিশ্লেষকরা প্রশ্ন তুলছেন যে, খালেদা জিয়াকে ছাড়া বিএনপি কি তার জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পারবে এবং তার ছেলে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনের ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে কবে দেশে ফিরে সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দেবেন। এসব প্রশ্নের উত্তর এখনো মেলেনি।

ঢাকার সাংবাদিক জিয়া চৌধুরী টিআরটি ওয়ার্ল্ডকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হওয়ায় এবং বিএনপির অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কারণে বাংলাদেশ সম্ভবত একটি রাজনৈতিক শূন্যতার ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে।’

তার মতে, এই পরিস্থিতির ফলে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি জনগণের রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব না থাকার ঝুঁকি তৈরি হবে।

দেশব্যাপী সক্রিয় বিএনপি দুর্বল হয়ে পড়লে কী ধরনের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে, তা তুলে ধরেন সাংবাদিক জিয়া। তিনি বলেন, ‘এমনটা হলে রাজনৈতিক সংঘাত সংসদের পরিবর্তে রাজপথে ছড়িয়ে পড়তে পারে।’

সাংবাদিক জিয়ার ভাষ্য, ‘বিচ্ছিন্ন বিরোধীদলগুলো মৌলবাদী গোষ্ঠী এবং ক্ষুদ্র শক্তিশালী গোষ্ঠীকে জায়গা করে দিচ্ছে; যাতে তারা একত্রিত হতে পারে, স্থানীয় পর্যায়ে সহিংসতা সৃষ্টি করতে পারে এবং ভিন্নমত পোষণের প্রাতিষ্ঠানিক পথ রুদ্ধ করতে পারে।’

উইসকনসিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক তারিক নিয়াজি টিআরটি ওয়ার্ল্ডকে জানান, তিনি বিএনপির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আশাবাদী।

তিনি বলেন, ‘বিএনপি হাসিনার ১৫ বছরের স্বৈরাচারী শাসনেও টিকে ছিল। জিয়া ও তার দল অটল ছিল এবং নত হয়নি। খালেদার পরে কি দলটি টিকে থাকবে, অবশ্যই।’

‘বিএনপি অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতীয়তাবাদের ওপর প্রতিষ্ঠিত’ উল্লেখ করে অধ্যাপক তারিক বলেন, ‘বিএনপির শিকড় বাংলাদেশি সমাজের গভীরে প্রোথিত।’

তার মতে, ভারতের কংগ্রেসের নেতা জওহরলাল নেহরু কিংবা পাকিস্তানের মুসলিম লিগের মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর মতো আইকনিক নেতাদের মৃত্যুর পরেও যেমন দল দুটি সমৃদ্ধ হয়েছিল, তেমনই বিএনপিও স্বতন্ত্র নেতাদের ছাপিয়ে গেছে।

তারিক নিয়াজি বলেন, কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে দ্বিমুখী রাজনৈতিক নীতির মাধ্যমে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে—আওয়ামী লীগের ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’, যা কেবল জাতিগত বাঙালিদের অধিকারের পক্ষে; বনাম বিএনপির ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতীয়তাবাদ’, যা এমন সবাইকে নাগরিকত্ব দিয়ে থাকে যারা বাংলাদেশকে নিজের দেশ মনে করে।

এই দ্বিদলীয় শাসনব্যবস্থায় ক্ষমতার পালাবদল এমন এক পদ্ধতিতে হয়, যেখানে সামান্য ব্যবধানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও পুরোপুরি বিজয় দাবি করা যায়। একই সঙ্গে পরাজিত দল অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ে।

তারিক নিয়াজি এমন একটি আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থার আহ্বান জানিয়েছেন, যেখানে ৪৯.৯ শতাংশ ভোটপ্রাপ্ত দলেরও সংসদে সমতুল্য প্রতিনিধিত্ব থাকবে।

পরিবারতান্ত্রিক প্রতীকবাদ

রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান টিআরটি ওয়ার্ল্ডকে বলেন, বাংলাদেশে জিয়া ও শেখ পরিবারের প্রতীকবাদ এখনো গুরুত্বপূর্ণ। উভয় দলের মধ্যেই তীব্র অস্থিরতা ছিল এবং তাদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠাতাদের হত্যার পর তারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে পড়ে।

তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা যখন নেতৃত্বে আসেন, তখন উভয় দলের অভ্যন্তরীণ সংহতি পুনরায় স্থাপিত হয় এবং তারা সমৃদ্ধ হয়।’

উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ১৯৮১ সালে খালেদা জিয়ার স্বামী জিয়াউর রহমানকে হত্যার পর বিভিন্ন উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়ে বিএনপি। খালেদা জিয়া নেতৃত্বে আসার ফলে ঐক্য পুনরুদ্ধার হয় এবং অবশেষে ১৯৯১ সালে দলটি ক্ষমতায় আসে।

একইভাবে হাসিনার শাসনামলে দুর্নীতির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হলেও ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে খালাস পান খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান। লন্ডনে নির্বাসনে থাকার সময় তিনি কার্যত দলের নিয়ন্ত্রণ নেন এবং ১৫ বছরের দমন-পীড়নের মধ্য দিয়ে বিএনপির টিকে থাকার মূল পরিকল্পনা করেন।

জাহেদ উর রহমান বলেন, ‘শুরুতে তারেক রহমান তার মাকে দল পরিচালনায় সাহায্য করেছিলেন। কিন্তু পরে তিনি কার্যত দলের প্রধান হয়ে ওঠেন।’

তবুও কোনো আইনি বাধা না থাকার সরকারি আশ্বাস সত্ত্বেও তারেক রহমানের বাংলাদেশে ফিরে আসতে অনিচ্ছা জল্পনাকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে।

বিএনপি কর্মকর্তারা জোর দিয়ে বলেছেন, তারেক রহমান ‘শিগগিরই’ দলের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য দেশে ফিরে আসবেন, তবে এখন পর্যন্ত কোনো সুনির্দিষ্ট ঘোষণা আসেনি।

সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, বিএনপি ৩০ শতাংশ সমর্থন নিয়ে এগিয়ে রয়েছে। তবে ৪০টি আসনে মনোনয়ন নিয়ে স্থানীয় নেতাদের বিরোধের কারণে বিক্ষোভ হয়েছে, যা দলীয় ঐক্যকে নষ্ট করেছে।

তারিক নিয়াজি বলেন, বিএনপি ও আওয়ামী লীগ ‘দেশের রাজনৈতিক ক্ষমতা কাঠামোর প্রাণ’। তার মতে, ‘খালেদা ও হাসিনা দুজনেই দীর্ঘকাল ধরে দ্বিদলীয় ব্যবস্থার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে আসছেন। দুঃখজনকভাবে, হাসিনা নিজের শেষ শাসনামলে (২০০৯-২০২৪) এই দ্বিদলীয় শাসনব্যবস্থার জন্য ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠেন।

তিনি আরো বলেন, আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে অঙ্কুরেই ভেঙে ফেলত; সমাজ থেকে চরমপন্থা, জনতুষ্টিবাদ ও জনতাবাদ দূর করে দিত।

নতুন শক্তির আগমন

জিয়া চৌধুরী বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলন থেকে সৃষ্টি এবং নাহিদ ইসলামের মতো তরুণের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ২০২৪ সালের অভ্যুত্থানের গতিপ্রকৃতি বহন করে।

তিনি বলেন, পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতির প্রতি হতাশ শিক্ষিত তরুণদের কাছে বেশ আবেদন সৃষ্টি করেছে এনসিপি।

তিনি আরো বলেন, এনসিপির কর্তৃত্ববাদবিরোধী ভাবমূর্তির মধ্য দিয়ে সংস্কারের প্রতিশ্রুতি মিলছে। কিন্তু তৃণমূলে দলটির সাংগঠনিক সক্ষমতার অভাব রয়েছে এবং অন্তর্বর্তী সরকারের খুব কাছাকাছি থাকায় ঝুঁকিতে রয়েছে দলটি।’

জরিপে দেখা গেছে, মাত্র ৬ শতাংশ সমর্থন নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে আছে এনসিপি। অন্যদিকে বিএনপির ৩০ শতাংশ এবং জামায়াতে ইসলামীর ২৬ শতাংশ সমর্থন রয়েছে।

এনসিপির ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দিহান জাহেদ উর রহমান। তার মতে, ‘হাসিনা-পরবর্তী রাজনৈতিক শূন্যতাকে কাজে লাগানোর স্বল্প বা মধ্যম মেয়াদে এনসিপির কোনো সুযোগ নেই। বিদ্রোহের সময় দলটির অর্জিত সামাজিক ও রাজনৈতিক সমর্থন উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।’

এনসিপির উত্থানকে জনসাধারণের অসন্তোষের বহিঃপ্রকাশ অভিহিত করে তারিক নিয়াজি বলেন, জনতুষ্টিবাদী প্রবণতা প্রায়ই একটি তৃতীয় দলের জন্ম দেয়।

তার ভাষ্য, ‘যদি আগামী বেশ কয়েকটি নির্বাচনে দলটি ব্যালট বাক্সে টিকে থাকার ক্ষমতা দেখাতে পারে, তাহলে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের তৃতীয় শক্তি হয়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে।’

শেখ হাসিনার আমলে ২০২৪ সালে নিষিদ্ধ হওয়ার পর চলতি বছরের শুরুতে জামায়াতে ইসলামীর ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় সুপ্রিম কোর্ট। দলটি এমন আরেকটি রাজনৈতিক শক্তি, যা বাংলাদেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপটে বৃহৎ আকার ধারণ করেছে।

লাখ লাখ সদস্য এবং তৃণমূলে সক্রিয় সংযোগ থাকা দলটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে নিজের ধর্মীয় পরিচয়কে কাজে লাগাচ্ছে।

জিয়া চৌধুরী বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী এবং এর মিত্ররা একটি বিভক্ত ভূখণ্ডে প্রভাবশালী ও সুশৃঙ্খল শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়ে লাভবান হতে প্রস্তুত।’

তিনি আরো বলেন, জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক শক্তি এবং দেশব্যাপী বিস্তৃত সামাজিক নেটওয়ার্ক দলটিকে যেকোনো জোট গঠনের হিসাবে এগিয়ে রাখবে। তবুও এর মেরুকরণের ঐতিহ্য এবং অতীত সহিংসতার সঙ্গে কথিত সংশ্লিষ্টতার কারণে দলটির অগ্রগতি সীমিত হয়ে যেতে পারে।

চাঁদাবাজদের ভোট না দেওয়ার আহ্বান চরমোনাই পীরের

যারা নির্বাচন নির্বাচন করেছে, তারাই ভন্ডুলের পায়তারা করছে

আপনারা আসলে আমরা বুকে জড়িয়ে ধরবো

লড়বেন ঢাকা-৯ আসনে, খরচ কত করবেন- জানালেন তাসনিম জারা

খালেদা জিয়া সুস্থ হবেন, আশাবাদী মেডিকেল বোর্ড

খালেদা জিয়ার খোঁজ নিতে হাসপাতালে ডা. জুবাইদা রহমান

খালেদা জিয়ার সর্বশেষ পরিস্থিতি জানালেন ডা. জাহিদ

বিজয় মাসকে স্বাগত জানিয়ে এনসিপির বিজয় রিকশা র‍্যালি

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসে যোগ দিলেন সাবেক এমপি হুমায়ুন

যেকোনো সময় দেশে ফিরে নির্বাচনে নেতৃত্ব দেবেন তারেক রহমান