যৌথ সভায় এবি পার্টি চেয়ারম্যান
ফ্যাসিবাদকে প্রধান শত্রু মনে না করে রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পরের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করছে বলে মন্তব্য করেছেন আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান ভুঁইয়া মঞ্জু।
শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর তোপখানা রোডস্থ ফারইস্ট মিলনায়তনে এবি পার্টি আয়োজিত দলটির কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল নেতাদের যৌথ সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন৷
মজিবুর রহমান বলেন, আমরা প্রধানত দুই ভাগে বিভক্ত -ফ্যাসিবাদ আর ফ্যাসিবাদ বিরোধী শক্তি। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, বর্তমানে ফ্যাসিবাদকে প্রধান শত্রু মনে না করে দলগুলো পরস্পরের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করছে। যদি শহীদ ওসমান হাদির রক্তের বিন্দুমাত্র স্পর্শ আপনাদের হৃদয়ে থাকে, তবে আগামী একটি বছরের জন্য বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি পরস্পর কাদা ছোড়াছড়ি বন্ধ রাখুন।
জুলাই বিপ্লবের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানের সময় ছাত্ররা অনেক কর্মসূচি বা বক্তব্য দিয়েছিল। কিন্তু ফ্যাসিবাদকে চ্যালেঞ্জ করার কারণে আমরা সবাই তাদের সমর্থন করেছি। আজ কেন আমরা ছাত্রদের বিরুদ্ধে এত বিষোদ্গার করি এবং তাদের ভুলগুলোকে বড় করে দেখি? আমরা অতীত ভুলে বর্তমানের নগদ প্রাপ্তিকে গুরুত্ব দিচ্ছি।
বিএনপি-জামাত যখন একে অপরকে আক্রমণ করে, তখন সবচেয়ে বেশি খুশি হন শেখ হাসিনা ও ভারত। এই বিভেদ করার অনেক সময় পাবেন। হাজার হাজার কোটি টাকার লুটপাট এবং শেখ হাসিনার টেলিফোনে উস্কানিমূলক বক্তব্যের প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাব আমাদের অবাক করে। প্রধান উপদেষ্টার উচিত ছিল ভাষণের আগেই জরুরি সতর্কতা অবস্থা জারি করা এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় দ্রুত পুলিশ ও সেনাবাহিনী নিয়োগ করা।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, সরকার বলেছিল নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর তিন স্তরের নিরাপত্তা থাকবে, কিন্তু আমরা দেখছি তিন স্তরের অবহেলা ও গাফিলতি। ওসমান হাদি এবং ব্যারিস্টার ফুয়াদসহ অনেক নেতার জীবনের ঝুঁকি ছিল, যা সাধারণ মানুষও জানত। অথচ গোয়েন্দা সংস্থা বা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থার কোনো টনক নেই। ওসমান হাদিকে হত্যার পরিকল্পনা দীর্ঘ সময় ধরে করা হলেও গোয়েন্দা জালে তা ধরা পড়েনি।
একজন দাগী অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী জামিন পেয়ে দলের ভেতরে ঢুকে হত্যার পরিকল্পনা করেছে, কিন্তু কোনো ইন্টেলিজেন্স ওয়ার্ক ছিল না -এটি প্রথম স্তরের গাফিলতি। দ্বিতীয় স্তরের গাফিলতি হলো, হত্যার পর সাধারণ মানুষ খুনিদের ছবি ও পরিচয় প্রকাশ করলেও তাদের ধরার কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি এবং তারা সীমান্ত পাড়ি দিয়েছে।
তৃতীয় স্তরের গাফিলতি দেখা গেছে ওসমান হাদির চিকিৎসার ক্ষেত্রে। ঢাকা মেডিকেলে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে এবং অব্যবস্থাপনার কারণে মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে অন্য হাসপাতালে নিতে হয়েছে। এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তিন স্তরের নিরাপত্তা আজ মানুষের কাছে লুটিয়ে পড়েছে।
দেশবাসীকে ধৈর্য ধারণ করার আহ্বান জানান মজিবুর রহমান মঞ্জু। তিনি বলেন, এত কিছুর পরও আমরা ধৈর্য ধরব এবং বাংলাদেশের পতাকাকে সমুন্নত রাখব; আমরা বাংলাদেশকে পরাজিত হতে দেব না। কোনো ষড়যন্ত্র বা প্রতিবেশীর হুমকির কাছে বাংলাদেশ মাথা নত করবে না। আমি সকল রাজনৈতিক দলকে অনুরোধ করব ক্ষমতার জন্য লালায়িত হয়ে দেশ ধ্বংস করবেন না।
এসময় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে পদত্যাগ করার অনুরোধ জানান এবি পার্টি চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, আমাদের অনুরোধ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মহোদয় আপনি পদত্যাগ করুন। আমরা জানি আপনার পদত্যাগ সমাধান নয়, কিন্তু এর মাধ্যমে ওসমান হাদির শাহাদাতের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করুন। আমরা আগে থেকেই বলেছি বাহিনীর ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। আপনারা যদি এখন পদত্যাগ করেন তবে দেশ ধ্বংসের দিকে যাবে, কিন্তু পদত্যাগ না করে আগের নীতিতে চললে আপনারাও ধ্বংস হবেন।
সংবাদ সম্মেলনে এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিষ্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদসহ দলটির কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল নেতৃবৃন্দ।