হোম > রাজনীতি

মিথ্যা মামলায় ২৫ মাসের কারাবাসে বিপন্ন হয় খালেদা জিয়ার জীবন

আইনজীবীদের দাবি হাসিনার দায় বেশি

বিশেষ প্রতিনিধি

ফাইল ছবি

ইতিহাসের জঘন্যতম মিথ্যা মামলায় দীর্ঘ ২৫ মাসের কারা নির্যাতনের কারণেই বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জীবন বিপন্ন হয়েছে। আর এ নির্যাতনের জন্য স্বয়ং শেখ হাসিনাকে দায়ী করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা।

হাসিনা জিয়া পরিবারের প্রতি তার হিংস্র জিঘাংসা চরিতার্থ করতে পাঁচজন বিচারপতিকে পুরস্কৃত করেন। তাদের হাত দিয়েই মিথ্যা মামলায় ফরমায়েশি রায় দিয়ে কারাবন্দি করা হয় খালেদা জিয়াকে। কারাগারে খালেদা জিয়াকে স্লো পয়েজনিং করা হয়েছে বলেও অভিযোগ চিকিৎসক ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের।

আইন মন্ত্রণালয়, আদালত সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় মহানগর বিশেষ দায়রা জজ আদালত ১২ বছরের সাজা দেয়। হাইকোর্ট এ সাজার মেয়াদ আরো পাঁচ বছর বাড়িয়ে ১৭ বছর করে দেয়। পুরো বিচার প্রক্রিয়াকে প্রহসনের নিকৃষ্টতম উদাহরণ হিসেবে দেখছেন আইন বিশেষজ্ঞরা। আর সাজা দেওয়ার ক্ষেত্রে আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হওয়ায় গভীর বিস্ময় প্রকাশ করছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ।

আইন মন্ত্রণালয়ের বিচার বিভাগের ঊর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তা ও সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র পাঁচজন আইনজীবী আমার দেশকে জানিয়েছেন, তৎকালীন শেখ হাসিনার সরকার পছন্দের লোকদের বিচারকের আসনে বসিয়ে ও পুরস্কারের প্রলোভন দেখিয়ে এ ফরমায়েশি রায় আদায় করে নিয়েছে। এক্ষেত্রে পাঁচ বিচারপতিই অত্যন্ত নির্লজ্জভাবে প্রচলিত আইনের লঙ্ঘন করে বেগম খালেদা জিয়ার মামলাকে ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলে ব্যবহার করেছেন। বিচারের ইতিহাসে এমন কলঙ্কজনক অধ্যায় রচনা করায় আলোচিত এ পাঁচ বিচারপতিকে শাস্তির আওতায় আনার দাবিও জানান আইনজীবী ও বিচার বিভাগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

আইনজীবীরা আদালতকে জানিয়েছিলেন, মামলা দুটির পক্ষে দুদক এতিম তহবিলের যে নথিপত্র জমা দিয়েছে, তা হাতে লেখা, ঘষামাজা করা এবং স্বাক্ষরবিহীন। কোনো মূল নথি পাওয়া যায়নি। আইনকানুনের তোয়াক্কা না করেই ছায়ানথি সৃজন করা হয়েছে। মামলার ৩২ জন সাক্ষীর কেউই খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বলেননি। বানোয়াট তথ্যের ভিত্তিতে করা এ মামলা সাজানো। বরং সোনালী ব্যাংকে রাখা এফডিআরে ২ কোটি টাকা সুদাসলে ৬ কোটি হয়েছে। জাল নথিপত্র তৈরি করে মামলাটি করা হয়েছে। জাল নথিপত্র তৈরি ও মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ার অভিযোগে তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ ছয় জন সাক্ষীর বরং শাস্তি হওয়া উচিত।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বেশ কয়েকজন সাক্ষীকে অবসর থেকে এনে প্রধানমন্ত্রীর অফিসে চাকরিও দেওয়া হয়, যাতে তারা সরকার যা বলে তাই সাক্ষ্য দেন।

২০১৫ সালের জুনে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩এর বিচারক হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার শুনানির তারিখ নির্ধারণ করেন। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে বিশেষ জজ আদালত-৩ এ খালেদা জিয়া দোষী সাব্যস্ত করে আদেশ দেয়। ওইদিন থেকে খালেদা জিয়াকে টানা ২৫ মাস কারাগারে আটকে রাখা হয়। কারাগারে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ তাকে নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেয়া হয়।

মিথ্যায় মামলায় উপদেষ্টা পরিষদের বিস্ময়

বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অতি তুচ্ছ মামলায় শাস্তি প্রদানকে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের অতি নিম্নমানের ঘৃণ্য কাজ হিসেবে দেখছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। প্রতিহিংসার এক নির্লজ্জ উদাহরণ বলেও মনে করছেন বর্তমান সরকারের সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে আইন বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বিচার বিভাগ গত ১৫ বছরে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের দাসে পরিণত হয়েছিল। খালেদা জিয়া ৩ কোটি টাকা এক জায়গায় রেখেছিলেন। একটা টাকাও সেখান থেকে তিনি আত্মসাৎ করেনি। বরং ৩ কোটি টাকা ৬ কোটি টাকা হয়েছে। ওই টাকা কেউ স্পর্শও করেনি। এই টাকা রাখার প্রক্রিয়াগত ভুলের কারণে তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে ১০ বছরের জেল দিয়েছে দুদক ও বিচার বিভাগ মিলে। আর সারা দেশে শেখ হাসিনা বলে বেড়াতেন এতিমের টাকা নাকি খালেদা জিয়া আত্মসাৎ করেছেন।

ড. আসিফ নজরুল বলেন, শেখ হাসিনার ১৫ বছরে আমরা দেখেছি, ১০০ টাকার বালিশ নাকি ৪-৫ হাজার টাকায় কেনা হয়েছে। আমরা দেখেছি, ছয়টি ব্যাংক লুট হয়েছে। বাংলাদেশের একজন সাধারণ ব্যবসায়ী সিঙ্গাপুর সবচেয়ে বড় লোক হয়ে গেছে। আমরা দেখেছি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রীর পিয়ন ৪০০ কোটি টাকার মালিক হয়েছে, এটা হাসতে হাসতে তিনি জাতির সামনে বলেছেন।

খালেদা জিয়ার মৃত্যুর জন্য শেখ হাসিনাও দায়ী

শেখ হাসিনা তার পছন্দের বিচারকদের মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়াকে সাজা দেওয়ার আয়োজন করে ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা চরিতার্থ করেছেন বলে মন্তব্য করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। আমার দেশকে তিনি বলেন, আমি প্রতিটি কোর্টেই এ মামলার শুনানিতে অংশ নিয়েছি। একজন আইনজীবী হিসেবে আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, প্রত্যেক বিচারকের মিশন ছিল-বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে এ মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে পদোন্নতি ও পদায়ন নিশ্চিত করা। আদালতে তারা প্রত্যেকে এ মামলার শুনানিতে সরকার পক্ষে অতি নিম্নমানের দালালি ও আসামিদের বিরুদ্ধে অতিমাত্রার অ্যাগ্রেসিভ ভূমিকা পালন করেছেন। এ মামলার রায়ের পর খালেদা জিয়াকে কারাগারে নিয়ে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেন শেখ হাসিনা। কারাগারে উপযুক্ত চিকিৎসা না পাওয়ার দায় শেখ হাসিনার সবচেয়ে বেশি।

বেগম খালেদা জিয়াকে সাজা প্রদানে বিচারিক আদালতের তিন বিচারক ও হাইকোর্টের দুই বিচারপতি অন্যায্য আচরণ করেছেন বলে আমার দেশকে জানিয়েছেন— সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।

তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাগুলো ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আদালত সরকারের নির্দেশ পালন করে পুরস্কৃত হয়েছে।

মামলায় পাঁচ বিচারকের ভূমিকা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল আমার দেশকে বলেন, আওয়ামী লীগের দলীয় আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে এবং ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করার লোভে বিচারকরা বেগম খালেদা জিয়ার ওপর যে অন্যায় ও অবিচার করেছেন, তা শুধু আমাদের দেশ নয়, গোটা বিশ্বে বিরল।

তিনি বলেন, বিশ্বের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে আমরা দেখতে পাই বিচারের নামে যারা অবিচার করেছে তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমাদের দেশেও এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন হবে বলে আশা করছি।

ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এবং বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের মামলার আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার আমার দেশকে বলেন, নিরপেক্ষ ও প্রভাবমুক্ত বিচার হলে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সাজা তো দূরের কথা আদালত মামলাই আমলে নিত না। বিচার বিভাগ ও দুদক বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের দাসে পরিণত হওয়ায় ভুয়া মামলায় তাদের সাজা দিয়েছে। এ সাজা দিয়েই বিচারকরা সরকারের পুরস্কার হিসেবে পদ ও পদবি বাগিয়ে নিয়েছেন। শুনানিকালে আদালতের বিচারকদের নির্লজ্জ ভূমিকা আমরা তাদের প্রকাশ্যেই বলেছি।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল আমার দেশকে বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন এখন বলছে বিগত শেখ হাসিনার সরকারের নির্দেশে বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগপত্র দিয়েছে। এটা দিবালোকের মতো পরিষ্কার, বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখার জন্য শেখ হাসিনার নির্দেশে এ মিথ্যা মামলায় তাদের সাজা দেওয়া হয়েছে।

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে নাগরিক ছাত্র ঐক্যের শোক

খালেদা জিয়া: আপসহীনতার এক অনন্য অধ্যায়

খালেদা জিয়ার জীবন ছিল সংগ্রামের এক মহাকাব্য: মামুনুল হক

৪৩ বছরের রাজনৈতিক জীবনে খালেদা জিয়া ছিলেন অপরাজেয়

খালেদা জিয়ার মৃত্যু দেশের রাজনীতিতে গভীর শূন্যতা সৃষ্টি করবে: সাকি

খালেদা জিয়ার জানাজা পড়াবেন বায়তুল মোকাররমের খতিব

খালেদা জিয়াকে আল্লাহ জান্নাতের মেহমান হিসেবে কবুল করুন: জামায়াত আমির

স্লো পয়জনিং করা হয়েছিল খালেদা জিয়াকে

খালেদা জিয়ার আপসহীন ভূমিকা জাতিকে অনুপ্রাণিত করেছে

মাকে নিয়ে আবেগঘন পোস্ট তারেক রহমানের