নারী ক্রিকেট বিশ্বকাপ
ক্লাসিক ম্যাচ যাকে বলে! ক্রিকেট অনুরাগীরা উপভোগ করলেন তেমনই এক ম্যাচ। সেঞ্চুরি আর রান উৎসবের জবাবটা এলো রান উৎসব আর সেঞ্চুরিতে। রোমাঞ্চকর সেই লড়াই শেষে বিজয়ের হাসি হাসল ভারত। তাতে দেশটি নাম লিখল নারী ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনালে। যদিও শেষ চারে তারা জায়গা করে নিয়েছিল সবার পরে। মানে চতুর্থ দল হিসেবে সেমিতে উঠেছিল স্মৃতি মান্ধানারা। আর অস্ট্রেলিয়া লিগ পর্বে ছিল সবার শীর্ষে। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন অজি কন্যাদের ৫ উইকেটে হারিয়েছে সেই ভারতীয় নারীরা। দুরন্ত জয়টা এসেছে ৯ বল হাতে রেখেই। রান উৎসবের ম্যাচে চমক দেখিয়ে রান তাড়া করার রেকর্ড গড়েছে ভারত। পুরো আসরে রেকর্ড সপ্তম শিরোপা জয়ী অস্ট্রেলিয়ার এটাই প্রথম হার।
টুর্নামেন্ট জুড়ে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করে দক্ষিণ আফ্রিকা। সেমিফাইনালে তার ছন্দটা ধরে রেখে ফাইনালের টিকিট কেটেছে আগেই। ড. ডিওয়াই পাতিল স্পোর্টস একাডেমি মাঠে আগামী রোববারের (২ নভেম্বর) ফাইনালে ভারতের মেয়েদের প্রতিপক্ষ তাই উড়তে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকা। ভারত দুবার ফাইনালে উঠলে শিরোপা বঞ্চিত হয়েছে প্রতিবার। আর প্রোটিয়ারা ফাইনালে খেলবে প্রথমবারের মতো। সে হিসেবে এবার নতুন চ্যাম্পিয়ন পাচ্ছে নারী বিশ্বকাপ। 
লক্ষ্যটা ছিল হিমালয়সম- ৩৩৯। কিন্তু বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে এই টার্গেটটাও টপকে যায় ভারতীয়রা। ৫ উইকেট হারিয়েই তুলে ফেলে ৩৪১ রান। পুরুষ কিংবা নারী ক্রিকেট বিশ্বকাপের নক আউট পর্বে এটাই সর্বোচ্চ রান তাড়া করার রেকর্ড। লিগ পর্বে ভারতের করা ৩৩০ রান তাড়া করে জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া। এবার শেষ চারে এসে সেই হারের মধুর বদলা নিলো ভারতের মেয়েরা। 
শুরুটা এলোমেলো হলেও বিপদ কাটিয়ে দলের হাল ধরতে ব্যাটিংয়ে নামেন জেমিমাহ রদ্রিগুয়েজ। সাধারণত পাঁচে ব্যাটিং করা জেমিমাহ তিনেই আদায় করে নিয়েছেন দুর্বার এক সেঞ্চুরি। শুধু তাই নয়। দলকে জিতিয়ে আর ফাইনালে তুলে তবেই মাঠ ছেড়েছেন। ১৩৪ বলে ১৪ চারে ১২৭ রানের চোখ ধাঁধানো ইনিংস খেলে অপরাজিত থেকে যান জেমিমাহ। অথচ বিশ্বকাপের গত আসরে জায়গাই পাননি দলে। ক্যাপ্টেন হারমানপ্রিত কৌর সেঞ্চুরি থেকে বঞ্চিত হয়ে ফেরেন ৮৯ রান নিয়ে। তৃতীয় উইকেট জুটিতে দুজনে মিলে ১৫৬ বলে গড়েন ১৬৭ রানের চমৎকার এক পার্টনারশিপ। এই জুটিতেই তৃতীয়বারের মতো নারী ক্রিকেট বিশ্বকাপের শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে পৌঁছে গেছে ভারত। 
নাভি মুম্বাইয়ে শুরুতে রানের ফোয়ারা ছুটিয়েছে অস্ট্রেলিয়াই। দলের হয়ে বিস্ফোরক ব্যাটিং করেন ফোবে লিচফিল্ড। দুর্বার ব্যাটিংয়ে তিনি উপহার দিয়েছেন ৯৩ বলে ১১৯ রানের চমৎকার এক ইনিংস। ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংসও এটি তার। ১১৯ রানের ইনিংস খেললেন দ্বিতীয় বারের মতো। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি রাঙিয়েছেন ১৭টি বাউন্ডারি ও ৩টি ওভার বাউন্ডারিতে। এলিসে পেরি এনে দেন ৭৭ রান। লিচফিল্ড-পেরি দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে লিখেন ১৩৩ বলে ১৫৫ রানের অসাধারণ এক জুটি। আর অ্যাশলেই গার্ডনার দলীয় স্কোরে যোগ করেন ৬৩ রান। তাতে ৩৩৮ রানের বিশাল পুঁজি গড়ে নেয় অস্ট্রেলিয়া। 
সংক্ষিপ্ত স্কোর 
অস্ট্রেলিয়া : ৩৩৮/১০, ৪৯.৫ ওভার (লিচফিল্ড ১১৯, পেরি ৭৭, গার্ডনার ৬৩; চরনী ২/৪৯ ও দীপ্তি ২/৭৩)। 
ভারত : ৩৪১/৫, ৪৮.৩ ওভার (জেমিমাহ ১২৭*, হারমানপ্রিত ৮৯; গার্থ ২/৪৬ ও সাদারল্যান্ড ২/৬৯)।
ফল : ভারত ৫ উইকেটে জয়ী। 
ম্যাচসেরা : জেমিমাহ রদ্রিগুয়েজ।