দুই বছরের যুদ্ধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম প্রবেশে ইসরাইলের বাধায় গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। মৃত্যুর মুখে হাজার হাজার রোগী। ওষুধ ও সরঞ্জাম সংকটে উপত্যকাটিতে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে। খবর আল জাজিরার।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মুনির আল-বারশ মঙ্গলবার আল জাজিরাকে বলেন, ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ অতি প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম প্রবেশে বাধা দিচ্ছে, যার গুরুতর অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসা দেয়া কঠিন হয়ে পড়ছে।
যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার চিকিৎসকরা দীর্ঘদিন ধরে সতর্ক করে আসছেন, ইসরাইল অতি প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম প্রবেশের অনুমতি না দেয়ায় জীবন বাঁচানোর প্রচেষ্টা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। অক্টোবরে কার্যকর হওয়া যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও, ইসরাইল চিকিৎসা সহায়তা প্রবেশের অনুমতি না দিয়ে চুক্তি লঙ্ঘন করে চলেছে। এতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ভাষ্য অনুযায়ী চলমান ও সংকটাপন্ন স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা আরও গভীর হচ্ছে।
আল-বারশ জানান, ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রীর ব্যাপক ঘাটতিতে ভুগছে গাজার স্বাস্থ্যব্যবস্থা, বিশেষ করে অস্ত্রোপচারের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাব প্রকট। তিনি বলেন, প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের প্রায় তিন-চতুর্থাংশই পাওয়া যাচ্ছে না। স্যালাইন, অবশ করার ওষুধ, গজ, ডায়ালাইসিস সামগ্রীর তীব্র সংকট রয়েছে। পাশাপাশি বিদ্যুৎ বিভ্রাট ও জেনারেটরের ভয়াবহ ঘাটতিও চিকিৎসা কার্যক্রমকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে।
তার ভাষ্য অনুযায়ী, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ গঠনের পর গত ৩০ বছরের মধ্যে এটি সবচেয়ে ভয়াবহ স্বাস্থ্য সংকট।
মূলত ইসরাইলের দুই বছরের বেশি সময় ধরে চলা এই আগ্রাসনে গাজার প্রায় সব হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র হামলার শিকার হয়েছে। অন্তত ১২৫টি স্বাস্থ্য স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার মধ্যে ৩৪টি হাসপাতাল। এ সময় ইসরাইলি হামলায় এক হাজার ৭০০ জনেরও বেশি স্বাস্থ্যকর্মী নিহত হয়েছেন। এখনো ৯৫ জন ফিলিস্তিনি চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীকে আটক করে রেখেছে ইসরাইল, যাদের মধ্যে ৮০ জনই গাজার।
আল-বারশ বলেন, শুধু ইসরাইলি হামলায় আহতরাই নয়, এই সংকটে ভুগছেন আরও বহু রোগী। চিকিৎসার অভাবে প্রায় ৪ হাজার গ্লকোমা রোগী স্থায়ী অন্ধত্বের ঝুঁকিতে রয়েছেন। একই সঙ্গে প্রায় ৪০ হাজার বাস্তুচ্যুত অন্তঃসত্ত্বা নারী অস্বাস্থ্যকর আশ্রয়ে বসবাস করছেন। আর এটি তাদের ও অনাগত সন্তানের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি।
আরএ