ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করায় বাম্পার ফলন দিয়েও লোকসানের মুখে পড়েছেন কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার পদ্মার চরের চাষিরা। এ লোকসান কাটাতে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন কৃষকরা।
জানা গেছে, কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বিস্তীর্ণ পদ্মার চরে মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষ করে বাম্পার ফলন পেয়েছেন কৃষকরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর ভালো ফলন হয়েছে। তবে সরকার বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করায় লোকসানের মুখে পড়েছেন কৃষকরা। উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নে মালিপাড়া, গোসাইপাড়ার পদ্মার বিস্তীর্ণ চরে কৃষকরা মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষ করেছেন।
চলতি মৌসুমে উপজেলায় ২৫৫ হেক্টর জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজের চাষ হয়েছে। এখন পেঁয়াজ পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। উৎপাদন খরচ বাড়লেও বিঘাপ্রতি ৭০ থেকে ৮০ মণ ফলনের আশা করছেন কৃষকরা। ভারত থেকে পেঁয়াজের আমদানি বৃদ্ধি পাওয়ায় খুচরা বাজারে দাম কমতে শুরু করেছে। কৃষকদের দাবি একটাই সরকার দুই মাস বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ করতে হবে। তা না হলে কৃষকদের অনেক টাকা লোকসান গুনতে হবে। কৃষক তরিকুল ইসলাম বলেন, গত বছরের তুলনায় সার, কীটনাশক ও শ্রমিক খরচ বেড়েছে। সরকার বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা না হলে লাভ হবে। কিন্তু বর্তমান বাজারে পেঁয়াজের যে দাম তাতে করে অনেক টাকা ক্ষতি হবে। কৃষক হাবিবুর রহমান বলেন, গত বছর ১০ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছিলাম, তাতে অনেক টাকা লোকসান হয়েছে। এবার ক্ষতি পোষাতে আমি ২০ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ লাগিয়েছি। পেঁয়াজের ফলনও ভালো হয়েছে। গত সপ্তাহে দুই বিঘা জমির পেঁয়াজ উত্তোলনের সময় দাম ভালো ছিল হঠাৎ সরকার বাহির থেকে পেঁয়াজ আমদানি করায় বাজারে পেঁয়াজের দাম একেবারে কমে গেছে। ২০ বিঘা জমিতে সব মিলে খরচ হয়েছে ১৫ লাখ টাকা। বর্তমানে বাজারে পেঁয়াজের যা দাম তাতে করে পাঁচ লাখ টাকা লোকসান হবে । বিভিন্ন এনজিও থেকে লোন নিয়ে এ পেঁয়াজ লাগিয়েছিলাম। এখন লোন পরিশোধ করব কীভাবে বুঝতে পারছি না। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, দুই মাস বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ করলে কিছুটা হলেও লোকসানের হাত থেকে বাঁচতাম। আর এমন হলে আগামীতে আর পেঁয়াজ চাষ করব না।
কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, আমি এনজিও থেকে লোন নিয়ে এ বছর ১৫ বিঘা জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষ করেছি। গত বছরের তুলনায় এবার বীজের দাম কিছুটা বেশি। সার ও কীটনাশকের দাম দ্বিগুণ। এবার এক বিঘা মুড়িকাটা পেঁয়াজ উৎপাদন করতে খরচ হচ্ছে প্রায় ৭০ হাজার টাকা। এখন বাজারে পেঁয়াজের যে দাম, তাতে করে অনেক টাকা ক্ষতি হবে। পেঁয়াজের ফলন ভালো হয়েছে কিন্তু বাজারে দাম নেই। এমন হলে আমাদের মরা ছাড়া কোনো গতি নেই।
ভেড়ামারা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাহমুদা সুলতানা জানান, চলতি রবি মৌসুমে পেঁয়াজ চাষে কৃষকদের প্রণোদনা প্রদান ও কারিগরি সহায়তা দেওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়ে ২৫৫ হেক্টর জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজের চাষ করে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় পেঁয়াজ উৎপাদন ভালো হয়েছে। ইতোমধ্যেই কৃষকরা ফসল ঘরে তোলতে শুরু করেছেন।
পেঁয়াজের ফলন ভালো হওয়ায় বাজারে পেঁয়াজের দাম কিছুটা কম।
আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

