খুলনায় এইচআইভি সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। গত এক বছরে ১ হাজার ২৭৯ জনের রক্ত পরীক্ষায় নতুন করে ১০০ জনের শরীরে এইডস রোগ শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে আটটি শিশু আছে। এছাড়া এই দুরারোগ্য ব্যাধিতে মৃত্যু হয়েছে ২৩ জনের। এর আগে ২০২৪ সালে ১ হাজার ৫৪৭ জনের রক্ত নমুনা পরীক্ষা করে শনাক্ত হয় ৮৫ জন, এ সময়ে মৃত্যু হয় ২০ জনের।
খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের এআরটি সেন্টার থেকে (২০২৪ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত) পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মতে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ খুলনার সীমান্তের নিকটবর্তী হওয়ায় উভয় দেশের মানুষের যাতায়াত বেশি। ট্রাক চালক, শ্রমিক, ব্যবসায়ীসহ সীমান্ত নির্ভর পেশায় নিয়োজিত অনেক ব্যক্তি দেশ-বিদেশে চলাচলের সময় ঝুঁকিপূর্ণ যৌন আচরণে জড়িয়ে পড়েন, যা সংক্রমণ বাড়ানোর অন্যতম কারণ। এছাড়া অনেক ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিরাপদ রক্ত পরীক্ষা নিশ্চিত না হওয়া এবং অজানা উৎসের রক্ত ব্যবহারের অভিযোগও আছে। এসব অনিয়ম ভুক্তভোগীদের এইচআইভিসহ অন্যান্য সংক্রমণের ঝুঁকিতে ফেলছে।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এআরটি সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, নতুন সংক্রমণের মধ্যে সাধারণ জনগোষ্ঠী ৫৬ জন, সমকামী ৩৭ জন এবং রক্তের মাধ্যমে ৭ জন। জেলাভিত্তিক শনাক্তের মধ্যে খুলনায় ৪৯, বাগেরহাটে ১৬, নড়াইলে ১১, সাতক্ষীরা ১১, যশোরে ৬, গোপালগঞ্জে ৩, পিরোজপুরে ২, কুষ্টিয়ায় ১ জন এবং রাজবাড়ীর ১ জন আছেন। লিঙ্গভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, খুলনায় পুরুষ ৩৫ ও ১৪ নারী শনাক্ত হয়েছেন।
এআরটি তথ্য অনুযায়ী, মরণব্যাধি এইডসের কারণে মৃত্যুর ঘটনা সম্প্রতি বেড়েছে। গত এক বছরে মৃত্যু হয়েছে ২৩ জনের, যার মধ্যে পুরুষ ১৭ জন। মৃতদের মধ্যে যশোরের ৭, খুলনায় ৪, নড়াইলে ৪, সাতক্ষীরায় ৪, বাগেরহাটে ২, পটুয়াখালী ও পিরোজপুর একজন করে।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ধর্মীয় ও নৈতিক জীবনধারা, একপক্ষীয় সম্পর্ক, মাদক ত্যাগ ও অনিরাপদ রক্ত এড়িয়ে চলাই মূল প্রতিরোধ। নিরাপদ রক্ত ব্যবহার ও সচেতনতা অবশ্যই মেনে চলা জরুরি। সচেতনতা ছাড়া এইডস প্রতিরোধ সম্ভব নয়।
খুমেক হাসপাতালের এআরটি সেন্টারের কাউন্সিলর কাম-এডমিনিস্ট্রেটর দিবেশ ওঝা বলেন, প্রতি বছর এইচআইভি আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। আক্রান্তদের মধ্যে সাধারণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। তার দেওয়া তথ্য মতে, বর্তমানে আইডিভুক্ত রোগীর সংখ্যা ৮৮৭, যার মধ্যে পুরুষ ৫৪২, নারী ৩৩৮, হিজড়া ১৭। নিয়মিত ওষুধ সেবন করছেন ৫৫০ জন। এছাড়া অন্য রোগীদের মধ্যে কেউ মারা গেছেন আবার কেউ অন্য সেন্টারে স্থানান্তর হয়েছেন।
খুমেক হাসপাতালে এআরটি সেন্টার থেকে ২০২৪ সালে ১ হাজার ৫৪৭ জনের রক্ত পরীক্ষা করে শনাক্ত হয় ৮৫ জন, মৃত্যু ২০। এছাড়া ২০২৩ সালে ৬৫ শনাক্ত, মৃত্যু ১৯ এবং ২০২২ সালে ৬৫ শনাক্ত, মৃত্যু ২৪।

