মেম্বারের বাড়িতে দুদিন ধরে পেটানোর পর যুবকের মৃত্যু

রংপুর অফিস
প্রকাশ : ০১ নভেম্বর ২০২৫, ০৪: ২২

মোটরসাইকেল চোর সন্দেহে গ্রাম্য পুলিশ দিয়ে এক যুবককে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যান স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য (মেম্বার) আশরাফুল ইসলাম। দুদিন ধরে জিজ্ঞাসাবাদ ও নির্যাতন করেন তিনি। একপর্যায়ে আধমরা অবস্থা হয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এজন্য ভুক্তভোগীর বাড়ি থেকে তুলে আনেন তার বাবা-মাকে। তাদের কাছে সাদা কাগজে সই নিয়ে ওই যুবককে মুক্তি দেন মেম্বার। কিন্তু চিকিৎসার জন্য হাসপাতালেও পৌঁছাতে পারেননি, এর আগেই রাস্তায় মৃত্যু হয়েছে তার। ঘটনাটি রংপুরের মিঠাপুকুরের বড়বালা ইউনিয়নের পূর্ব বড়বালা গ্রামে ঘটেছে।

নিহত যুবকের নাম সোহেল মিয়া (২৭)। তিনি পূর্ব বড়বালার আজাদুল হক ওরফে কেতারের ছেলে। সোহেল দুই সন্তানের জনক। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন মিঠাপুকুর থানার ওসি নুরে আলম।

বিজ্ঞাপন

প্রাথমিক তদন্তের উদ্ধৃতি দিয়ে ওসি আলম বলেন, গত ২৭ অক্টোবর বিকেলে নিজ বাড়ি থেকে ইউপি মেম্বারের কথা বলে সোহেলকে ডেকে বালুয়া বাজারে নেন স্থানীয় গ্রাম্য পুলিশ মোনারুল ইসলাম। সেখান থেকে মোটরসাইকেলে উঠিয়ে পাশের মিলনপুর গ্রামের ইউপি সদস্য আশরাফুলের বাড়িতে পৌঁছে দেন। আশরাফুল তার ভাতিজির স্বামীর মোটরসাইকেল চুরির ঘটনায় সোহেলকে সন্দেহ করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। সোহেল নিজেকে নির্দোষ দাবি করলে ওই বাড়িতেই দুদিন আটক রেখে আশরাফুলসহ বেশ কয়েকজন সোহেলকে বেধরক পেটান।

ওসি আরো বলেন, মারধরের একপর্যায়ে সোহেল গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে ২৯ অক্টোবর গভীর রাতে স্থানীয় হাবিবুর রহমান নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে ভুক্তভোগী যুবকের বাবা-মাকে ডেকে নিয়ে প্রথমে সাদা স্ট্যাম্পে জোর করে সই নেন। পরে সোহেলকে অসুস্থ অবস্থায় তাদের কাছে হস্তান্তর করেন। সেখান থেকে সোহেলকে বাড়িতে নিলে তার অবস্থার অবনতি হয়। গত বৃহস্পতিবার ভোরে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।

পুলিশ কর্মকর্তা আলম জানান, বিষয়টিকে ধামাচাপা দিতে প্রভাবশালী ওই মেম্বার নানাভাবে পরিবারকে চাপ দিয়ে দ্রুত লাশ দাফন করার চেষ্টা চালান। কিন্তু তিনি ব্যর্থ হন। পরে বিষয়টি পরিবারের পক্ষ থেকে মিঠাপুকুর থানায় জানানো হয় ৩০ অক্টোবর দুপুরের পর। পুলিশ সোহেলের বাড়ি থেকে লাশ উদ্ধার করে থানায় নেয়। সুরতহাল প্রস্তুত করা হয়েছে। নিহতের শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন আছে।

ওসি আরো জানান, এ ঘটনায় সোহেলের বাবা আজাদুল হক ওরফে কেতা বাদী হয়ে আশরাফুল মেম্বারসহ বেশ কয়েকজনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত পরিচয়ের কয়েকজনের নামে হত্যা মামলা করেছেন। ঘটনা জানা মাত্রই তদন্ত শুরু করা হয়েছে। ঘটনার পরপরই অভিযুক্তরা গা ঢাকা দিয়েছেন। গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

সোহেলের বাবা আজাদুল বলেন, ক্ষমতার প্রভাবে আশরাফুল মেম্বার আমার ছেলেকে বাড়ি থেকে চৌকিদার দিয়ে নিয়ে মোটরসাইকেল চোর সন্দেহে নির্মমভাবে নির্যাতন করেছে। দুদিন ধরে পেটানোর কারণে সোহেলের মৃত্যু হয়েছে। তার মৃত্যুর দায় এড়াতে আমাদের কাছ থেকে জোর করে সাদা কাগজে সই নিয়েছেন আশরাফুল মেম্বার। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

এদিকে সোহেলের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর গা ঢাকা দেন আশরাফুল মেম্বারসহ অভিযুক্তরা। বন্ধ আছে তাদের ফোন নম্বরও।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত