বরিশালে মিলি হত্যা মামলা

পরোক্ষভাবে আসামির পক্ষ নিয়েছেন সাবেক ওসি মাহবুব

বরিশাল অফিস
প্রকাশ : ০৬ জুলাই ২০২৫, ০৬: ৩১

বরিশাল বিএম কলেজের ছাত্রী মিলি ইসলাম হত্যা মামলায় বিমানবন্দর থানার সাবেক ওসি এসএম মাহবুব-উল-আলমের বিরুদ্ধে আসামিদের পক্ষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামির ‘মামলা স্থগিতাদেশ’ চেয়ে করা আবেদন হাইকোর্টে খারিজ হওয়ার পরদিনই বাদীসহ চার সাক্ষীর বিরুদ্ধে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ এনে বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানায় উদ্দেশ্যমূলক একটি সাধারণ ডায়েরি করেন ওসি এসএম মাহবুব-উল-আলম।

এ নিয়ে গতকাল শনিবার বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে (বিআরইউ) এ সংবাদ সম্মেলন করেছেন মামলার বাদী মিলির মা মোসা পারভিন বেগম। তিনি বরিশাল উজিরপুর উপজেলার জুগিহাটি গ্রামের মৃত আবুল কালাম আকনের স্ত্রী।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে পারভিন বেগম বলেন, আমার ছোট মেয়ে মিলি ইসলাম ২০১৯ সালে বরিশাল বিএম কলেজে হিসাব বিজ্ঞানের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিল। লেখাপড়ার সুবাদে আমি তিন মেয়েকে নিয়ে বরিশালের নথুল্লাবাদ সংলগ্ন লুৎফর রহমান সড়কের একটি ভাড়া বাসায় ছিলাম। সে সময় আমার বড় মেয়ে নুরুন্নেছা নূপুরের স্কুলপড়ুয়া মেয়ে শারমিন জান্নাত কেয়াকে বাসায় এসে প্রাইভেট পড়াতেন বরিশাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক পুনিল চন্দ্র সরকার।

আসা-যাওয়ার সুবাদে আমার মেয়ের সঙ্গে পুনিলের সম্পর্ক হয়। একপর্যায় তারা দুজনে নথুল্লাবাদ সংলগ্ন ফিশারী রোডে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে একটি বাসা ভাড়া নেয়। ভাড়া নেওয়ার প্রথম দিনই ২০১৯ সালের ৩ মে ওই ঘরে পুনিল পরিকল্পিতভাবে মিলিকে হত্যা করে।

এ ঘটনায় থানায় মামলা করতে গেলে তৎকালীন বিমানবন্দর থানার ওসি এসএম মাহবুব-উল-আলম আসামির পক্ষ নিয়ে উল্টো আমাদের গালমন্দ করে মামলা না নিয়ে তাড়িয়ে দেয়। পরে আমি মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতে পুনিলসহ অজ্ঞাত তিন থেকে চারজনকে আসামি করে হত্যা মামলা করি।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুনিল চন্দ্র সরকার ও মো. পলাশ চৌধুরী নামে দুজনকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট দেয়। চার্জশিটভুক্ত আসামি পুনিল সরকার ১ জানুয়ারি হাইকোর্টে মামলার স্থগিতাদেশ চেয়ে আবেদন জানালে গত ১ জুলাই হাইকোর্ট তা বাতিল করে দেয়।

কিন্তু গত ২৬ জুন বরিশাল ১০ এপিবিএন পুলিশ আমাকেসহ চারজন সাক্ষীকে তাদের কার্যালয়ে ডেকে নেয়। সেখানে ওসি এসএম মাহবুব-উল-আলমও উপস্থিত ছিলেন। তিনি আমাকে মামলা তুলে নেওয়ার হুমকি দেয়।

এদিকে পুনিলের মামলা স্থগিতাদেশের আবেদন বাতিল হওয়ার পরদিন ওসি মাহবুব আমিসহ চার সাক্ষীকে অভিযুক্ত করে গত বুধবার বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন যার নম্বর। ডায়েরিতে তাকে হুমকিসহ আমরা ২০ লাখ টাকা চাঁদা চেয়েছি বলে ওসি মাহাবুব উল্লেখ করেন। তিনি আসামি পুনিলের পক্ষ নিয়ে পরিকল্পিতভাবে এসব করছেন বলে দাবি করেন তিনি।

এ বিষয়ে মুঠোফোনে সাবেক ওসি মাহবুব-উল-আলম বলেন, ওই সময় বরিশাল পুলিশ কমিশনারসহ ঊর্ধ্বতন কয়েকজনের নির্দেশ ছিল ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন আসার পর এজাহারভুক্ত মামলা নেওয়া হবে। তবে ওই সময় অপমৃত্যু (ইউডি) মামলা হয়েছিল।

২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অনুকূলে জিডির বিষয় জানতে চাইলে ওসি মাহাবুব কোনো সদুত্তর না দিয়ে বাদীসহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে নানা কথা বলার পাশাপাশি মৃত মিলি ইসলামের লাশের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে হত্যার কোনো আলামত পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করেন।

বিষয়:

বরিশাল
এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত