ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে পিরোজপুর জেলায় ফিরেছে নির্বাচনি আমেজ। জেলার সাত উপজেলা নিয়ে গঠিত তিনটি সংসদীয় আসনেই এবার মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে। দীর্ঘদিন ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে না পারা সাধারণ ভোটার, বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের মধ্যে এবার ভোট দেওয়ার প্রবল আগ্রহ দেখা যাচ্ছে।
পিরোজপুরের তিনটি আসনেই প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে জামায়াত। বিএনপি দুটিতে মনোনয়ন দিলেও চূড়ান্ত হয়নি পিরোজপুর-১ আসনের মনোনয়ন। তারপরও তিন আসনেই পুরোপুরি নির্বাচনের আমেজ বিরাজ করছে। মনোনয়নপ্রাপ্ত ও সম্ভাব্য প্রার্থীরা সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ নির্বাচনি প্রতিযোগিতায় না থাকায় জেলার প্রতিটি আসনেই ভোটের সমীকরণে বড় পরিবর্তন এসেছে। বিশেষ করে পিরোজপুর-১ আসনে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক হিন্দু ভোটার থাকায় তাদের সমর্থন পেতে প্রধান দুই দলের প্রার্থীরা ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছেন।
পিরোজপুর-১ (সদর, নাজিরপুর
ও ইন্দুরকানী)
এ আসনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী সাবেক এমপি মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে মাসুদ সাঈদী। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন এবং পিরোজপুরকে একটি ‘বাসযোগ্য জেলা’ হিসেবে গড়ে তোলার অঙ্গীকার ব্যক্ত করছেন। অন্যদিকে বিএনপি এখনো এ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত না করায় রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা জল্পনা চলছে। কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী সদস্য আলমগীর হোসেন এবং জেলা বিএনপির আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম খান মনোনয়নপ্রত্যাশী হলেও জোটগতভাবে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী মোস্তফা জামাল হায়দার মনোনয়ন পেতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, বিএনপি পিরোজপুর-১ আসনে কাউকে মনোনয়ন দেয়নি। সুতরাং ‘ইটস অলমোস্ট কনফার্ম অ্যান্ড পজিটিভ সাইন।’ এ থেকে বুঝিয়েছেনÑতিনিই এ আসনে মনোনয়ন পাচ্ছেন। প্রায় এক-চতুর্থাংশ হিন্দু ভোটারের এ আসনে তাদের কাছে টানতে মরিয়া বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থীরা।
পিরোজপুর-২ (ভান্ডারিয়া, কাউখালী
ও নেছারাবাদ)
এ আসনে জামায়াত মনোনীত প্রার্থী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আরেক ছেলে শামীম সাঈদী। তিনি ২০১৮ সালে পিরোজপুর-১ আসনে প্রার্থী থাকলেও নির্বাচনের আগের রাতে ভোট কেটে আওয়ামী প্রার্থী রেজাউল করিম নির্বাচিত হন। এবার জামায়াত তাকে এ আসনে মনোনয়ন দেয়। তিনি ভোটাধিকার হরণ ও রাজনৈতিক নিপীড়নের প্রসঙ্গ তুলে ধরে সাধারণ মানুষের সহানুভূতি ও সমর্থন পাচ্ছেন।
অন্যদিকে এ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন ভান্ডারিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি আহাম্মেদ সোহেল মঞ্জুর সুমন। ক্লিন ইমেজ ও পারিবারিক রাজনৈতিক ঐতিহ্যের কারণে তিনিও শক্ত অবস্থানে আছেন। সাবেক এমপি আনোয়ার হোসেন মঞ্জু নতুন কোনো জোট থেকে প্রার্থী হলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা আরো তীব্র হতে পারে বলে মনে করছেন নির্বাচন বিশ্লেষকরা।
পিরোজপুর-৩ (মঠবাড়িয়া)
জেলার দক্ষিণের উপজেলা মঠবাড়িয়াকে নিয়ে গঠিত পিরোজপুর-৩ আসনে বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থী প্রচারাভিযান চালাচ্ছেন বেশ জোরেশোরে। স্বাধীনতার পর থেকে নির্বাচনগুলোয় আওয়ামী লীগের বিজয়ের পাল্লা ভারী হলেও চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পর চিত্র আমূল পাল্টে গেছে বলে মনে করছেন নির্বাচনসংশ্লিষ্টরা। আসন্ন নির্বাচনে আসনটিতে বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে হবে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা।
জামায়াত মনোনীত প্রার্থী শরীফ আবদুল জলিল এবং বিএনপির প্রার্থী উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি রুহুল আমীন দুলাল সক্রিয়ভাবে প্রচার চালাচ্ছেন। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হলে নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী জামায়াতে ইসলামী। অন্যদিকে আগে দ্বন্দ্ব থাকলেও জেলা বিএনপির হস্তক্ষেপে জটিলতা কেটে যাওয়ায় বিএনপির নেতাকর্মীরাও জয়ের প্রত্যাশা করছেন। এছাড়া অতীতে বিভিন্ন দলের হয়ে নির্বাচিত হওয়া রুস্তম আলী ফরাজী নতুন কোনো জোট থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামলে ত্রিমুখী লড়াই হতে পারে।
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ভোটার তথা সাধারণ মানুষের জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। তাদের ধারণা, অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হলে এবারের নির্বাচন তুলনামূলক সুষ্ঠু হতে পারে। নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে অবশ্য কিছুটা সংশয় রয়েছে।
এ ব্যাপারে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) পিরোজপুরের সহসভাপতি আফজাল হোসেন লাভলু বলেন, দীর্ঘ বছর মানুষ ভোট দিতে পারেনি। এবার সবার আশা, তারা যেন ভোট দিতে পারেন।
সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) পিরোজপুরের সভাপতি আতা-ই রব্বানী ফিরোজ মনে করেন, এবারের নির্বাচন নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হবে।
পিরোজপুর শহরের নতুন প্রজন্মের দুই ভোটার আজমাইন নূর রেজা ও শাইরা সাহিদ নূর জানিয়েছেন, তারা একটি সুন্দর নির্বাচন চান, যাতে কেন্দ্রে গিয়ে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন।
[প্রতিবেদনটিতে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন কাউখালী প্রতিনিধি রফিকুল ইসলাম, জিয়ানগর প্রতিনিধি শহিদুল ইসলাম, নাজিরপুর প্রতিনিধি কেএম সাঈদ রানা, মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি নাসিরুল ইসলাম এবং ভান্ডারিয়া প্রতিনিধি আল মামুন আকন]
আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

