চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) প্রকৌশল দপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমানকে অবশেষে বদলি করা হয়েছে। তাকে প্রকৌশল দপ্তর থেকে সরিয়ে বিজ্ঞান ওয়ার্কশপে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামের সই করা এক দপ্তর আদেশে এ বদলি কার্যকর করা হয়। রেজিস্ট্রার অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের ভাষ্য, ২০১৬ সালে ছয় নম্বর একাডেমিক ভবনের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ–সংক্রান্ত ৭৫ কোটি টাকার প্রকল্পে যুবলীগের সাবেক নেতা ও ঠিকাদার জি কে শামীমের প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ডকুমেন্ট জালিয়াতি করে দরপত্রের কাজ পেতে সহায়তার অভিযোগ ওঠে মাহফুজুরের বিরুদ্ধে। ২০১৬ সালের ২৮ আগস্ট প্রকল্পটির দরপত্র আহ্বান করা হয়। ‘জি কে বিল্ডার্স’ ও ‘দি বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ারিং’ প্রকল্পের কার্যাদেশ পায়। একই বছরের ১৪ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করে।
একটি অভিযোগের ভিত্তিতে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়–১ তদন্ত শুরু করলে বেরিয়ে আসে, দরপত্রের শর্ত পূরণের মতো অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও ভুয়া কাগজপত্র দাখিল করে কাজটি হাতিয়ে নেয় জি কে শামীমের প্রতিষ্ঠান। তদন্তকারীরা জানান, এই প্রক্রিয়ায় সক্রিয় সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন প্রকৌশলী মাহফুজুর।
সাম্প্রতিক সময়ে চবি ছাত্র ও পার্শ্ববর্তী গ্রামবাসীর সংঘর্ষের সময় ফেসবুকে বিতর্কিত মন্তব্য করে সমালোচনায় পড়েন এই প্রকৌশলী। ওই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাকে সতর্ক–বার্তাও দেয়।
দরপত্র প্রক্রিয়া ও নির্মাণ কাজের সময় প্রকৌশলী মাহফুজুরের আচরণ নিয়ে অনেক ঠিকাদার আগে থেকেই অভিযোগ করে আসছিলেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ঠিকাদার বলেন, দরপত্র জমা দেওয়ার সময় এমন কিছু কাগজপত্র চাইতেন, যা আইনে বাধ্যতামূলক নয়। পরে বুঝেছি এগুলো চাপ তৈরি করার কৌশল।
আরেক ঠিকাদারের ভাষ্য, কোনো বিল–দাবি হলে অফিসে ঘুরতে হতো বারবার। ইঙ্গিত দিতেন-উপায় না হলে আলাদা কথা বলতে। আমরা কাজ করি, ঘুষ দিয়ে কাজ করতে চাই না।
আরেক ঠিকাদার বলেন, চবির অনেক ভাল প্রকল্প শুধু প্রকৌশল দপ্তরের টালবাহানায় ধীরগতিতে চলে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়, আমরাও।
দুদকের কর্মকর্তারাও জানিয়েছেন, জি কে শামীমের প্রতিষ্ঠানের ৭৫ কোটি টাকার কাজ–সংক্রান্ত তদন্তের নথি এখন কমিশনের আইন শাখায় পর্যালোচনায় আছে। পরবর্তী ধাপে মামলার নথি সম্পূর্ণ হলে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

