বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম আবদুল্লাহ সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, সামনে যে নির্বাচন রয়েছে সে নির্বাচনকালীন যে সাংবাদিকতা, এটা অনেক বেশি যেমন চ্যালেঞ্জিং, যেমন ঝুঁকির। একই সঙ্গে এ রাষ্ট্রের জন্য আপনাদের সাংবাদিকতা দিয়ে আপনারা এ রাষ্ট্রকে সঠিক পথে পরিচালনার চেষ্টা করতে পারেন। আবার এ নির্বাচন ভন্ডুল করার ক্ষেত্রেও আপনাদের প্রভাব কিন্তু আপনাদের লেখার মাধ্যমে ভূমিকা রাখতে পারে।
বুধবার লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের মাঝে চেক বিতরণ অনুষ্ঠিত প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, কোনটা বেছে নিবেন আপনাদেরকে চিন্তু করতে হবে। ভোটাধিকার ফিরে পেয়েছে এদেশের জনগণ, এ ভোটাধিকার প্রয়োগের ক্ষেত্রে এ নির্বাচনে গুজব ছড়িয়ে নির্বাচনে মিস ইনফরমেশন, ডিজ ইনফরমেশনের মাধ্যমে এ নির্বাচনে আপনাদের একটি রোল থাকবে, যাতে কোন রকম অপতথ্য ছড়িয়ে নির্বাচনকে ভন্ডুল করা, নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করা, নির্বাচনের পরিবেশকে ক্ষুণ্ন করা এটা যাতে না হয়, এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে আপনাদের প্রতি অনুরোধ থাকবে।
এদিন বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের পক্ষ থেকে জেলায় কর্মরত ১৬জন সাংবাদিকদের মাঝে অনুদানের চেক বিতরণ করা হয়।
এম আবদুল্লাহ আরো বলেন, আমরা এখন মুক্ত গণমাধ্যমে আছি। গত ১৫-১৬বছর ফ্যাসিস্ট রেজিমে আমাদের সাংবাদিকতাকে ধলিত, ধস্ত করে, বিষ্ট করে সমস্ত গণমাধ্যমকে ভঙ্গুর এবং ধ্বংসের কিনারায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। যেগুলো পেশাদার এবং দেশাত্মবোধ নিয়ে যেসব গণমাধ্যম কাজ করেছিল তাদের টুঁটি চেপে ধরা হয়েছিল এবং বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। সম্পাদকদেরকে জেলে পোরা হয়েছিল।
এ বিষয় গুলো যখন ছিলো সেখান থেকে আমরা জুলাইয়ে প্রায় ১৪'শ মানুষের জীবনের বিনিময়ে এবং প্রায় ৩০ হাজার মানুষের অঙ্গহানির বিনিময়ে আমরা যে বাংলাদেশটি পেয়েছি, এ যে মুক্ত পরিবেশে, মুক্ত সংবাদমাধ্যম যাতে আমরা দায়িত্বহীন সংবাদ মাধ্যম যাতে না হয়ে যাই। দায়িত্বহীন সাংবাদিকতা যাতে আমাদের মাঝে তৈরি না হয়। এ বিষয়ে আপনাদের প্রতি বিশেষ অনুরোধ রাখবো।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে আমরা দেখতে পাচ্ছি এখন গণমাধ্যম নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। আমরা দেখছি গত ৩-৪দিন গণমাধ্যম নিয়ে সাংঘাতিকভাবে, একদম পত্রিকা গুলোর পৃষ্ঠাজুড়ে দখল করে আছে দুটি গণমাধ্যমে আগুন দেওয়া হয়েছে। এগুলো নিয়ে ব্যাপক আন্দোলন সংগ্রাম আমরা দেখছি। আমরা এধরনের গণমাধ্যমে অগ্নিসংযোগ, গণমাধ্যমে সন্ত্রাস, কোন ভাবেই একজন বিবেগবান মানুষ হিসেবে, একজন গণতন্ত্রমনা মানুষ হিসেবে, একজন গণমাধ্যমের কর্মী হিসেবে কোনভাবে সমর্থন করি না। কিন্তু ভাবটা যদি এমন দেখানো হয়, যে এ প্রথম বাংলাদেশে গণমাধ্যমের উপর এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে, তখন কিন্তু আমাদের জন্য পীড়াদায়ক হয়, কষ্টের হয়। কারণ গত ১৫বছরে ৫৯জন সাংবাদিক খুন হয়েছে এ ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগের সময়। প্রত্যেক মাসে ২৫-৩০জন সাংবাদিক পঙ্গু হয়েছে, মামলায় আসামি হয়েছে, জেল খেটেছে। এটা প্রত্যেক মাসের হিসাব।
এছাড়া তিনি বলেন, সুতরাং যারা এখন পরিস্থিতি এমন একই মনস্তাত্ত্বিক জায়গা তৈরি করতে চাচ্ছেন যে এ বাংলাদেশ ৫৪বছরের ইতিহাসে বাংলাদেশ প্রথম এধরণের ঘটনা ঘটেছে, তাদেরকে একটু অতীতটা গেটে দেখার জন্য বলবো। অত্যন্ত শ্রদ্ধাভাজন লোকজনও যখন এসব কথা বলে, তখন আমাদের কিন্তু বেদনা-দুঃখ রাখার জায়গা থাকে না। কারণ আমরা দেখেছি কিভাবে একেকজন সম্পাদককে চ্যাংদোলা করে, কমান্ডো স্টাইলে শীর্ষ সন্ত্রাসীর মতো করে মাহমুদুর রহমান কে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো দুই বার বার করে। জেল খেটেছিলেন সাড়ে ৫বছর। নির্বাসিত জীবন কাটিয়েছেন ৬ বছর। আবুল আসাদের মতো একজন জৈষ্ঠ সম্পাদককে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নামে কিছু সন্ত্রাসী কিনা কাণ্ড ঘটিয়েছে। ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন টকশোতে একটি মাত্র কথা বলেছেন একজনের সাথে, যে কথার কারণে তার বিরুদ্ধে ৫০টি মামলা করে তাকে কিভাবে তুলে নিয়ে গিয়ে ফ্লোরে শুয়ে রাখা হয়েছিল। এ বিষয়গুলো, এ ইতিহাসগুলো চাইলেই মুছে দেওয়া যাবে না।
তাই আগামী দিনে আমাদের সাংবাদিকতায় অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সে চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলার জন্য সত্যকে উপেক্ষা করে, সত্যকে বিক্রিত করে এটা করতে পারবেন না। সত্য স্বীকার করে কখনও কোন আমলেই আমরা সংবাদমাধ্যমে নিপীড়ন চাই না।
জেলা প্রশাসক এস এম মেহেদী হাসানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সম্রাট খীসা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) হোসাইন মোহাম্মদ রায়হান কাজেমী, লক্ষ্মীপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি হোসাইন আহমেদ হেলাল।
এছাড়া উপস্থিত ছিলেন, লক্ষ্মীপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আ.হ.ম মোশতাকুর রহমান, দেশ টিভির জেলা প্রতিনিধি সাইফুল ইসলাম স্বপন সহ জেলা কর্মরত সাংবাদিকবৃন্দ।
আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

