নিজ ঘাঁটিতে বিএনপির বিপদ একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী

এম হাসান, কুমিল্লা
প্রকাশ : ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ১৫: ১২

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কিছু অংশ এবং ভারত সীমান্তবর্তী বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নিয়ে কুমিল্লা-৫ সংসদীয় আসন গঠিত। ঐতিহ্যগতভাবে আসনটি বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। কিন্তু বারবার প্রার্থী পরিবর্তন ও অভ্যন্তরীণ নেতৃত্ব সংকটে দলটি আসনটি ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। আগামী ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করেও ইতোমধ্যে দলের একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী মাঠে কাজ করছেন। ফলে আসনটি পুনরায় বিএনপি নিজেদের করে নিতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে বিএনপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াত একক প্রার্থী নিয়ে অনেকটা নির্ভার। গত কয়েক মাস ধরেই দলটি নির্বাচনি এলাকায় গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

জানা যায়, স্বাধীনতার পর ২০০১ সালে মাত্র একবার এই আসনে জয় পায় বিএনপি। ২০২০ সালে দলটির প্রবীণ নেতা অধ্যক্ষ মো. ইউনুসের মৃত্যু হলে নতুন নেতৃত্ব আসে। এবার আসনটিতে নমিনেশনের জন্য আলোচনায় আছেন বুড়িচং উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এটিএম মিজানুর রহমান এবং ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাজী জসিম উদ্দিন। আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় এই দুই নেতা একসঙ্গে প্রচারও চালাচ্ছেন। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. জাহিদ হোসেনের সঙ্গে সম্প্রতি দেখা করেছেন এই দুই নেতা। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ দুজনের মধ্যে যে কেউ পেতে পারেন দলীয় মনোনয়ন।

তবে ব্রাহ্মণপাড়ার আরো দুই প্রবীণ নেতা ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন এবং এএসএম আলাউদ্দিন ভূঁইয়াও মনোনয়ন দৌড়ে আছেন। ২০১৮ সালে বিএনপি তিনজনকে প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন দিলেও শেষ পর্যন্ত অধ্যক্ষ ইউনুসকে প্রার্থী করা হয়। তাদের মধ্যে কেবল এটিএম মিজানুর রহমান সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে আছেন।

অন্যদিকে জোট থাকায় ২০০১ সাল থেকে বিএনপির জন্য আসনটি ছেড়ে দিয়েছে জামায়াত। কিন্তু এবার দলটি আগেই তাদের প্রাথমিক প্রার্থী বাছাই করেছে। ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি অ্যাডভোকেট ড. মোবারক হোসেনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে দলটির পক্ষ থেকে। গত কয়েক মাস ধরে নির্বাচনি এলাকার প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। নিজেকে বিকল্প নেতৃত্ব হিসেবে উপস্থাপন করছেন জামায়াতের এই প্রার্থী।

২০০৯ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এ আসনে বিএনপির সাংগঠনিক সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেছেন দলের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদ। ২০১৮ সালে বিএনপি থেকে অধ্যক্ষ মো. ইউনুসকে মনোনয়ন দেওয়ায় বিএনপির সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয় শওকত মাহমুদের। বর্তমানে তিনি জনতা পার্টি বাংলাদেশের মহাসচিব। গুঞ্জন রয়েছে, জনতা পার্টি থেকে তিনি এ আসনে নির্বাচন করবেন।

বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৯৬ সালে এ আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন সাবেক মন্ত্রী আবুল কাশেম। ২০০১ সালে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়েছিলেন অধ্যক্ষ মো. ইউনুস। ২০০৮ সালে মনোনয়ন পেয়েছিলেন ব্যবসায়ী এএসএম আলাউদ্দিন এবং ২০১৮ সালে মনোনয়ন পেয়েছিলেন অধ্যক্ষ মো. ইউনুস। গত ৩০ বছরে এই আসনে বারবার প্রার্থী পরিবর্তন হয়েছে। ফলে সাংগঠনিক কাঠামো শক্তিশালী করতে পারেনি দলটি।

গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে প্রচারকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টার আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনিও বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। এছাড়া ২০০৮ সালে মনোনয়ন পাওয়া এসএম আলাউদ্দিন ভূঁইয়াও দলীয় প্রার্থী হতে আবেদন করবেন।

বুড়িচং উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব হাজী কবির হোসেন বলেন, গত ২৭ বছর ধরে হাজী জসিম উদ্দিন এলাকার মানুষের পাশে ছিলেন। দুঃসময়ে নেতাকর্মীদের মামলা-হামলার খরচ চালিয়ে আগলে রেখেছেন তিনি। তাকে মনোনয়ন দিলে আসনটি ফিরে পাবে বিএনপি।

ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ২০০১ সালে দল আমাকে মনোনয়ন দিয়েছিল; কিন্তু যে কোনো কারণে হোক আবার সেটা পরিবর্তন হয়েছিল। দলীয় মনোনয়নের জন্য কাজ করছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, দলের ৮০ শতাংশ নেতাকর্মী আমাকে এমপি হিসেবে চান।

এই আসনে জামায়াত মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট ড. মোবারক হোসেন বলেন, উপজেলা দুটি দীর্ঘদিন ধরে পিছিয়ে আছে। সীমান্ত এলাকা হওয়ার কারণে মাদকের ছড়াছড়ি এখানে। যাতায়াতের সড়কগুলোও বেহাল। এলাকার মানুষের কল্যাণে কাজ করতে চাই উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা মানুষের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। এছাড়া জনগণ আগামীতে জামায়াতে ইসলামীকে ক্ষমতায় দেখতে চায় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বুড়িচং উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এটিএম মিজানুর রহমান বলেন, দলের প্রতি আমি সব সময় নিবেদিত। আওয়ামী লীগের আমলে উপজেলা চেয়ারম্যান হয়েছি । ওয়ান-ইলেভেন থেকে এখন পর্যন্ত দলের বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করেছি। তিনি বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতি আমার বিশ্বাস আছে, উনি সঠিক সিদ্ধান্তই দেবেন।

মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপি নেতা হাজী জসিম উদ্দিন বলেন, ছাত্রজীবন থেকে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছর এ এলাকায় দলের কাজ করেছি। বিগত সময়ে ফ্যাসিস্টবিরোধী আন্দোলনে জীবন বাজি রেখে অংশগ্রহণ করেছি। দলের জন্য জেল খেটেছি। তিনি বলেন, আশা করি দল আমাকে মনোনয়ন দিয়ে দলের কর্মীদের মনের আশা পূরণ করবে।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগ এবারের নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না, ফলে এই আসনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে। এছাড়া এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদ, এবি পার্টি, হেফাজতে ইসলাম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ আরো কিছু দল প্রার্থী দিচ্ছে বলে জানা গেছে।

বারবার প্রার্থী পরিবর্তনে তৃণমূলে ক্ষোভ থাকলেও এখনো বিএনপির প্রতি নেতাকর্মীদের আস্থার জায়গা আছে। তবে জামায়াতের একক প্রার্থী ও সংগঠিত প্রচার এবং অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে এই আসনে চাপে রয়েছে বিএনপি। নির্বাচনে বিএনপি যদি সময়মতো একক ও গ্রহণযোগ্য প্রার্থী ঠিক করতে না পারে, তবে দীর্ঘদিনের এই আসনটি হাতছাড়া হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের বহন করা সেই প্রিজন ভ্যানে কী আছে

অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের নেয়া হয়েছে ক্যান্টনমেন্টের অস্থায়ী কারাগারে

গাজায় স্বাস্থ্য সংকট কয়েক প্রজন্ম থাকবে: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

সেনা কর্মকর্তারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল: আসামিপক্ষের আইনজীবী

দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানে মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান এরদোয়ানের

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত