পাহাড়ে দীর্ঘদিনের ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত, অবিশ্বাস ও অনাস্থার অবসান ঘটিয়ে সকল সম্প্রদায়ের মধ্যে হারানো বিশ্বাস ফিরিয়ে আনা এবং সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে এক সম্প্রীতি সমাবেশ হয়েছে।
সোমবার মানিকছড়ি উপজেলা টাউন হলে সিএইচটি সম্প্রীতি জোটের উদ্যোগে আয়োজিত এই সমাবেশে পাহাড়ের ১৪টি জাতিসত্তার হাজারো মানুষ ‘মাতৃভূমি জিন্দাবাদ, পার্বত্য চৌদ্দ জাতি দীর্ঘজীবী হোক’ এই স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে।
সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন সিএইচটি সম্প্রীতি জোটের আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার থোয়াইচিং মং শাক। তিনি পাহাড়ে চলমান অস্থিরতা নিরসনে তৃণমূল পর্যায়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রমের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন।
ইঞ্জিনিয়ার থোয়াইচিং মং শাক বলেন, পাহাড়ে আমরা আর কোনো মায়ের বুক খালি হোক তা দেখতে চাই না। দীর্ঘদিন ধরে চলা ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত এবং একে অপরের প্রতি অবিশ্বাস আমাদের সমাজকে পিছিয়ে দিচ্ছে। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো পাহাড়ে বসবাসরত সকল জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে হারিয়ে যাওয়া বিশ্বাস ফিরিয়ে আনা এবং সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা করা। আমরা সংঘাতের পথ পরিহার করে সংলাপ ও সম্প্রীতির মাধ্যমে একটি শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ পার্বত্য চট্টগ্রাম গড়ে তুলতে পাড়ায় পাড়ায় নিয়মিত সচেতনতা ক্যাম্পেইন পরিচালনা করছি।
সভায় বক্তারা গভীর উদ্বেগের সাথে জানান, স্বার্থান্বেষী মহলের ইন্ধনে সৃষ্ট বিভাজন পাহাড়ে অস্থিতিশীলতা তৈরি করছে। এই পরিস্থিতি উত্তরণে সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা পাহাড়ের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ভ্রাতৃঘাতী সংঘাতের কুফল সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে এবং শান্তির বার্তা পৌঁছে দিতে বিরামহীন কাজ করে যাচ্ছেন। বক্তারা বলেন, বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সংলাপের আয়োজন করে বিদ্যমান অবিশ্বাস দূর করা এবং একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ জাগিয়ে তোলাই তাদের প্রধান এজেন্ডা। পাহাড়ে বসবাসরত প্রতিটি নাগরিকের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে সমঅধিকার ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে তারা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
সংগঠনের মুখপাত্র পাইশিখই মার্মা বলেন, আমাদের লক্ষ্য পরিষ্কার আমরা এমন একটি পার্বত্য চট্টগ্রাম চাই যেখানে কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। আমরা বিশ্বাস করি, কেবল ঐক্য এবং সচেতনতার মাধ্যমেই আমরা একটি নিরাপদ ও সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়তে পারব। এজন্য আমরা ছাত্র-যুবকসহ সকল শ্রেণিপেশার মানুষকে এই সচেতনতামূলক আন্দোলনে শরিক হওয়ার আহ্বান জানাই।
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন গাজী আনোয়ার, শাহীন আলম, মোবারক হোসেন, কেজো কার্বারি, মনিরুজ্জামান, নাসির উদ্দিন, অনিল কার্বারী, ইসলাম হোসেন রাফি।

