বাঁশখালীতে হুমকির মুখে ৫০০ কোটি টাকার বেড়িবাঁধ প্রকল্প

উপজেলা প্রতিনিধি, বাঁশখালী (চট্টগ্রাম)
প্রকাশ : ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১৩: ৫৪

চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে উপকূল রক্ষায় নির্মিতব্য ৫০০ কোটি টাকার বেড়িবাঁধ প্রকল্পে অনিয়ম ও নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) সরেজমিনে উপজেলার ছনুয়া এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, মানসম্মত সিলেটি বালির পরিবর্তে স্থানীয় বেতাগী বালি ও ময়লাযুক্ত পাথর ব্যবহার করে সিসি ব্লক তৈরির কাজ চলছে।

লবণাক্ত পানি, নিম্নমানের পাথর ও স্থানীয় বালু দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে বেড়িবাঁধ রক্ষার সিসি ব্লক, যা পুরো প্রকল্পকে হুমকির মুখে ফেলেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

এ সময় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর উপস্থিতি দেখা যায়নি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সাগরের লবণাক্ত পানি ব্যবহার করে বলগেট থেকে বালু আনলোড করা হচ্ছে এবং সেই বালু দিয়েই বাঁধের কাজ চলছে। দিনের বেলায় প্রশাসনের চোখ এড়াতে রাতে এই বালু আনলোড করা হয়। এতে আশেপাশের কৃষিজমি ও মাছের ঘের লবণাক্ত পানির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘আগেও বেড়িবাঁধ নির্মাণে চুরি ও নিম্নমানের কাজ হয়েছিল। এখন আগের চেয়েও ভয়াবহভাবে অনিয়ম চলছে। রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় ঠিকাদাররা সরকারি টাকা লুট করছে।’

পাউবো সূত্রে জানা যায়, বাঁশখালী উপজেলার ছনুয়া, খানখানাবাদ ও বাহারছড়া উপকূল রক্ষায় ৫০৪ কোটি টাকার বেড়িবাঁধ প্রকল্পটি গত ২৮ মে একনেকে অনুমোদন পায়। প্রকল্পে ৬.৪ কিলোমিটার সমুদ্র উপকূলীয় বাঁধের ঢাল সংরক্ষণ, ভাঙন রোধ ও পুনর্গঠন কাজের পাশাপাশি ১.১ কিলোমিটার নদীতীর সংরক্ষণ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

ছনুয়ার ২.৮ কিলোমিটার অংশে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড (পিডিএল) কাজ করছে। এছাড়া খানখানাবাদ-কদমরসুল পয়েন্টে যৌথভাবে কাজ করছে পিডিএল ও ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং। দুটি পয়েন্টে মোট নয়টি প্যাকেজে ২৪৭ কোটি টাকার কাজ চলছে।

২০১৫ সালে ৩০০ কোটি টাকার বেড়িবাঁধ প্রকল্পেও নিম্নমানের কাজের অভিযোগ উঠেছিল। সেই প্রকল্পের বাঁধ ২০২৩ সালে সাগরে তলিয়ে যায়। সম্প্রতি প্রেমাশিয়া এলাকায় আরও দুইশ’ মিটার বাঁধ ভেঙে পড়েছে।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, ‘আগে যে প্রতিষ্ঠান অনিয়ম করেছিল, সেই ‘হাসান ব্রাদার্স’কেই আবারও নতুন প্রকল্পে কাজ দেওয়া হয়েছে। এতে দুর্নীতির আশঙ্কা আরও বেড়েছে।’

স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে সম্প্রতি উপজেলা প্রশাসন খানখানাবাদ বেড়িবাঁধ প্রকল্প এলাকায় অভিযান চালায়। এ সময় দুটি বলগেট ও একটি ড্রেজার জব্দ করা হয় এবং নির্মাণকাজ স্থগিত রাখার নির্দেশ দেয়া হয়।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ওমর সানি আকন বলেন, ‘লবণাক্ত পানি দিয়ে বালি আনলোডের অভিযোগে পিডিএলকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে এবং মুচলেকা নেয়া হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার ও পাউবো কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।’

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পিডিএলের প্রজেক্ট ম্যানেজার সাদিকুল ইসলাম দাবি করেন, ‘আমরা ওই বালু গ্রহণ করিনি। স্থানীয় কিছু মানুষ জোরপূর্বক বালু আনলোড করেছে। নতুন করে নলকূপ বসিয়ে মিষ্টি পানির ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’

অন্যদিকে, পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী ড. তানজির সাইফ আহমেদ বলেন, ‘লবণাক্ত পানি দিয়ে বালি আনলোডের বিষয়টি জানার পর কাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। এখন গভীর নলকূপের মাধ্যমে মিষ্টি পানি ব্যবহার করা হবে।’

তবে নিম্নমানের বালি ও পাথর ব্যবহারের বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

স্থানীয়রা সরকারের হস্তক্ষেপ দাবি করে বলেন, ‘উপকূল রক্ষার এই প্রকল্পে দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। না হলে কয়েক বছরের মধ্যেই এই বাঁধও সাগরে বিলীন হয়ে যাবে।’

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত