• facebook
  • fb_group
  • twitter
  • tiktok
  • whatsapp
  • pinterest
  • youtube
  • linkedin
  • instagram
  • google
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫
সর্বশেষ
জাতীয়
রাজনীতি
বাণিজ্য
সারা দেশ
বিশ্ব
খেলা
আইন-আদালত
ধর্ম ও ইসলাম
বিনোদন
ফিচার
আমার দেশ পরিবার
ইপেপার
আমার দেশযোগাযোগশর্তাবলি ও নীতিমালাগোপনীয়তা নীতিডিএমসিএ
facebookfb_grouptwittertiktokwhatsapppinterestyoutubelinkedininstagramgoogle
স্বত্ব: ©️ আমার দেশ | সম্পাদক ও প্রকাশক, মাহমুদুর রহমান 
মাহমুদুর রহমান কর্তৃক ঢাকা ট্রেড সেন্টার (৮ম ফ্লোর), ৯৯, কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫ থেকে প্রকাশিত এবং আমার দেশ পাবলিকেশন লিমিটেড প্রেস, ৪৪৬/সি ও ৪৪৬/ডি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে মুদ্রিত।
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্য বিভাগ: ঢাকা ট্রেড সেন্টার, ৯৯, কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।ফোন: ০২-৫৫০১২২৫০। ই-মেইল: info@dailyamardesh.comবার্তা: ফোন: ০৯৬৬৬-৭৪৭৪০০। ই-মেইল: news@dailyamardesh.comবিজ্ঞাপন: ফোন: +৮৮০-১৭১৫-০২৫৪৩৪ । ই-মেইল: ad@dailyamardesh.comসার্কুলেশন: ফোন: +৮৮০-০১৮১৯-৮৭৮৬৮৭ । ই-মেইল: circulation@dailyamardesh.com
ওয়েব মেইল
কনভার্টারআর্কাইভবিজ্ঞাপনসাইটম্যাপ
> সারা দেশ
> চট্টগ্রাম

হাসিনার ফাঁসির রায় দ্রুত বাস্তবায়ন চায় শহীদ ওয়াসিম ও শান্তর পরিবার

জমির উদ্দিন-ওসমান জাহাঙ্গির, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ১৬: ৫৭
logo
হাসিনার ফাঁসির রায় দ্রুত বাস্তবায়ন চায় শহীদ ওয়াসিম ও শান্তর পরিবার

জমির উদ্দিন-ওসমান জাহাঙ্গির, চট্টগ্রাম

প্রকাশ : ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ১৬: ৫৭

জুলাই ২০২৪ এর ভয়াবহ সেই দিনগুলো এখনও লোমহর্ষকভাবে ভেসে ওঠে চট্টগ্রামে প্রথম ও দ্বিতীয় শহীদ ওয়াসিম আকরাম ও ফয়সাল আহমদ শান্তর পরিবারের সামনে। দুই তরুণের রক্তে রাঙা সেদিনের স্মৃতি আজও পরিবারগুলোর জীবন থামিয়ে রেখেছে। তবে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ঘোষিত মৃত্যুদণ্ডের রায়-তাদের চোখে শুধু ন্যায়ের সাফল্য নয়, দেশের উপর বহুদিনের ভারতের ছায়া নিয়ন্ত্রণ ভাঙার প্রতীকও।

শান্তর মা কহিনুর আক্তার বলেন, আমার ছেলেকে হারানোর ব্যথা কখনো যাবে না। কিন্তু আজ মনে হচ্ছে দেশের ওপর চাপিয়ে দেওয়া রাজনৈতিক প্রভাবের যুগ শেষ হলো। আমরা আমাদের দেশের আইন, বিচার ও মর্যাদা নিজেরাই ফিরিয়ে আনতে পেরেছি।

ওয়াসিমের বাবা শফিউল আলম আরও কঠোর ভাষায় ক্ষোভ জানান, বছরের পর বছর ধরে যারা ক্ষমতার আড়ালে থেকে আমাদের দেশের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করেছে, তাদের প্রভাবই এই হত্যাকাণ্ডের মতো ভয়ংকর ঘটনা ঘটিয়েছে। আজকের রায় আমাদের কাছে সার্বভৌমত্ব ফিরে পাওয়ার ঘোষণা।

দুটি পরিবারই দাবি করে, স্বাধীনতার পর থেকেরে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ভারতের স্বার্থে পরিচালিত হয়েছে। বিশেষ করে শেখ হাসিনা ছিল ভারতের ছায়া সরকার। যার ফল ছিল দমন-পীড়ন, গুম-খুন ও জনবিচ্ছিন্ন শাসন। তাদের মতে, শেখ হাসিনার সরকারের পতন ও আইনি রায়ের মাধ্যমে সেই প্রভাবের অবসান ঘটেছে।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে আওয়ামী লীগের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা মামলার রায় আজ ঘোষণা করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। হত্যাকাণ্ড, দমন-পীড়ন ও পরিকল্পিত নির্যাতনের দুটি অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।

রায়ের খবর প্রকাশের পর চট্টগ্রামের দুই শহীদ-ফয়সাল আহমেদ শান্ত ও মোহাম্মদ ওয়াসিম আকরামের পরিবারে দীর্ঘদিনের দুঃখের ভাঁজের মধ্যে দেখা মিলেছে স্বস্তির আলো। যে মায়েরা–বাবারা গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সন্তানের হত্যার বিচার চাইতে চাইতে কণ্ঠ রুদ্ধ করেছিলেন, আজ তাদের কণ্ঠে প্রথমবারের মতো শোনা গেল স্বস্তির দীর্ঘ নিঃশ্বাস।

সোমবার সকাল থেকে চট্টগ্রাম নগরের লালখানবাজারের বাসায় টিভির সামনে বসেছিলেন ফয়সাল আহমদ শান্তর মা কহিনুর আক্তার। রায়ের সংবাদ দেখেই অঝোরে কাঁদতে থাকেন তিনি। পাশে রাখা শান্তর কলেজ জীবনের ছবি আঁকড়ে ধরে তিনি বলেন, আল্লাহ বিচার করেন। আজ তা নিজ চোখে দেখলাম। শান্তর রক্তটা যে বৃথা যায়নি, এই রায় তা প্রমাণ করে দিল।

শিবির ও পরিবার সূত্র জানায়, শান্ত, চট্টগ্রাম মহানগর শিবিরের দক্ষিণ শাখার ‘সাথী ছিলেন’। স্কুল পশ্চিম ওয়ার্ড ছাত্র সংগঠনের ওয়ার্ড সভাপতি। এইচএসসি শেষে ভর্তি হয়েছিলেন ওমরগণি এমইএস কলেজে। সকালেই করেছিলেন সংগঠনের কাজে দৌড়ঝাঁপ। ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই বিকেলে সংগঠনের নির্দেশে যোগ দেন মুরাদপুরের প্রতিবাদ মিছিলে।

বিকেল তিনটা। শিক্ষার্থীরা মুরাদপুর মোড়ে অবস্থান নিয়েছে। ঠিক তখনই ২ নম্বর গেটের দিক থেকে অতর্কিত হামলায় ঝাঁপিয়ে পড়ে ছাত্রলীগ। একপর্যায়ে শুরু হয় গুলিবর্ষণ। একটি গুলি ঢুকে যায় শান্তর বুকের ডান পাশে। মুহূর্তেই তিনি লুটিয়ে পড়েন রাস্তায়। সহপাঠীরা ছুটে গিয়ে তাকে নিয়ে যায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান-শান্ত আর নেই।

সন্ধ্যার পর বাসায় ফেরার কথা ছিল শান্তর। মা তখন নাস্তা বানিয়ে অপেক্ষায়। হঠাৎ ফোন বন্ধ পেয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন তিনি। কিছুক্ষণ পর শান্তর দুই বন্ধু এসে জানায়, শান্ত আহত হয়েছে, হাসপাতালে চলেন।

হাসপাতালে গিয়ে যখন মা দেখলেন তার একমাত্র ছেলের নিথর দেহ। তিনি সেখানেই ঢলে পড়েন। জ্ঞান ফিরে এলে শুরু হয় থানার অনুমতি, কাগজপত্র, পুলিশি তদারকির জটিলতা। রাত ২টা নাগাদ তিনি শেষবারের মতো দেখতে পেলেন বিকাল ৩টায় সুস্থভাবে বিদায় নেওয়া ছেলেটিকে-এবার শহীদ হিসেবে। ছেলের মৃত্যুর পর থেকেই কহিনুর আক্তার গভীর মানসিক আঘাতে কখনো সুস্থ, কখনো অসুস্থ দিন কাটিয়েছেন। রায় ঘোষণার পরও তার রুদ্ধ কণ্ঠ বন্ধ হয়নি। তিনি বলেন, আমি বারবার বলতাম-‘শান্ত, তুই ন্যায় আন্দোলন করতে গেছিস, আমি ভয় পাই না।’

শেখ হাসিনা ও ভারতের পতন চেয়েছিলেন প্রথম শহীদ ওয়াসিম। কক্সবাজারের পেকুয়ার বাঘগুজারা বাজারপাড়ায় তার গ্রামের বাড়ি। রায়ের খবর শোনার পর ওয়াসিমের বাবা শফিউল আলম ছেলের কবরের পাশে গিয়ে বসেছিলেন। বিকেলে ফোনে কথা বলতে বলতে তার কণ্ঠ ভারী হয়ে আসে। আজ রায়ের পর কবরের কাছে গিয়ে মনে হইল-আমার ছেলাও যেন শান্তিতে আছে। যারা ওকে গুলি করেছিল, যারা নির্দেশ দিয়েছিল-সবাইকে আইনের আওতায় আনা হোক। এই রায় সেই পথই খুলে দিল।

২০২৪ সালের ১৬ জুলাই। চট্টগ্রামের মুরাদপুর এলাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের মিছিলে অংশ নিয়ে সংঘর্ষে নিহত হন ওয়াসিম। চট্টগ্রাম কলেজের স্নাতক (সম্মান) চতুর্থ বর্ষের ছাত্র ছিলেন তিনি। পাশাপাশি চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রদল ও পেকুয়া উপজেলা ছাত্রদলের রাজনীতিতেও সক্রিয় ছিলেন।

পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। বড় ভাই আরশেদ আলী সৌদিপ্রবাসী, বর্তমানে দেশে আছেন। বড় বোন মর্জিনার ও ছোট বোন রুশনির বিয়ে হয়ে গেছে। সবার ছোট সাবরিনা ইয়াসমিন এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। পরিবারের সবার চোখের সামনে সবচেয়ে প্রাণবন্ত ছেলেটিই আজ নেই। ‘মনে হয়, ছেলেটা এখনো আমার সঙ্গেই আছে’ বলেন বাবা শফিউল।

ওয়াসিমের বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তার বাবা শফিউল আলমের সঙ্গে। কণ্ঠ ভারী, চোখে লুকানো কান্নার ছায়া। তিনি বলেন, ওয়াসিমকে হারিয়েছি প্রায় দেড় বছর হয়ে গেল। তার দেহটা কবরের নিচে হলেও মনে হয়-সে আমার সঙ্গেই আছে। ঘরের সবকিছুতেই তার স্মৃতি। কোনোভাবেই তাকে মাথা থেকে সরাতে পারি না।

রায়ের পর চট্টগ্রাম নগরের জিইসি মোড়, বহদ্দারহাট, আন্দরকিল্লা, দুই নম্বর গেইটসহ বিভিন্ন এলাকায় মানুষের প্রতিক্রিয়া ছিল দৃশ্যমান। জিইসিতে মোবাইলে স্ক্রল দেখে এক যুবক চিৎকার করে বলেন, এইটা রাষ্ট্রের বিচার, দেশের বিচার!

আন্দরকিল্লায় এক দোকানি বলেন, এতোদিন ধরে শুধু দমন–পীড়ন দেখছি। আজ প্রথমবার মনে হলো আইনের শক্তি আছে। বহদ্দারহাটে কয়েকজন শিক্ষার্থী স্লোগান দেন, শান্ত–ওয়াসিম তোমরা অমর। ন্যায়ের জয় হলো। রায় হলো-এবার বাস্তবায়ন চাই।

শান্তর মা কহিনুর আক্তার ও ওয়াসিমের বাবা শফিউল আলমের প্রত্যাশা এখন একটাই-রায়ের দ্রুত বাস্তবায়ন। কহিনুর আক্তার বলেন, রাজনৈতিক চাপ, আপিল, দেরি-এসব যেন না হয়। আমার ছেলের রক্তের বিচার অর্ধেক হয়েছে। বাকি অর্ধেক হবে যখন রায় কার্যকর হবে।

শফিউল আলম যোগ করেন, শহীদদের পরিবার শুধু বিচার চায়। আমাদের সন্তানদের রক্ত যেন আর কারও বাবা–মায়ের কপালে না লিখতে হয়।

সম্পাদক ও প্রকাশক : মাহমুদুর রহমান কর্তৃক প্রকাশিত এবং আল-ফালাহ প্রিন্টিং প্রেস, ৪২৩, এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা-১২১৭ থেকে এবং অস্থায়ীভাবে মিডিয়া প্রিন্টার্স লি. ৪৪৬/এইচ, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্য বিভাগ : ঢাকা ট্রেড সেন্টার, ৯৯, কাজী নজরুল ইসলাম এভিণিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫। পিএবিএক্স : ০২-৫৫০১২২৫০। ই-মেইল : info@dailyamardesh.com

জুলাই ২০২৪ এর ভয়াবহ সেই দিনগুলো এখনও লোমহর্ষকভাবে ভেসে ওঠে চট্টগ্রামে প্রথম ও দ্বিতীয় শহীদ ওয়াসিম আকরাম ও ফয়সাল আহমদ শান্তর পরিবারের সামনে। দুই তরুণের রক্তে রাঙা সেদিনের স্মৃতি আজও পরিবারগুলোর জীবন থামিয়ে রেখেছে। তবে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ঘোষিত মৃত্যুদণ্ডের রায়-তাদের চোখে শুধু ন্যায়ের সাফল্য নয়, দেশের উপর বহুদিনের ভারতের ছায়া নিয়ন্ত্রণ ভাঙার প্রতীকও।

বিজ্ঞাপন

শান্তর মা কহিনুর আক্তার বলেন, আমার ছেলেকে হারানোর ব্যথা কখনো যাবে না। কিন্তু আজ মনে হচ্ছে দেশের ওপর চাপিয়ে দেওয়া রাজনৈতিক প্রভাবের যুগ শেষ হলো। আমরা আমাদের দেশের আইন, বিচার ও মর্যাদা নিজেরাই ফিরিয়ে আনতে পেরেছি।

ওয়াসিমের বাবা শফিউল আলম আরও কঠোর ভাষায় ক্ষোভ জানান, বছরের পর বছর ধরে যারা ক্ষমতার আড়ালে থেকে আমাদের দেশের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করেছে, তাদের প্রভাবই এই হত্যাকাণ্ডের মতো ভয়ংকর ঘটনা ঘটিয়েছে। আজকের রায় আমাদের কাছে সার্বভৌমত্ব ফিরে পাওয়ার ঘোষণা।

দুটি পরিবারই দাবি করে, স্বাধীনতার পর থেকেরে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ভারতের স্বার্থে পরিচালিত হয়েছে। বিশেষ করে শেখ হাসিনা ছিল ভারতের ছায়া সরকার। যার ফল ছিল দমন-পীড়ন, গুম-খুন ও জনবিচ্ছিন্ন শাসন। তাদের মতে, শেখ হাসিনার সরকারের পতন ও আইনি রায়ের মাধ্যমে সেই প্রভাবের অবসান ঘটেছে।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে আওয়ামী লীগের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা মামলার রায় আজ ঘোষণা করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। হত্যাকাণ্ড, দমন-পীড়ন ও পরিকল্পিত নির্যাতনের দুটি অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।

রায়ের খবর প্রকাশের পর চট্টগ্রামের দুই শহীদ-ফয়সাল আহমেদ শান্ত ও মোহাম্মদ ওয়াসিম আকরামের পরিবারে দীর্ঘদিনের দুঃখের ভাঁজের মধ্যে দেখা মিলেছে স্বস্তির আলো। যে মায়েরা–বাবারা গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সন্তানের হত্যার বিচার চাইতে চাইতে কণ্ঠ রুদ্ধ করেছিলেন, আজ তাদের কণ্ঠে প্রথমবারের মতো শোনা গেল স্বস্তির দীর্ঘ নিঃশ্বাস।

সোমবার সকাল থেকে চট্টগ্রাম নগরের লালখানবাজারের বাসায় টিভির সামনে বসেছিলেন ফয়সাল আহমদ শান্তর মা কহিনুর আক্তার। রায়ের সংবাদ দেখেই অঝোরে কাঁদতে থাকেন তিনি। পাশে রাখা শান্তর কলেজ জীবনের ছবি আঁকড়ে ধরে তিনি বলেন, আল্লাহ বিচার করেন। আজ তা নিজ চোখে দেখলাম। শান্তর রক্তটা যে বৃথা যায়নি, এই রায় তা প্রমাণ করে দিল।

শিবির ও পরিবার সূত্র জানায়, শান্ত, চট্টগ্রাম মহানগর শিবিরের দক্ষিণ শাখার ‘সাথী ছিলেন’। স্কুল পশ্চিম ওয়ার্ড ছাত্র সংগঠনের ওয়ার্ড সভাপতি। এইচএসসি শেষে ভর্তি হয়েছিলেন ওমরগণি এমইএস কলেজে। সকালেই করেছিলেন সংগঠনের কাজে দৌড়ঝাঁপ। ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই বিকেলে সংগঠনের নির্দেশে যোগ দেন মুরাদপুরের প্রতিবাদ মিছিলে।

বিকেল তিনটা। শিক্ষার্থীরা মুরাদপুর মোড়ে অবস্থান নিয়েছে। ঠিক তখনই ২ নম্বর গেটের দিক থেকে অতর্কিত হামলায় ঝাঁপিয়ে পড়ে ছাত্রলীগ। একপর্যায়ে শুরু হয় গুলিবর্ষণ। একটি গুলি ঢুকে যায় শান্তর বুকের ডান পাশে। মুহূর্তেই তিনি লুটিয়ে পড়েন রাস্তায়। সহপাঠীরা ছুটে গিয়ে তাকে নিয়ে যায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান-শান্ত আর নেই।

সন্ধ্যার পর বাসায় ফেরার কথা ছিল শান্তর। মা তখন নাস্তা বানিয়ে অপেক্ষায়। হঠাৎ ফোন বন্ধ পেয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন তিনি। কিছুক্ষণ পর শান্তর দুই বন্ধু এসে জানায়, শান্ত আহত হয়েছে, হাসপাতালে চলেন।

হাসপাতালে গিয়ে যখন মা দেখলেন তার একমাত্র ছেলের নিথর দেহ। তিনি সেখানেই ঢলে পড়েন। জ্ঞান ফিরে এলে শুরু হয় থানার অনুমতি, কাগজপত্র, পুলিশি তদারকির জটিলতা। রাত ২টা নাগাদ তিনি শেষবারের মতো দেখতে পেলেন বিকাল ৩টায় সুস্থভাবে বিদায় নেওয়া ছেলেটিকে-এবার শহীদ হিসেবে। ছেলের মৃত্যুর পর থেকেই কহিনুর আক্তার গভীর মানসিক আঘাতে কখনো সুস্থ, কখনো অসুস্থ দিন কাটিয়েছেন। রায় ঘোষণার পরও তার রুদ্ধ কণ্ঠ বন্ধ হয়নি। তিনি বলেন, আমি বারবার বলতাম-‘শান্ত, তুই ন্যায় আন্দোলন করতে গেছিস, আমি ভয় পাই না।’

শেখ হাসিনা ও ভারতের পতন চেয়েছিলেন প্রথম শহীদ ওয়াসিম। কক্সবাজারের পেকুয়ার বাঘগুজারা বাজারপাড়ায় তার গ্রামের বাড়ি। রায়ের খবর শোনার পর ওয়াসিমের বাবা শফিউল আলম ছেলের কবরের পাশে গিয়ে বসেছিলেন। বিকেলে ফোনে কথা বলতে বলতে তার কণ্ঠ ভারী হয়ে আসে। আজ রায়ের পর কবরের কাছে গিয়ে মনে হইল-আমার ছেলাও যেন শান্তিতে আছে। যারা ওকে গুলি করেছিল, যারা নির্দেশ দিয়েছিল-সবাইকে আইনের আওতায় আনা হোক। এই রায় সেই পথই খুলে দিল।

২০২৪ সালের ১৬ জুলাই। চট্টগ্রামের মুরাদপুর এলাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের মিছিলে অংশ নিয়ে সংঘর্ষে নিহত হন ওয়াসিম। চট্টগ্রাম কলেজের স্নাতক (সম্মান) চতুর্থ বর্ষের ছাত্র ছিলেন তিনি। পাশাপাশি চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রদল ও পেকুয়া উপজেলা ছাত্রদলের রাজনীতিতেও সক্রিয় ছিলেন।

পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। বড় ভাই আরশেদ আলী সৌদিপ্রবাসী, বর্তমানে দেশে আছেন। বড় বোন মর্জিনার ও ছোট বোন রুশনির বিয়ে হয়ে গেছে। সবার ছোট সাবরিনা ইয়াসমিন এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। পরিবারের সবার চোখের সামনে সবচেয়ে প্রাণবন্ত ছেলেটিই আজ নেই। ‘মনে হয়, ছেলেটা এখনো আমার সঙ্গেই আছে’ বলেন বাবা শফিউল।

ওয়াসিমের বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তার বাবা শফিউল আলমের সঙ্গে। কণ্ঠ ভারী, চোখে লুকানো কান্নার ছায়া। তিনি বলেন, ওয়াসিমকে হারিয়েছি প্রায় দেড় বছর হয়ে গেল। তার দেহটা কবরের নিচে হলেও মনে হয়-সে আমার সঙ্গেই আছে। ঘরের সবকিছুতেই তার স্মৃতি। কোনোভাবেই তাকে মাথা থেকে সরাতে পারি না।

রায়ের পর চট্টগ্রাম নগরের জিইসি মোড়, বহদ্দারহাট, আন্দরকিল্লা, দুই নম্বর গেইটসহ বিভিন্ন এলাকায় মানুষের প্রতিক্রিয়া ছিল দৃশ্যমান। জিইসিতে মোবাইলে স্ক্রল দেখে এক যুবক চিৎকার করে বলেন, এইটা রাষ্ট্রের বিচার, দেশের বিচার!

আন্দরকিল্লায় এক দোকানি বলেন, এতোদিন ধরে শুধু দমন–পীড়ন দেখছি। আজ প্রথমবার মনে হলো আইনের শক্তি আছে। বহদ্দারহাটে কয়েকজন শিক্ষার্থী স্লোগান দেন, শান্ত–ওয়াসিম তোমরা অমর। ন্যায়ের জয় হলো। রায় হলো-এবার বাস্তবায়ন চাই।

শান্তর মা কহিনুর আক্তার ও ওয়াসিমের বাবা শফিউল আলমের প্রত্যাশা এখন একটাই-রায়ের দ্রুত বাস্তবায়ন। কহিনুর আক্তার বলেন, রাজনৈতিক চাপ, আপিল, দেরি-এসব যেন না হয়। আমার ছেলের রক্তের বিচার অর্ধেক হয়েছে। বাকি অর্ধেক হবে যখন রায় কার্যকর হবে।

শফিউল আলম যোগ করেন, শহীদদের পরিবার শুধু বিচার চায়। আমাদের সন্তানদের রক্ত যেন আর কারও বাবা–মায়ের কপালে না লিখতে হয়।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিষয়:

আমার দেশচট্টগ্রামশহীদ ওয়াসিম আকরাম
সর্বশেষ
১

শেখ হাসিনার ফাঁসির রায়ে গফরগাঁওয়ে বিএনপির আনন্দ মিছিল

২

বিগত সরকার দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে দিয়েছে: খন্দকার মোশাররফ

৩

২৯ নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করলো বিএনপি

৪

আফ্রিকার সেরার দৌড়ে হাকিমি-সালাহ-ওসিমেন

৫

গাজায় ‘চিকিৎসা গণহত্যা’, ৯০০ রোগীর মৃত্যু, অপেক্ষায় আরও ১৬,৫০০

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার ফাঁসির রায়ে বাগেরহাটে আনন্দ মিছিল

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্টমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার পর বাগেরহাট সদর, রামপাল,কচুয়া, মোড়েলগঞ্জে আনন্দ মিছিল হয়েছে।

৮ মিনিট আগে

‎হাসিনার রায়ের পর রায়পুরে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ

‎মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে ঘোষিত মৃত্যুদণ্ডের রায়কে ঘিরে লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে উত্তেজনা ও উচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে জুলাই আন্দোলনে আহত, নিহত ও নির্যাতনের শিকার পরিবারের সদস্যরা এ রায়কে স্বাগত

৯ মিনিট আগে

ফেনীতে নাশকতার চেষ্টাকালে আটক ৯

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ফেনীতে নাশকতার চেষ্টাকালে ৯ জনকে আটক করেছে পুলিশ।

২১ মিনিট আগে

হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়ে সিলেটে আনন্দ উল্লাস ও মিষ্টি বিতরণ

মানবতাবিরোধী অপরাধে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ও তার সহযোগী সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁনের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার সাথে সাথে আনন্দ উল্লাসে ফেটে পড়ে ছাত্র জনতা। মিছিল–সমাবেশে উত্তাল হয়ে ওঠে রাজপথ। উচ্ছ্বসিত জনতা এক অপরকে মিষ্টিমুখ করান।

২৫ মিনিট আগে
শেখ হাসিনার ফাঁসির রায়ে বাগেরহাটে আনন্দ মিছিল

শেখ হাসিনার ফাঁসির রায়ে বাগেরহাটে আনন্দ মিছিল

‎হাসিনার রায়ের পর রায়পুরে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ

‎হাসিনার রায়ের পর রায়পুরে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ

ফেনীতে নাশকতার চেষ্টাকালে আটক ৯

ফেনীতে নাশকতার চেষ্টাকালে আটক ৯

হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়ে সিলেটে আনন্দ উল্লাস ও মিষ্টি বিতরণ

হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়ে সিলেটে আনন্দ উল্লাস ও মিষ্টি বিতরণ