কক্সবাজার সিটি কলেজের বিদায়ী অধ্যক্ষ ও আওয়ামী লীগ এমপি এথিন রাখাইনের স্বামী ক্যাথিং অংয়ের দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ধামাচাপা দিতে উঠেপড়ে লেগেছে একটি চক্র। জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে বিএনপি নেতা এমএম আকতার উদ্দিন চৌধুরীকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীরা। একই সঙ্গে তার ওই পদে থাকার সুযোগ নেই বলে অভিমত দেয় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি। তারপরও নানা অজুহাতে তিনি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে বহালতবিয়তে আছেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষকরা।
সূত্র মতে, আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এথিন রাখাইনের স্বামী ক্যাথিং অং ছিলেন কক্সবাজার সিটি কলেজের দীর্ঘকালীন অধ্যক্ষ। তিনি অবসরে যাওয়ার আগে দীর্ঘসময় কলেজটির গভর্নিং বডির সভাপতি ছিলেন স্ত্রী ও আওয়ামী লীগ মনোনীত সাবেক সংসদ সদস্য এথিন রাখাইন। বিধিবিধানের তোয়াক্কা না করে স্বামী-স্ত্রীর স্বাক্ষরে সব লেনদেন হয়েছে কক্সবাজার সিটি কলেজে।
শিক্ষকদের অভিযোগ, কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের সাত কোটি ৪৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ এবং ২০০৭ থেকে ২৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ১৫৩ শিক্ষকসহ মোট ২০০ কর্মকর্তা-কর্মচারীর ৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকা বেতন বকেয়া রেখে গেছেন ক্যাথিং অং। এসব দুর্নীতি ধামাচাপা দিতেই জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক আকতার উদ্দিন চৌধুরীকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আমান উল্লাহর কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কলেজের গভর্নিং বডির নির্বাচিত শিক্ষক প্রতিনিধি ও গণিত বিভাগের অধ্যাপক আরিফুল ইসলাম।
২০২৫ সালের ১৭ মে দেওয়া মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের তদন্ত প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়, জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে নিয়োগ পাওয়ায় কক্সবাজার সিটি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এমএম আকতার উদ্দিন চৌধুরীর ওই পদে থাকার ‘সুযোগ নেই’। একই সঙ্গে জ্যেষ্ঠতম সহকারী অধ্যাপককে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়ারও সুপারিশ করা হয়।
ওই তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে মাউশির সহকারী পরিচালক মাঈন উদ্দিন এক লিখিত আদেশে আকতার উদ্দিন চৌধুরীকে সরিয়ে জ্যেষ্ঠতম সহকারী অধ্যাপককে কলেজটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হয়। আরেকটি পত্রে কলেজটির অবসরে যাওয়া সাবেক অধ্যক্ষ ক্যাথিং অংয়ের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অধিকতর তদন্তের জন্য মাউশির চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক ও সহকারী পরিচালককে (কলেজ) তদন্ত কর্মকর্তা মনোনয়ন দেওয়া হয়। তদন্ত কমিটিকে আগাম ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সে কমিটি এখনো প্রতিবেদন জমা দেনটি বলে অভিযোগ শিক্ষকদের।
অন্যদিকে মাউশির আরেক পত্রে সাবেক অধ্যক্ষ ক্যাথিং অংয়ের কলেজ ফান্ড থেকে ধার নেওয়া অর্থ, পরীক্ষা ও বিভাগ থেকে নেওয়া অতিরিক্ত অর্থ এবং প্রাক্তন উপাধ্যক্ষ আবু জাফরের পরীক্ষা ও বিভাগ থেকে নেওয়া অতিরিক্ত অর্থ ফেরত দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। সেই টাকা এখনো ফেরত নেওয়া হয়নি।
ওই পত্রে বলা হয়, প্রাথমিকভাবে কলেজ ফান্ড থেকে ধার নেওয়া অর্থ এবং পরীক্ষা ও বিভাগ থেকে গৃহীত অর্থ ফেরত না দেওয়া পর্যন্ত প্রাক্তন অধ্যক্ষ ক্যাথিং অংয়ের অবসর সুবিধা স্থগিত রাখা যেতে পারে। উপাধ্যক্ষ আবু জাফরের বিভিন্ন পরীক্ষায় অতিরিক্ত গৃহীত অর্থ ফেরত নেওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (কলেজ-৩) মাঈন উদ্দিন চলতি বছরের ১৭ মে পৃথক তিনটি পত্রে এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।
কলেজের অধ্যাপক আরিফুর রহমান জানান, আগামী ১৬ নভেম্বর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আমান উল্লাহ কক্সবাজার সিটি কলেজে আসবেন। ওইদিন তাকে কলেজের অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে লিখিতভাবে জানানো হবে।
এ বিষয়ে জানতে সাবেক অধ্যক্ষ কেথিং অংয়ের মোবাইলে একাধিকবার কল দিলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
অন্যদিকে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এমএম আকতার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আমার বিরুদ্ধে তোলা সব অভিযোগ ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিক। আমার নিয়োগে বিধিবিধানের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। তিনি বলেন, সাবেক অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান। তদন্ত শেষ হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আকতার উদ্দিন চৌধুরী আরো বলেন, ক্যাথিং অংয়ের কাছে কলেজ ৮৪ লাখ টাকা পাওনা। সেখান থেকে প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা করে শোধ করছেন।
কলেজটির সাবেক অধ্যক্ষ ক্যাথিং অং চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি অবসরে গেছেন। তার পরদিন ১৬ জানুয়ারি সহকারী অধ্যাপক এসএম আকতার উদ্দিন চৌধুরীকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হয়। ১৭ জানুয়ারি তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি কক্সবাজার জেলা বিএনপির প্রচার সম্পাদক ও জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি।

