পাহাড় কেটে রাবার প্রসেসিং ফ্যাক্টরি

অনাবাদি হয়ে পড়বে ১২০ একর জমি, পরিবেশ বিপর্যয়ের শঙ্কা

উপজেলা প্রতিনিধি, লামা (বান্দরবান)
প্রকাশ : ১০ এপ্রিল ২০২৫, ১৪: ৫৬

বান্দরবানের লামার সরই ইউনিয়নের বুক চিরে বয়ে চলা আন্দারী খালের পানি প্রবাহের ওপর নির্ভরশীল কয়েক হাজার মানুষ। ওই এলাকার সুপেয় পানির একমাত্র উৎস এই খাল। এ ছাড়া জমিতে সেচ দেওয়ার ক্ষেত্রে এই খালের পানি ব্যবহার করা হয়। কিন্তু লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এ খালের উৎসের কোল ঘেঁষে রাবার প্রসেসিং ফ্যাক্টরি নির্মাণ শুরু করা হয়েছে যা চালু হলে কারখানা বর্জ্যে দূষিত হবে পানি। অনাবাদি হয়ে পড়বে আশপাশের ১২০ একর আবাদি জমি। শুধু তা-ই নয়, পরিবেশ বিপর্যয়সহ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ারও আশঙ্কা করছেন কৃষক ও স্থানীয়রা।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সম্প্রতি সরই ইউনিয়নের আন্দারী এলাকায় একটি রাবার প্রসেসিং ফ্যাক্টরি স্থাপনের উদ্যোগ নেয় লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ। এতে আশপাশের এলাকার বাগানের রাবার গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে তা প্রক্রিয়াজাত করার পরিকল্পনা রয়েছে, যা পরবর্তীতে বিভিন্ন পণ্য তৈরিতে ব্যবহার করা হবে।

বিজ্ঞাপন

সরেজমিন দেখা যায়, পাথুরে এলাকা হওয়ায় ওই এলাকায় স্থাপন করা যায় না গভীর নলকূপ। ফলে আন্দারী খালের পানির ওপরই নির্ভর করে গোটা এলাকার মানুষ। কারখানা নির্মাণের জন্য জায়গা নির্ধারণের পর পাহাড়ের উপর স্তরের মাটি ইতোমধ্যে কেটে সমান করেছে কোম্পানি। এর তিন পাশে রয়েছে আন্দারী খালের উৎপত্তিস্থলের ঝিরি। পাশেই রয়েছে জনবসতি।

এ সময় কথা হয় কৃষক মোহাম্মদ কবির, মোহাম্মদ ফিরোজ, মোহাম্মদ খোকন, আবদুল মালেকসহ অনেকের সঙ্গে। তারা কারখানা অন্য জায়গায় সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানান। তারা জানান, কারখানা নির্মাণের জন্য জমি ও পাহাড় কাটছে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ কর্তৃপক্ষ। এখানে কারখানা নির্মাণ হলে এর বর্জ্য ঝিরি থেকে খালে পড়বে। এতে আশপাশের ১২০ একর জমি অনাবাদি হয়ে পড়বে। এমনিতেই পাহাড়ি এলাকায় আবাদি জমির পরিমাণ কম।

সরই ইউপির সাবেক সদস্য আব্দুল হালিম বলেন, প্রস্তাবিত রাবার প্রসেসিং ফ্যাক্টরি বাস্তবায়িত হলে খালের পানি দূষিত হয়ে পড়বে। এতে খালের পানিনির্ভর হাজার হাজার মানুষকে চরম দুর্ভোগে পড়তে হবে।

ঢেকিছড়া ত্রিপুরাপাড়ার বাসিন্দা রুমতুই মুরুং কারখানা নির্মাণের স্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, আমাদের পাশে এসেই কেন ফ্যাক্টরি বানাতে হবে। তারা কী চায় আমরা সবাই চাষাবাদ করতে না পেরে এলাকা ছেড়ে চলে যাই? ফ্যাক্টরি চালু হলে আমার ৫ একর জমি অনাবাদি হয়ে পড়বে।

পরিবেশ রক্ষা পরিষদের সভাপতি মোহাম্মদ করিম বলেন, লামা রাবারের উচিত জনমানবহীন স্থানে কারখানা নির্মাণ করা। না হলে রাবার ফ্যাক্টরির বর্জ্য মিশ্রিত খালের পানি চাষাবাদ ও দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করলে মানুষ নানারকম ব্যাধিতে আক্রান্ত হবে। কারণ, এই ফ্যাক্টরি নির্মাণ করা হচ্ছে খাল ঘেঁষে।

এদিকে লামা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শোভন দত্ত জানান, রাবার কারখানায় যে কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়, তা মানুষের শরীর, ফসল, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য ক্ষতিকর। এটি পানিকে দূষিত করবে। ফলে এর প্রভাব সবখানে পড়বে। এ দূষণ দীর্ঘমেয়াদি হলে এলাকার মানুষ ক্যানসারেও আক্রান্ত হবে।

সার্বিক বিষয়ে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজের ম্যানেজার আরিফ হোসেন বলেন, সবেমাত্র রাবার প্রসেসিং ফ্যাক্টরি স্থাপনের অনুমতি চেয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরে আবেদন করেছি। এর পরিপ্রেক্ষিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি টিম স্থান পরিদর্শন করেছে। অনুমতি পেলে ফ্যাক্টরি স্থাপন করা হবে।

তবে জমি অনাবাদি হয়ে যাওয়া বা পরিবেশ বিপর্যয় নিয়ে স্থানীয়দের উদ্বেগের কোনো ভিত্তি নেই বলে দাবি করেন লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজের ম্যানেজার।

রাবার প্রসেসিং ফ্যাক্টরি চালু হলে তা পরিবেশের ওপর কেমন প্রভাব ফেলবে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তর বান্দরবানের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, রাবার প্রসেসিং ফ্যাক্টরি স্থাপনের বিষয়ে এখনো পর্যন্ত চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত বা অনুমোদন দেওয়া হয়নি। আমি এলাকা পরিদর্শন করেছি। বিশেষজ্ঞরাও পরিদর্শন করবেন, এরপর সবদিক বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অসদাচারণের দায়ে টঙ্গী পাইলট স্কুলের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে শোকজ

জরুরি অবস্থা জারি করলেন পেরুর প্রেসিডেন্ট

গুম-খুনে জড়িত ১৫ সেনা কর্মকর্তা চাকরিচ্যুত। ট্রাইব্যুনালে হাজির। সাবজেলে প্রেরণ

এবার ১ টাকায় গরুর মাংস বিতরণের ঘোষণা সেই এমপি প্রার্থীর

অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের বহন করা সেই প্রিজন ভ্যানে কী আছে

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত