আমার দেশে সংবাদ প্রকাশের পর ফেনীর সেই ওসি প্রত্যাহার

এস এম ইউসুফ আলী, ফেনী
প্রকাশ : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২২: ৩৭

ফেনী মডেল থানার ওসি মর্ম সিংহ ত্রিপুরাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের এক আদেশে তাকে স্থানীয় লাইনওয়ারে সংযুক্ত করা হয়েছে। একই আদেশে তার স্থলে জেলা গোয়েন্দা শাখার ওসি মোহাম্মদ শামসুজ্জামানকে ফেনী মডেল থানার ওসি হিসেবে পদায়ন করা হয়।

এর আগে জুলাই বিপ্লবে দুই আহতের মামলা না নিয়ে উল্টো ফ্যাসিস্টদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলার অভিযোগে গত ১০ ফেব্রুয়ারি তার বিরুদ্ধে দৈনিক আমার দেশ-এর অনলাইনে এ ব্যাপারে ওসিকে নিয়ে তথ্যবহুল একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।

বিজ্ঞাপন

দৈনিক আমার দেশ-এর অনলাইনে প্রকাশিত ওই দুই আহতরা হলেন- ফেনী পৌর শহরের মধ্য চাড়িপুর এলাকার ইলাছ মিয়ার ছেলে ২২ বছর বয়সী জগলু মিয়া রিয়াজ ও সোনাগাজী উপজেলার বিষ্ণপুর গ্রামের সিরাজ উদ্দিনের ছেলে ৩৩ বছরের তাজুল ইসলাম।

প্রকাশিত ওই রিপোর্টে ভুক্তভোগীরা দৈনিক আমার দেশকে জানান, কিছুদিন আগে তথ্য প্রমাণ নিয়ে ফেনী পুলিশ সুপারের কাছে যান রিয়াজ। ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা শুনে তাৎক্ষণিক ওসি মর্ম সিংহকে মামলা নেয়ার নির্দেশ দেন তিনি। পরে মামলা হয়ে গেছে বলে দুদিন সময় চান ওসি। কিন্তু নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও কোনো খবর আসেনি। পরে থানায় গেলে এজাহারের ৩২, ৩৩ ও ৩৪ নম্বর আসামি আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের নাম বাদ দিতে জামায়াত-বিএনপির লোক দাবি করে তাকে সংশোধন করতে বলা হয়। একই সঙ্গে তাকে থানা থেকে বের করে দেওয়া হয়।

এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ওই তিন আসামির রাজনৈতিক পরিচয়সহ সব প্রমাণাদি সংগ্রহ করে একই দিন ওসির কাছে যান রিয়াজ। একপর্যায়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়ে তাকে বাড়িতে চলে যেতে বলেন ওসি মর্ম সিংহ। অথচ মাস পেরোলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

রিয়াজ বলেন, ৪ আগস্ট স্থানীয় নোমানের ডাকে উত্তর চাড়িপুর এলাকার আবুল কালামের ছেলে আশরাফুলসহ আমরা চার-পাঁচজন আন্দোলনে যোগ দেই। দুপুরে মহিপাল ফ্লাইওভারে নিচে সবাই নামাজ পড়ার সময় আমরা নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলাম। নামাজ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শহরের দিক থেকে আমাদের লক্ষ্য করে নির্বিচারে গুলি চালায় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। একপর্যায়ে হাজারি রোডের মাথায় পৌঁছালে তাদের ছোড়া গুলিতে আমি রাস্তায় পড়ে যাই।

প্রত্যক্ষদর্শী আশরাফুল ও নোমান বলেন, ওই সময় পুলিশ থাকলেও কোনো ভূমিকা রাখেনি। আমরা রিয়াজকে উদ্ধার করে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাই। কিন্তু আওয়ামী সন্ত্রাসীরা আমাদের ঢুকতে দেয়নি। উল্টো মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে চলে যেতে বাধ্য করে। পরে শহরের সালাউদ্দিন মোড়ে মেডিল্যাব হাসপাতালে নেয়া হয়। সঙ্গে সঙ্গে রিয়াজের বাম কাঁধে লাগা গুলিটি বের করেন চিকিৎসকরা। প্রায় একমাস পর সুস্থ হয়ে থানায় মামলা করতে যান রিয়াজ। কিন্তু জনতার আগুনে সবকিছু পুড়ে যাওয়ায় মামলা নিতে অপারগতা জানান ফেনী মডেল থানার তৎকালীন ওসি।

এরপর গত ১৫ জানুয়ারি ফেনীর সাবেক সাংসদ নিজাম উদ্দিন হাজারী, তার সহযোগী শুসেন চন্দ্র শীল, নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী, মেজাবাহুল হায়দার চৌধুরী সোহেল, জানে আলমসহ ৮০ জনের নামে থানায় লিখিত অভিযোগ দেই। কিন্তু মামলাটি নিতে কালক্ষেপণ করতে থাকেন বর্তমান ওসি মর্ম সিংহ। এমনকি এসপির নির্দেশও তিনি আমলে নেননি। উল্টো মোটা অংকের টাকা খেয়ে আসামিদের সঙ্গে গোপনে সখ্য গড়ে তুলছেন।

এর আগে, ৩০ অক্টোবর একই ঘটনায় হাজারীসহ ফেনীর বিভিন্ন উপজেলায় আওয়ামী লীগের ১৮৩ জনের নামে অভিযোগ দেন গুলিবিদ্ধ তাজুল। তিন-চার মাস পার হতে চললেও তার মামলাটি রুজু করা হয়নি।

ওই রিপোর্টটি প্রকাশের পূর্বে এ নিয়ে ফেনী মডেল থানার ওসি মর্ম সিংহ ত্রিপুরাকে কল করা হয়। কিন্তু কলটি ধরেন ওসি (তদন্ত) মো. ইকবাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘ওসি স্যার নোয়াখালীতে ট্রেনিংয়ে গিয়েছেন। অভিযোগের তদন্ত চলছে। তিনি ফিরে এলে মামলা নেয়া হবে।’

ওইদিন এসব ব্যাপারে জানতে পুলিশ সুপার মো. হাবিবুর রহমানের মুঠোফোনে বারবার কল দিলেও রিসিভ করেননি।

এদিকে সোমবার সন্ধ্যার দিকে 'দৈনিক আমার দেশ'-এ উক্ত সংবাদটি প্রকাশের পর তাৎক্ষণিক ভুক্তভোগী রিয়াজকে মুঠোফোনে থানায় ডেকে আনার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলেও পরদিন ১১ ফেব্রুয়ারি আমলে নেয়ার কাজ শুরু করে পুলিশ।

সর্বশেষ ১৩ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার ফেনীর মহিপালে আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের গুলিতে আহত রিয়াজের মামলাটি থানায় এন্ট্রি করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

ফেনীর পুলিশ সুপার মো. হাবিবুর রহমান ওসি মর্ম সিংহকে প্রত্যাহারের বিষয়টি নিশ্চিত করে 'দৈনিক আমার দেশকে বলেন, জুলাই বিপ্লবে আহত রিয়াজের মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত