রিতার মানবিক সিদ্ধান্তে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরল গৃহবধূ

মো. আকরাম হোসেন, মানিকগঞ্জ
প্রকাশ : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০: ৫৮

মুন্নু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চেয়ারম্যান ও মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আফরোজা খানম রিতার মানবিক সিদ্ধান্তে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরল গরিব গৃহবধূ সোনালী ।

জানা গেছে, মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার ধানকোড়া ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের দরিদ্র স্বর্ণকার পরিবার সোনালী–প্রকাশ দম্পতি হঠাৎ বড় এক সংকটে পড়ে যান। দ্বিতীয়বার সন্তান জন্মদানের জন্য সিজার অপারেশনের উদ্দেশে ১৫ দিন আগে মুন্নু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন সোনালী।

বিজ্ঞাপন

জটিল শারীরিক সমস্যার কারণে দীর্ঘ ১৫ দিন হাসপাতালে থাকতে হয় তাকে। এ সময়ে হাসপাতালের বিল ধাপে ধাপে বেড়ে দাঁড়ায় ৫৭ হাজার টাকারও বেশি। দিন এনে দিন খাওয়া স্বর্ণালঙ্কারের কারিগর প্রকাশ কর্মকারের পক্ষে এত টাকা পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি। অক্ষমতার কষ্টে তিনি একপর্যায়ে হাসপাতালেই ফেলে রেখে স্ত্রীর খোঁজখবর নেওয়াও বন্ধ করে দেন।

এমন অসহায় পরিস্থিতির খবর স্থানীয়ভাবে ছড়িয়ে পড়লে সাটুরিয়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আরিফুর রহমান আরিফ সরেজমিন প্রকাশ কর্মকারের অবস্থার সত্যতা পান। এরপর তিনি বিষয়টি অবহিত করেন মুন্নু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চেয়ারম্যান ও মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আফরোজা খানম রিতাকে।

বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে আফরোজা খানম রিতা মানবিক সিদ্ধান্ত নেন। তিনি হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন সোনালীর সম্পূর্ণ বিল মওকুফ করে দেওয়ার জন্য। তার নির্দেশে কর্তৃপক্ষ শুধু ওষুধের বিল রেখে হাসপাতালের বাকি সব খরচ মওকুফ করে দেয়।

গত রোববার বিকালে রিলিজ পান সোনালী। দুর্ভাগ্যবশত দীর্ঘদিন শারীরিক জটিলতার

কারণে নবজাতককে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। তবে বিশাল অঙ্কের হাসপাতালের বিলের বোঝা থেকে মুক্ত হয়ে স্বস্তি ও কৃতজ্ঞতা নিয়ে হাসিমুখেই বাড়ি ফেরেন সোনালী ও প্রকাশ কর্মকার।

মানবিক এই উদ্যোগের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন সোনালী। তিনি বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম কখনোই এই টাকা দিতে পারব না। শেষ পর্যন্ত হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাব কি না, সেই আশাও ছেড়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু রিতা আপা আমাদের মায়ের মতো বাঁচিয়ে দিলেন। আমরা জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব’।

হাসপাতালের বিল মওকুফের কথা শুনে স্বস্তি প্রকাশ করেন সোনালীর শ্বশুর স্বপন কর্মকার। তিনি বলেন, ‘আমার পরিস্থিতি খুবই খারাপ। আমাদের পক্ষে এত টাকা বিল পরিশোধ করা সম্ভব ছিল না। রিতা আপা শুনে হাসপাতালের বিল মাফ করে দিছে। আমি গরিব মানুষ, এতে আমি খুবই সন্তুষ্ট। উপরওয়ালা যেন রিতা আপারে অনেক বড় বানায়।’

এ ব্যাপারে মুন্নু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রি. জে. (অব.) ডা. জুলফিকার আহমেদ আমীন বলেন, ‘আমাদের চেয়ারম্যান আফরোজা খানম রিতা ম্যাডামের নির্দেশমতো বিভিন্ন সময় আমরা অসহায় দরিদ্র রোগীদের ছাড় দিয়ে থাকি। তারই ধারাবাহিকতায় আমাদের হাসপাতালে গাইনি ওয়ার্ডে খুবই দরিদ্র পরিবারের সোনালী নামে একজন ভর্তি ছিলেন। তার বিল ছিল প্রায় ৫৭ হাজার টাকা। আমরা জানতে পারি যে, তার পক্ষে এত টাকা দেওয়া সম্ভব নয়। তাই শুধু ওষুধ বাবদ ১৫ হাজার টাকা ব্যতীত তার সব টাকা আমরা মওকুফ করে আজকে তাকে ছেড়ে দিচ্ছি। এর আগেও আমাদের হাসপাতালে একজনের তিনটি বাচ্চা হয়েছিল, তার বেলায়ও লক্ষাধিক টাকার বিল মওকুফ করে দেওয়া হয়েছিল।

মুন্নু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিল মওকুফের ঘটনা এটিই প্রথম নয়। এর আগেও অসংখ্যবার এই হাসপাতালের চেয়ারম্যান ও মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আফরোজা খানম রিতা এমন মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছেন বলে জানা যায়।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিষয়:

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত