মুফতি মুহিবুল্লাহ মাদানী অপহৃত হননি, দাবি পুলিশের

স্টাফ রিপোর্টার, টঙ্গী
প্রকাশ : ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ১৮: ৩৮

গাজীপুরের টঙ্গী টিএন্ডটি কলোনীর বিটিসিএল জামে মসজিদের পেশ ইমাম ও খতিব মুহিবুল্লাহ মাদানীর অপহরণের ঘটনা সাজানো নাটক বলে দাবি করছে পুলিশ। এ ঘটনায় মুহিবুল্লাহ মাদানী সোমবার রাতে নিজেই পুলিশের কাছে দীর্ঘ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। পুলিশ বলছে, তিনি নিজেই ‘অপহরণ’ নাটক মঞ্চস্থ করে দেশব্যাপী বিশৃঙ্খলা তৈরির পায়তারা করেছেন।

পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, মুফতি মুহিবুল্লাহর অপহরণের ঘটনায় করা মামলার অভিযোগ, সিসিটিভি ফুটেজ, মোবাইল ট্র্যাকিং এবং চিকিৎসকের রিপোর্টে চরম অসঙ্গতি পাওয়া গেছে।

বিজ্ঞাপন

পুলিশ জানায়, গত ২২ অক্টোবর সকালে প্রাতঃভ্রমণকালে ৪-৫ জন লোক একটি এ্যাম্বুলেন্সে করে এসে তাকে জোরপূর্বক অপহরণ করে পঞ্চগড় জেলার হেলিপ্যাড বাজার এলাকায় একটি গাছের সাথে শিকলবন্দি করে ফেলে যায় বলে যে দাবি করা হয়- দীর্ঘ তদন্ত, বিভিন্নস্থানের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ, মোবাইল ট্র্যাকিং এবং মুফতি মুহিবুল্লাহর সর্বশেষ স্বীকারোক্তির মাধ্যমে ‘অপহরণের’ ঘটনাটি সম্পূর্ণ সাজানো বলে প্রতীয়মান হয়েছে। দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টিকারী অপহরণের ঘটনাটি অধিকতর গুরুত্বসহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মুফতি মুহিবুল্লাহকে সোমবার আটক করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মঙ্গলবার দুপুরে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ হেডকোয়ার্টারে নেওয়া হয়। পরে তাকে গাজীপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ৪নং আদালতে তোলা হলে তার জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। পরে বিজ্ঞ আদালত মুফতি মুহিবুল্লাহকে তার স্বজনদের হেফাজতে দেওয়ার জন্য আদেশ দেন।

পুলিশ আরও জানিয়েছে, এর আগে সোমবার রাতে পুলিশকে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে মুফতি মুহিবুল্লাহ মাদানী অকপটে স্বীকার করেছেন, ‘তাকে কেউ অপহরণ করে এ্যাম্বুলেন্সে উঠিয়ে নেয়নি বরং হেঁটে শিলমুন এ্যাস্কেস সিএনজি পাম্পে যান। পরে তিনি অটোতে করে পূবাইলের মীরের বাজার যান। সেখান থেকে সিএনজি করে গাজীপুরের জয়দেবপুর, পরে সেখান থেকে গাড়িতে করে ঢাকার শ্যামলী যান। সেখান থেকে গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে নিজেই টিকেট কেটে পঞ্চগড়ে যান। পঞ্চগড়ের হেলিপ্যাড বাজার এলাকায় গিয়ে নিজেই নিজের পায়ের সাথে শিকল লাগিয়ে শুয়ে ছিলেন। সেসব কিছু তিনি নিজে নিজেই করেছেন। তাকে পঞ্চগড় কেউ অপহরণ করে নেয়নি।’

তবে তার অপহরণের ঘটনা দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়লে উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ‘ইসকন’ নিষিদ্ধের দাবি তুলে সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল করে তৌহিদী জনতা ও আলেম-ওলামারা।

এদিকে পুলিশের পক্ষ থেকে মুফতি মুহিবুল্লাহ মাদানীর স্বীকারোক্তি প্রকাশ করার পর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন টিএন্ডটি এলাকার লিয়াকত আলী নামে এক বাসিন্দা। তিনি বলেন, মুফতি মুহিবুল্লাহকে যদি কেউ অপহরণ করে না থাকে তাহলে ‘অপহরণ’ নাটক সাজিয়ে দেশব্যাপী বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে তিনি অপরাধ করেছেন। একজন আলেমের কাছ থেকে সাধারণ মানুষ এমন আচরণ আশা করে না।

মুফতি মুহিবুল্লাহর অপহরণের ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পূর্ব থানার উপ-পরিদর্শক এসএম মেহেদী হাসান বলেন, তাকে গাজীপুর মেট্রোপলিটন আদালতে তোলা হয়েছিল। সেখানে তার জবানবন্দি নেয়ার পর বিজ্ঞ আদালত তাকে তার স্বজনদের হেফাজতে দেয়ার জন্য আদেশ দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে টঙ্গী পূর্ব থানার ওসি মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, মুফতি মুহিবুল্লাহকে বিজ্ঞ আদালতের আদেশ মোতাবেক স্বজনদের হেফাজতে দেয়া হবে।

প্রসঙ্গত, গত ২২ অক্টোবর বুধবার সকালে প্রাতঃভ্রমণে গিয়ে নিখোঁজ হন মুফতি মুহিবুল্লাহ মাদানী। পরের দিন বৃহস্পতিবার সকালে তাকে পঞ্চগড় জেলার হেলিপ্যাড বাজার এলাকায় শিকলবন্দি অবস্থায় দেখতে পেয়ে এলাকাবাসী জাতীয় জরুরি পরিষেবা ৯৯৯-এ কল করলে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে পঞ্চগড় সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে টঙ্গী পূর্ব থানা পুলিশ ও তার স্বজনরা সেখান থেকে উদ্ধার করে টঙ্গীতে নিয়ে আসেন।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত