নারায়ণগঞ্জ আদালত প্রাঙ্গণে জামায়াত সমর্থিত আইনজীবী ও ছাত্রশিবিরের নেতাদের তোপের মুখে পড়া ফতুল্লা মডেল থানার সাবেক অফিসার ইনচার্জ মঞ্জুর কাদেরকে নিরাপদে ছাড়িয়ে নিলেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। রোববার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ আদালত প্রাঙ্গণে এ ঘটনা ঘটে।
জামায়াতপন্থি আইনজীবীদের অভিযোগ, বিগত ফ্যাসিবাদ সরকারের শাসনামলে প্রভাব খাটিয়ে সাবেক এই ওসি অবৈধভাবে অর্থ ও বিরোধী রাজনীবিদদের নির্যাতন করেছেন। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর মঞ্জুর কাদের ছিলেন লাপাত্তা। রোববার দুপুরে হঠাৎ করেই আদালত প্রাঙ্গনে মঞ্জুর কাদেরকে দেখতে পেয়ে নিজেদের ক্ষোভ ধরে রাখতে পারেননি নির্যাতনের শিকার জামায়াতের একাধিক নেতা। তারা মঞ্জুর কাদেরকে ঘেরাও করলে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু ও আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার প্রধান সহ অন্য নেতারা তাকে নিরাপদে চলে যেতে সহযোগিতা করেন।
মঞ্জুর কাদেরের সাথে নারায়ণগঞ্জ- ৪ আসনের সাবেক সাংসদ ও গডফাদার একেএম শামীম ওসমানের ছিল ব্যবসায়িক সম্পর্ক। শামীম ওসমানের মালিকানাধীন শীতল ট্রান্সপোর্ট লিমিটেডের একজন অংশীদার ছিলেন মঞ্জুর কাদের। বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের শাসনামলে মঞ্জুর কাদের নারায়ণগঞ্জে দায়িত্বপালনকালে ওসমান পরিবারের নির্দেশে বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের করেন এবং তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছিলেন। তার কারণে জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের নেতারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন।
জামায়াত সমর্থিত আইনজীবীদের সংগঠন বাংলাদেশ লʼইয়ার্স কাউন্সিললের জেলার সহকারী সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম বলেন, ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় হয়। ওই রায়ের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জে জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী ছাত্রশিবির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে নারায়ণগঞ্জে আমরা আন্দোলন করি। ২১ ফেব্রুয়ারি নগরীর বেপারীপাড়া এলাকার বাসার সামনে থেকে মঞ্জুর কাদের আমাকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়।
তিনি আরো বলেন, আমাকে ও আমার মামাতো ভাইকে ওসি মঞ্জুর কাদের তার রুমে নিয়ে এক ঘণ্টা টানা পিটাইছে। তারপর তিনদিন গুম রাখছে। আমার পরিবারের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকাও নিছিলো। আজ সেই মঞ্জুর কাদেরকে ডিসি অফিসের নিচে দেখতে পাই। তখন তাকে আটকানোর চেষ্টা করি, পুলিশের কাছে ধরিয়ে দেবার জন্য। কিন্তু তিনি দৌঁড়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের জেএম শাখায় চলে লুকান। সেখানে গিয়ে তাকে পেলেও বিএনপিপন্থি কয়েকজন সিনিয়র আইনজীবী তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায় এবং পরে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করে।
মঞ্জুর কাদেরের বিরুদ্ধে আইন বহির্ভূতভাবে তুলে নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ করেন জামায়াতপন্থি আরেক আইনজীবী ও সাবেক শিবির নেতা অ্যাডভোকেট তাওফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমরা আমৃত্যু আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু এই মঞ্জুর কাদের ছিলেন একজন ঠান্ডা মাথার খুনি। তাকে আমরা পুলিশে দিতে চেয়েছিলাম, বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের কারণে তা পারিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঘটনাস্থলে থাকা নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু বলেন, জামায়াতের আইনজীবীরা সাবেক এক পুলিশ কর্মকর্তাকে আটকে মব জাস্টিসের পর্যায়ে নিতে চেয়েছিলেন। আদালত প্রাঙ্গণে আইন-বহির্ভূত এমন কোনো ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য আমরা পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেই। এবং পরে সাবেক ওই পুলিশ কর্মকর্তা সেখান থেকে সেফলি চলে যান। আদালত প্রাঙ্গণে যে কেউ যা কিছু তো করতে পারেন না। ডিসি অফিস, আদালত প্রাঙ্গণের সামনে এইসব ঘটনা তো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্য খুবই খারাপ। আমরা কাউকে মব জাস্টিস করতে দিতে পারি না।

