শামীম ওসমানের আসনে বিএনপির একাধিক প্রার্থী

কবিরুল ইসলাম, ফতুল্লা (নারায়ণগঞ্জ)
প্রকাশ : ৩০ জুলাই ২০২৫, ০৬: ৩৪
আমার দেশ গ্রাফিক্স

নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এ আসন ঘিরেই পুরো জেলার কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকে রাজনৈতিক দলগুলো। শ্রমিক অধ্যুষিত এ আসনটিতে তিনটি বিতর্কিত নির্বাচনসহ (২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪) পাঁচবার আওয়ামী লীগ জয় পেয়েছে। এ আসনসহ জেলার রাজনীতি ১৫ বছর নারায়ণগঞ্জের গডফাদারখ্যাত শামীম ওসমানের দখলে ছিল। এ আসনে তার আঙুলের ইশারায় পরিচালিত হতো প্রশাসনসহ অন্যান্য দলের রাজনীতি। গত বছরের ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর শামীম ওসমানসহ তার অনুসারীরা পালিয়ে গেছেন। প্রতাপশালী ওসমান পরিবারের নিয়ন্ত্রণমুক্ত পরিবেশে এ আসনে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো এখন নিজেদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে মাঠ নানা ধরনের প্রচার চালাচ্ছে তারা।

আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতে হতে পারে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচন সামনে রেখে নিজেদের আসন পুনরুদ্ধারে ভোটের মাঠে নেমেছেন বিএনপির একাধিক প্রার্থী। নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে জেলা বিএনপি সভাপতি মামুন মাহমুদ, সাবেক সাংসদ মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য শিল্পপতি শাহ আলম এবং জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি তৎপরতা চালাচ্ছেন। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জোট থেকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে লড়াই করা জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মুফতি মনির হোসাইন কাসেমীও প্রচারে ব্যস্ত রয়েছেন। তিনিও আগামী নির্বাচনে বিএনপি জোট থেকে প্রার্থী হওয়ার চেষ্টা করছেন। জামায়াতে ইসলামীর একক প্রার্থী দলটির নারায়ণগঞ্জ মহানগর শাখার আমির মাওলানা মো. আবদুল জব্বার নির্বাচনি মাঠে গণসংযোগ করছেন। নিয়মিত সাংগঠনিক কর্মসূচির বাইরে সামাজিক ও ধর্মীয় কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়ে ভোটারদের মন জয়ের চেষ্টা করে যাচ্ছেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে ছাত্রদের নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) প্রার্থী হিসেবে নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার প্রধান সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট আল আমিনের নাম ঘোষণা করা হলেও তিনি এখনো নির্বাচনি প্রচার শুরু করেননি। দলীয় কর্মকাণ্ড নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে তাকে। প্রার্থী চূড়ান্ত করতে না পারায় এখনো মাঠে নামেনি ইসলামী আন্দোলন। প্রাথমিক মনোনয়নের তালিকায় আছেন দলটির তিন নেতা। তারা হলেন- মুফতি ইসমাঈল সিরাজী আল মাদানী, মাওলানা দ্বীন ইসলাম ও অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম। খেলাফত মজলিসের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনি মাঠে আছেন ইলিয়াস আহমদ।

আগামী নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নের বিষয়ে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মামুন মাহমুদ বলেন, ‘আমি বিগত দিনগুলোয় স্বৈরাচার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম করে দলকে যেভাবে ঐক্যবদ্ধ রেখেছিলাম। আশা করি দল আমার কাজের মূল্যায়ন করবে এবং মনোনয়ন দেবে।’

বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শাহ আলম বলেন, ‘নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দল আমাকে মনোনয়ন দিয়েছিল। সেবার আমাকে সূক্ষ্ম কারচুপির মাধ্যমে পরাজিত করা হয়েছিল। রাত আড়াইটা পর্যন্ত ফল ঘোষণা স্থগিত রাখা হয়। এরপর রাত ৩টায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী সারাহ বেগম কবরীকে জয়ী করা হয়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও প্রাথমিক মনোনয়ন তালিকায় আমার নাম ছিল। জোটের স্বার্থে দল জমিয়তের প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছিল। এবার আর জোট নয়, দলীয় প্রার্থীর হাতেই থাকবে ধানের শীষের ঝান্ডা। আশা করি, বিগত দিনে আমার কাজের মূল্যায়ন করেই দল আমাকে মনোনয়ন দেবে’

সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিনও ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে লড়াই করতে চাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘আমি দলকে সংগঠিত করার চেষ্টা করছি। জেলা বিএনপি সভাপতি থাকাকালে ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রামে ভূমিকা রেখেছি। তার বিশ্বাস, বিএনপি তার কাজের মূল্যায়ন করে তাকে ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন দেবে।’

নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের সদস্যসচিব মশিউর রহমান রনি আমার দেশকে বলেন, ‘আমি ওয়ার্ড ছাত্রদল থেকে ইউনিয়ন, থানা এবং জেলা ছাত্রদল সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি। এরপর যুবদলের সদস্যসচিব হয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিবাদ সরকারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে আন্দোলন করেছি। গডফাদার শামীম ওসমানের নির্দেশে ডিবি পুলিশ আমাকে গুম করে রেখেছিল। অসংখ্য মামলার আসামি হয়েছি। আশা করি, দল আমাকে মূল্যায়ন করবে।’

জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের প্রার্থী মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী বলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জোটের প্রার্থী হিসেবে নিশিরাতের ভোটে জনগণ মাত্র তিন ঘণ্টা সময় পেয়েছিল ভোট দিতে। সেই তিন ঘণ্টাতেই ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে প্রায় ৭৬ হাজার ভোট পেয়েছি। আগামী নির্বাচনেও আমি একই আসনে প্রার্থী হব। আশা করি, জোটের প্রার্থী হিসেবে বিএনপির সমর্থন আমার সঙ্গেই থাকবে। আমি মানুষের কল্যাণে কাজ করে ইনসাফের রাষ্ট্র গড়তে চাই।’

জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী মাওলানা মো. আবদুল জব্বার বলেন, ‘মানুষ পরিবর্তন চায়, বৈষম্যহীন রাষ্ট্রব্যবস্থা চায়। আমরা মানুষের কল্যাণে কাজ করেছি, আগামীতেও করতে চাই।’ তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী ইতোমধ্যেই তাদের কাজের মধ্য দিয়ে মানুষের আস্থা অর্জন করেছে। তার বিশ্বাস, ভোটাররা এবার জামায়াতের প্রার্থীকে সুযোগ দেবে।

এনসিপির প্রার্থী অ্যাডভোকেট আবদুল্লাহ আল আমিন বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে এখনো কাজ শুরু করিনি, দলীয় কর্মসূচি পালনেই ব্যস্ত আছি। দলের নির্দেশনা পেলে মাঠে প্রচার শুরু করব।’

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত