খুলনার কপিলমুনিতে সড়ক উন্নয়নে কাজে ধীরগতিসহ ভূমি অধিগ্রহণের টাকা আত্মসাৎ ও মাদরাসাসহ বিভিন্ন স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে । ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিক ও এলাকাবাসীর তীব্র প্রতিরোধের পরও সোমবার পাইকগাছার কপিলমুনিতে সড়ক সরলীকরণের নামে ভূমি অধিগ্রহণ ও অর্থ পরিশোধ না করে ডিগ্রি মাদরাসাসহ বিভিন্ন স্থাপনা বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বেতগ্রাম-তালা-পাইকগাছা-কয়রা সড়ক বাঁক সরলীকরণ এবং প্রশস্ত করার কাজ চলছে। এই প্রকল্পে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়কটি দুই লেনে উন্নীতকরণের কাজ গত ২০২০ সালে শুরু হয়।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ’র) আওতায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মোজাহার এন্টারপ্রাইজ ৩৩৯ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটির কার্যাদেশ পায় ২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর। এর আগেওই বছরের ২১ জানুয়ারি প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পায়। দুই বছর মেয়াদে ২০২২ সালের ৩০ জুন প্রকল্পটি শেষ করার কথা ছিল। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানসহ নানা জটিলতায় তিন দফায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ে আরো তিন বছর। পাশাপাশি ব্যয় বরাদ্দ বেড়েছে আরো প্রায় ৩৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা। প্রকল্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল ঝুঁকিপূর্ণ ৩৪টি বাঁক সরলীকরণ ও তার জন্য জমি অধিগ্রহণ। অথচ নানা সংকট দেখিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বাঁকগুলোর অধিকাংশই সোজা না করে খোঁড়াখুঁড়িতেই সময় পার করেছে সাড়ে চার বছর। এরপর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত মেয়াদ ও ব্যয় বরাদ্দ বৃদ্ধি করে ৩৭৯ কোটি ৪৮ লাখ টাকা করা হয়। তবে কাজের ধীর গতির কারণে থমকে ছিল কাজ। একপর্যায়ে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতন হলে মালামাল নিয়ে কাজের সাইড থেকে পালিয়ে যায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
সম্প্রতি বাঁক সরলীকরণের জন্য জমির মালিকদের নোটিস দেওয়া হয়। সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। অভিযোগ উঠেছে, জমি অধিগ্রহণের টাকা পরিশোধ না করে বিভিন্ন স্থাপনা বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়ায় কাজ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয়েছে। এছাড়াও উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জামাইয়ের কপিলমুনি বাজারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বাঁচাতে তৎকালীন এমপি আখতারুজ্জামান বাবু নগদ এবং মালামাল গ্রহণের মাধ্যমে কোটি টাকার সুবিধা ভোগ করে নকশার পরিবর্তন করার অভিযোগ উঠেছে।
অ্যাডভোকেট দিপঙ্কর সাহা জানান, বাঁক সরলীকরণের নামে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। কপিলমুনি মৌজায় বিপ্লব সাধুর মালিকানাধীন নির্মাণ বিপণিকে বাঁচাতে নকশা পরিবর্তন করে কপিলমুনি জাফর আউলিয়া মাদরাসা, জাফর আউলিয়া মাজারে সম্পত্তি, বসতভিটা ও বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি অধিগ্রহণ করতে হচ্ছে সরকারের। এতে কয়েক কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হবে। কপিলমুনি জাফর আউলিয়া মাদরাসা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এম এম জামিরুল ইসলাম জানান, মাদরাসার ভবন ও প্রাচীর ভাঙার কাজ চলমান। এখনো কোনো টাকা পাইনি।
সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের খুলনার অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. জাকির হোসেন জানান, জমি অধিগ্রহণ করেছে ডিসি অফিস। জমি অধিগ্রহণ মন্ত্রণালয়ের পাশ হওয়ার পর আমরা সমুদয় টাকা ডিসি অফিসে প্রেরণ করেছি। অধিগ্রহণ ও ক্ষতি পূরণের টাকা ডিসি অফিস থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের নিতে হবে।

