ঝিনাইদহে কোটি টাকা ব্যয়ে স্যালাইন কারখানাটি নির্মাণের ১৮ বছর অতিবাহিত হলেও বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের রাজনৈতিক জটিলতার কারণে চালু হয়নি। ঝিনাইদহ ছয় উপজেলার হাসপাতালগুলোর এ চাহিদা মেটাতে নিয়মিতভাবে যশোর ও বগুড়া থেকে স্যালাইন কিনে আনতে হয়, যার ফলে পরিবহন খরচ বাবদ প্রতিমাসেই স্বাস্থ্য বিভাগকে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হয়।
স্থানীয় চাহিদা পূরণ এবং ডায়রিয়া রোগীদের দ্রুত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ২০০৫ সালে ঝিনাইদহ শহরের মদনমোহন পাড়ায় স্থাপন করা হয় একটি আধুনিক স্যালাইন কারখানা। কিন্তু কারখানা নির্মাণের ১৮ বছর পার হলেও সেটি উৎপাদনে যেতে পারেনি রাজনৈতিক জটিলতার কারণে। কারখানাটি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছিলেন তৎকালীন সংসদ সদস্য ও বিএনপি নেতা মসিউর রহমান। ২০০৮ সালে ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর স্থানীয়রা আশা করেছিলেন শিগগিরই উৎপাদন শুরু হবে। কী দীর্ঘ সময় ধরে রাজনৈতিক উপেক্ষা, প্রশাসনিক উদ্যোগের অভাব এবং বিভিন্ন জটিলতার কারণে কারখানাটি অচল অবস্থায় পড়ে আছে। বর্তমানে ভবনজুড়ে জঞ্জাল, ধুলাবালি এবং পরিত্যক্ত সরঞ্জামের স্তূপ জমে আছে। কারখানার ভেতরে থাকা অত্যাধুনিক মেশিনগুলোও পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় বছরের পর বছর পড়ে রয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বিএনপি আমলে নির্মিত হওয়ায় রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণেই কারখানাটি কখনো চালু করা হয়নি। ফলে জেলার স্বাস্থ্যসেবার ব্যয় বাড়ছে, একই সঙ্গে অপচয় হচ্ছে সরকারি বিনিয়োগের। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তথ্য অনুযায়ী, স্যালাইন কারখানার নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০০৫ সালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি প্রকল্পের আওতায় ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন মসিউর রহমান। ২০০৮ সালে ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হলে পরবর্তী সরকার কারখানা চালুর ক্ষেত্রে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেয়নি। ফলে কারখানাটি বছরের পর বছর অবহেলায় নষ্ট হতে থাকে। ভবনের বড় অংশে তালা ঝুলছে। শুধু নিচতলার দুটি কক্ষ ব্যবহার করা হচ্ছে ইপিআই সেন্টার হিসেবে। সিভিল সার্জন অফিসের তত্ত্বাবধানে এ সেন্টারের কার্যক্রম চলছে। বাকি কক্ষগুলোতে ধুলাবালি, মাকড়শার জাল, ময়লা এবং আগাছায় পরিবেশ নষ্ট হওয়ার কারণে কারো প্রবেশ করা সম্ভব হচ্ছে না। ভবনের মাঝের খোলা জায়গাটি পরিণত হয়েছে বুনো গাছগাছালির ঝোপে।
জেলা সিভিল সার্জন অফিসের তথ্য বলছে, প্রতিমাসে ঝিনাইদহে ২০ হাজার পিস খাবার স্যালাইনের প্রয়োজন হয়। স্থানীয় উৎপাদন না থাকায় যশোর ও বগুড়া থেকে স্যালাইন সংগ্রহ করতে হচ্ছে। এতে সরকারি অর্থ ব্যয় বাড়ছে এবং সময়ে স্যালাইন সরবরাহেও জটিলতা সৃষ্টি হয়। সিনিয়র সাংবাদিক আসিফ কাজল বলেন, কারখানাটি চালু হলে ঝিনাইদহে স্বাস্থ্যসেবা খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে। পাশাপাশি চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, মাগুরা এসব পার্শ্ববর্তী জেলায় স্যালাইন সরবরাহ করা যেত।
এতে নতুন কর্মসংস্থানেরও সুযোগ সৃষ্টি হতো। তাই আমরা চাই দ্রুত কারখানাটি চালু করা হোক। ঝিনাইদহ ওআরএস স্যালাইন ফ্যাক্টরি নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ফ্যাক্টরিটি নির্মাণ করে স্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তর। ২০০৫ সালের ২২ অক্টোবর নির্মাণকাজ শুরু হয়ে শেষ হয় ২০০৮ সালের ২১ আগস্ট। মোট ব্যয় হয় ৯৮ লাখ ৩৪ হাজার ১৮৯ টাকা। নির্মাণের পর এভাবেই পড়ে আছে। যন্ত্রপাতি সরবরাহ ও লোকবল নিয়োগ করা হয়নি। ১৭ বছরেও পদ সৃষ্টি করা হয়নি।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. কামরুজ্জামান বলেন, কারখানার অবকাঠামো থাকলেও আমাদের কাছে এর নথিপত্র নেই। নথিপত্র থাকলে আমরা উদ্যোগ নিতে পারতাম। দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক কারণে কারখানাটি চালু হয়নি বলে শুনেছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে।

