জিআই স্বীকৃতি পেল ফুলবাড়ীয়ার ঐতিহ্যবাহী লাল চিনি

উপজেলা প্রতিনিধি, ফুলবাড়িয়া (ময়মনসিংহ)
প্রকাশ : ২৭ আগস্ট ২০২৫, ১৪: ৫৭

আখের রস থেকে হাতে তৈরি ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়ার ঐতিহ্যবাহী লাল চিনি এবার পেল আন্তর্জাতিক পরিচিতি। প্রায় আড়াই শত বছরের পুরোনো এই পণ্যকে ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের মর্যাদা দিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ফুলবাড়ীয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ ওয়েবসাইট চেক করে এ খবর নিশ্চিত করেন।

বিজ্ঞাপন

তিনি জানান, জিআই নিবন্ধনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে এবং সরকার নির্ধারিত ফি জমা দেওয়ার পর প্রশাসন দ্রুত আনুষ্ঠানিক সনদ সংগ্রহের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তিনি বলেন, “এই স্বীকৃতি শুধু অর্থনীতিতেই নয়, দেশের বাইরেও নতুন বাজার সৃষ্টি করবে। কৃষকেরা এখন আরও বেশি করে লাল চিনি উৎপাদনে উৎসাহিত হবেন।”

ফুলবাড়ীয়ার বাক্তা, কালাদহ, রাধাকানাই, এনায়েতপুর এবং রঘুনাথপুর—এই পাঁচ ইউনিয়নের প্রায় ২০টি গ্রামের কৃষকেরা বংশপরম্পরায় এই চিনি তৈরি করে আসছেন। কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে এই উপজেলায় ৬৫০ হেক্টর জমিতে আখ চাষ হয়, যার ৯০ শতাংশ দেশি জাত। ২০২৫ সালে এখানকার কৃষকেরা প্রায় ১০৮ কোটি টাকার লাল চিনি বিক্রি করেছেন, যার প্রতি মণের গড় দাম ছিল ৮ হাজার টাকা।

এই চিনি তৈরির পুরো প্রক্রিয়াটিই হাতে করা। জমি থেকে আখ সংগ্রহ করে মাড়াই কলের সাহায্যে রস বের করা হয়। এরপর সেই রস লোহার কড়াইয়ে ধাপে ধাপে জ্বাল দিয়ে ঘন করা হয়। সবশেষে কাঠের মুগুর দিয়ে বারবার নাড়াচাড়া করে তৈরি হয় বাদামি রঙের মিহি দানার চিনি। এটি দেখতে কখনও গুঁড়োর মতো হয়, আবার কখনও ছোট ছোট গুটির আকারে থাকে। প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি হওয়ায় এই চিনির স্বাদ ও সুগন্ধ অনন্য, কারণ এতে আখের কাঁচা রসের ফ্লেভার বজায় থাকে।

এই লাল চিনি সম্পূর্ণ অর্গানিক এবং এতে কোনো ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার করা হয় না। এজন্য শরবত, পিঠা, মুড়ির মোয়া, পায়েস, এবং বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি তৈরিতে এই চিনির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। স্থানীয় অনেক ক্রেতা এখন অনলাইনেও বিদেশে এই চিনি পাঠাচ্ছেন।

রাধাকানাই ইউনিয়নের পলাশতলী গ্রামের কৃষক ইউসুফ আলী বলেন, “বাপ-দাদার আমল থেকেই আমরা লাল চিনি তৈরি করি। কোনো ওষুধ দিই না। এই স্বীকৃতি পেয়ে আমরা খুব আনন্দিত।”

স্থানীয় পাইকার আব্দুল মজিদ মনে করেন, জিআই স্বীকৃতি পাওয়ায় চিনির চাহিদা আরও বাড়বে এবং ব্যবসা আরও বিস্তৃত হবে।

ফুলবাড়ীয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আরিফুর ইসলাম জানান, জিআই স্বীকৃতি পাওয়ার ফলে শুধু কৃষকদের জীবনেই পরিবর্তন আসবে না, এটি পুরো অঞ্চলের কৃষি অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত