১৩ জনকে হত্যার অভিযোগ

কসাই-খ্যাত এসপি হামিদুলকে রংপুর রেঞ্জে পদায়ন

স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া
প্রকাশ : ০৭ আগস্ট ২০২৫, ১৯: ৪০
আপডেট : ০৭ আগস্ট ২০২৫, ২০: ১৭

ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের একান্ত অনুগত ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা হামিদুল আলম মিলন। দলীয় সন্ত্রাসীর মতো সেবা দিয়েছেন পুরো আওয়ামী আমলে। শুধু ২০১৩ সালেই তার নেতৃত্বে ১৩ নিরীহ আন্দোলনকারীকে হত্যার অভিযোগ আছে। অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করে হয়েছিলেন ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা)। দেড় বছর পর তাকে আবার উচ্চ পদে পদায়ন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।

গত বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আদেশে ৬২ নম্বর সিরিয়ালে রংপুর রেঞ্জে অতিরিক্ত ডিআইজি পদে সংযুক্ত করা হয় ‘কসাই এসপি’ খ্যাত এই কর্মকর্তাকে।

বিজ্ঞাপন

মিলনের খুন-খারাবি ও অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে চলতি বছর সংবাদ প্রকাশ করে আমার দেশ। গত ৩ মার্চ ‘অতিরিক্ত ডিআইজি মিলনের নেতৃত্বে ১৩ নেতাকর্মী হত্যা’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পরও টনক নড়েনি প্রশাসনের।

জানা গেছে, চারদলীয় জোট সরকারের আমলে বিসিএস দিয়ে পুলিশে ঢুকে সারদায় ট্রেনিং করার পর আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্টতায় আলোচিত ডিবি হারুনের সঙ্গে তার এই ব্যাচমেটেরও চাকরি চলে যায়।

এর পর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে তাদের ফিরিয়ে আনে। ২০১৩ সালে তিনি জয়পুরহাটের পুলিশ সুপার (এসপি) ছিলেন। ওই সময় আল্লামা দেলওয়ার হোসেন সাঈদির মুক্তির দাবিতে আন্দোলন করায় তার নেতৃত্বে ১৩ নিরীহ বিক্ষোভকারীকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

এর পর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। দাপটের সঙ্গে তিনি ফ্যাসিবাদী আমলে থেকেছেন পুলিশ সুপার হিসেবে দিনাজপুর, মেহেরপুর ও চট্রগ্রামে। ফ্যাসিস্টের অনুগত হিসেবে ভূষিত হন বিপিএম, পিপিএম পদবিতে। ২০২৩ সালে অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়।

২০২৪ সালে সর্বশেষ ফ্যাসিস্টের শেষ নির্বাচনে বগুড়ার সারিয়াকান্দি সোনাতলা আসন থেকে তার স্ত্রী শাহাজাদী লিপি ব্যাপক অর্থ খরচ করে আওয়ামী লীগের পক্ষে নির্বাচনী প্রচার চালান। নৌকা প্রতীক না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন তিনি। তার পক্ষে সরকারি চাকরিরত অবস্থায়, সরকারি গাড়ি ব্যবহার এবং প্রভাব বিস্তার করার কারণে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে ওএসডি করা হয় মিলনকে।

মিলনকে নতুন করে পদায়ন করায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে তার নিজ এলাকা, রংপুর ও জয়পুরহাটের বিভিন্ন মহলে। স্থানীয় বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা বলছেন, ‘কসাই এসপি’ খ্যাত এই পুলিশ কর্মকর্তার কারাগারে থাকার কথা ছিল।

বহু মানুষকে খুন-গুম ও নির্যাতনের দায়ে তাকে শাস্তি না দিয়ে উল্টো পুরস্কৃত করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। তাকে উচ্চ পদে পদায়ন করে মূলত তার হাতে আবার খুন-খারাবির লাইসেন্স তুলে দেওয়া হয়েছে।

কীভাবে আবার পদায়ন পেলেন তা জানতে তার মোবাইল ফোনে একাধিক বার কল দিলেও রিসিভ করেননি তিনি। তবে অন্য একটি মাধ্যমে জানা যায়, তিনি অতিরিক্ত ডিআইজি পদে যোগদানের পর বক্তব্য দেবেন।

জামায়াতের জয়পুরহাট জেলা আমির ডা. ফজলুর রহমান সাঈদ বলেন, ‘স্বৈরাচার হাসিনার অনুগত তৎকালীন এসপি মিলন। তিনি আওয়ামী লীগের দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বিএনপি-জামায়াতের বহু নেতাকর্মীকে হত্যা করেছেন, গ্রেপ্তার করে জুলুম-নির্যাতন চালিয়েছেন। তাকে শাস্তি না দিয়ে পদায়ন করায় আমরা বিস্মিত।’

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত