হোয়াটসঅ্যাপ ক্লোন করে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে অর্থ

মঈন উদ্দিন, রাজশাহী
প্রকাশ : ২৪ আগস্ট ২০২৫, ০৯: ৪৫

রাজশাহীতে পুলিশ পরিচয়ে অভিনব পন্থায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে সাইবার প্রতারণা করছে একটি চক্র। এ ঘটনায় অনেকেই নীরব থাকলেও কেউ কেউ আইনের আশ্রয় নিচ্ছেন। পুলিশ বলছে, এ চক্রের সন্ধানে এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট।

গত ১৮ জুলাই বিকাল ৪টায় হঠাৎ রাজশাহী এডিটরস ফোরামের সভাপতি ও স্থানীয় পত্রিকা দৈনিক সোনালী সংবাদের সম্পাদক লিয়াকত আলীর ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনের হোয়াটসঅ্যাপে পুলিশ পরিচয়ে ফোন দেন এক ব্যক্তি।

বিজ্ঞাপন

ওই ব্যক্তি লিয়াকত আলীকে বলেন, আপনার মোবাইল নম্বর দিয়ে খোলা হোয়াটসঅ্যাপের একটি গ্রুপে পুলিশ সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করা হচ্ছে, যা পুলিশ শনাক্ত করেছে। তাতে আপনাকে আইনি ঝামেলায় পড়তে হবে।

এজন্য তারা একটি লিংক দেয়, সেই লিংকে তাদের নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করতে বলে। সে সঙ্গে তার মোবাইল নম্বরটি ঘণ্টাখানেকের জন্য বন্ধ রাখতে অনুরোধ করেন। আর এই সুযোগে প্রতারক চক্রটি লিয়াকত আলীর হোয়াটসঅ্যাপ ক্লোন করে তার কনটাক্ট লিস্টে থাকা ব্যক্তিদের কাছে ০১৮৩৩৪২৫০১৭ নম্বরের বিকাশে ১৫ হাজার টাকা জরুরি ভিত্তিতে দেওয়ার অনুরোধ জানায়।

এ ঘটনায় লিয়াকত আলী রাজশাহীর বোয়ালিয়া মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। শুধু লিয়াকত আলীই নন, ১৩ আগস্ট আইনজীবী শফিকুল ইসলামকে পুলিশের এসআই জাহাঙ্গীর পরিচয়ে একই পদ্ধতিতে তার হোয়াটসঅ্যাপ ক্লোন করে পরিচিতজনদের কাছে টাকা চেয়ে বার্তা দেন। তিনিও রাজপাড়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন।

রাজশাহী জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাজমুলতান টুটুল তার ব্যক্তিগত ফেসবুকে একটি স্ক্রিনশট দিয়ে প্রতারণার কৌশল তুলে ধরেন। ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, নিম্নে স্ক্রিনশটটি এসআই মাহফুজুল আলম নামে আমার ০১৭১১৪৮২৪১৬ এই নম্বরে ০১৬০৫৮১১৪১৪ নম্বর থেকে ফোন দিয়ে বলেন, আপনার নম্বরটি পুলিশের সার্ভারের সঙ্গে অ্যাড হয়েছে এবং বলে, আপনাকে ভিডিও কল দিচ্ছি। পুলিশের সার্ভার থেকে কীভাবে বেরিয়ে আসবেন দেখাচ্ছি। কিছুক্ষণ পর বুঝতে পারলাম আমার নম্বরটি হ্যাক হয়েছে এবং আমার নম্বর থেকে বিভিন্নজনের কাছে টাকা চাওয়া হচ্ছে। দয়া করে কেউ টাকা দেবেন না। এ বিষয়ে পুলিশ প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি এবং দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।

এ ধরনের প্রতারণায় শুধু সাংবাদিক, আইনজীবী বা রাজনীতিবিদ নন, প্রতারক চক্রটি রুয়েট শিক্ষক, চিকিৎসকদেরও টার্গেট করে প্রতারণা করছে। তাদের প্রতারণার ফাঁদে পড়ে অনেকেই টাকা দিয়ে দিচ্ছেন।

এ ব্যাপারে সমাজকর্মী ও বিশ্লেষক আনোয়ার হোসেন বলেন, রাজশাহীতে সাইবার হ্যাকিংচক্রের কার্যক্রম দিন দিন বেড়েই চলেছে, যা সাধারণ মানুষের জন্য উদ্বেগজনক। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যক্তিগত সচেতনতা বৃদ্ধি এবং প্রশাসনিক কঠোরতা প্রয়োজন। সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টাও অপরিহার্য।

রাজশাহী মহানগরীর শিরোইল এলাকার ইমরুল কায়েস জানান, তার পরিচিত এক ব্যক্তির কাছে একই কায়দায় পুলিশ পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করা হয়েছে। হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে বিকাশের মাধ্যমে অর্থ।

মিয়াপাড়া এলাকার জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, তার শ্বশুরের সঙ্গেও একই কায়দায় প্রতারণা করার চেষ্টা করা হয়। তবে তিনি সচেতন থাকায় চক্রটি সফল হয়নি। এজন্য পুলিশকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখতে হবে। প্রতারক চক্রটিকে আইনের আওতায় আনতে হবে।

এ চক্রের প্রতারণা থেকে রক্ষা পেতে পুলিশের পক্ষ থেকে সাধারণ মানুষকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে বেশকিছু নির্দেশনা মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সেগুলো হলোÑমোবাইল ফোনে অপরিচিত লিংক বা ফাইল ডাউনলোড থেকে বিরত থাকা, হোয়াটসঅ্যাপ ও অন্যান্য অ্যাপে টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন চালু রাখা ও জাতীয় পরিচয়পত্র, ব্যাংক তথ্য ও ব্যক্তিগত ছবি অনলাইনে শেয়ার করা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপকমিশনার গাজিউর রহমান, পিপিএম বলেন, সাইবার ক্রাইম ইউনিট আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সাইবার অপরাধ দমনে কাজ করে যাচ্ছে। পুলিশ পরিচয় দিয়ে প্রতারণার ঘটনাগুলো শনাক্তে এরই মধ্যে তারা কাজ শুরু করেছেন। এক্ষেত্রে অবশ্যই হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীদের সচেতন হতে হবে। মনে রাখতে হবে, কোনোভাবেই ব্যক্তিগত কোনো তথ্য বা পিন কাউকে দেওয়া যাবে না।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত