কক্সবাজারের ঈদগাঁওয়ে বিগত এক মাসে শতাধিক পশুর অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। আকস্মিক এ মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত না হলেও অভিযোগ উঠছে—অবৈধভাবে গড়ে ওঠা কারখানার তৈজসপত্রই এর কারণ হতে পারে।
সরেজমিনে জানা যায়, ঈদগাঁও উপজেলার সদর ইউনিয়ন ঈদগাঁও’র ৫ নং ওয়ার্ড কালির ছড়া শিয়া পাড়া গ্রামের বাসিন্দাদের শতাধিক গরু, মহিষ ও ছাগলের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে বিগত এক মাসে। এ মৃত্যুর মিছিল অব্যাহত রয়েছে। আতঙ্কিত পশু মালিকদের পাশাপাশি হুমকির মুখে পড়েছে জনস্বাস্থ্যও।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, বিগত দুই মাসাধিককাল আগে বন এলাকা সংলগ্ন রমিজ আহমদের পুরাতন বাগান এলাকায় কতিপয় প্রভাবশালী একটি অবৈধ ব্যাটারি কারখানা গড়ে তোলে। যার গলিত তরল তৈজস পদার্থ বন এলাকায় পশু চারণে যাওয়া-আসার রাস্তায় জমে থাকে। এতে অবুঝ পিপাসার্ত পশুরা হয় তা পান করে, নয়তো গন্ধ নেয়। পরবর্তীতে এসব পশু ক্রমেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে ছটফট করতে করতে পশুগুলো মারা যায়। পশু মালিক ও স্থানীয় বাসিন্দারা এর প্রতিবাদ করলেও প্রভাবশালী অবৈধ কারখানা চক্রটি তা কর্ণপাত না করে উল্টো তাদের হুমকি দেয় বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।
ক্ষতিগ্রস্ত গরু মালিক লেড়ু জানান, তাদের তিন ভাইয়ের দুটি গরু মারা গেছে এবং আরো ছয়টি গরু অসুস্থ হওয়ায় নামমাত্র দামে বিক্রিতে বাধ্য হয়েছেন।
তারা আরো জানান, ইতিমধ্যে উক্ত এলাকার শতাধিক পশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে এবং এখনো অসুস্থ অবস্থায় রয়েছে অনেক।
মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) মারা যাওয়া গরু মালিক আলী হোসেনও একই ঘটনা জানান।
অপর গরু মালিক মজুম তাহের জানান, তার গরুরও একইভাবে মৃত্যু হয়েছে। পুরো এলাকা জুড়ে এ আতঙ্ক বিরাজ করছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মাহমুদুল হাসান মিনার একই অভিযোগ করে বলেন, তিনি ইতিপূর্বে স্থানীয় প্রশাসনকে বিষয়টি জানালেও এখনো কোনো ব্যবস্থা নেননি এবং জনৈক রেজাউল করিম সিকদার বহিরাগতদের নিয়ে এ অবৈধ কারখানাটি করেছেন।
অভিযোগ ওঠা রেজাউল করিম সিকদারের মোবাইলে কল দিলে এক মহিলা ‘রং নাম্বার’ বলে কেটে দিয়ে পরবর্তীতে কল প্রবেশ না করার মতো করে দেন। তবে বিভিন্ন মাধ্যমে নাম্বারটি তার বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এ বিষয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এ. এম. খালেকুজ্জামান-এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনিও বিষয়টি গুরুতর উল্লেখ করে বলেন, যেহেতু এখনো অত্র উপজেলায় প্রাণিসম্পদ বিষয়ক পৃথক কার্যক্রম শুরু হয়নি, সেহেতু জেলা অফিসই এর তদারকিতে আছেন এবং তিনি ঢাকায় প্রশিক্ষণে রয়েছেন বিধায় জরুরি ভিত্তিতে উক্ত এলাকায় তার একজন প্রতিনিধি পাঠাবেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মীর কামরুজ্জামান কবিরের সরকারি মোবাইল নম্বরে বারবার কল দিলেও রিসিভ না করায় হোয়াটসঅ্যাপে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও কোনো সাড়া মেলেনি।
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসীর দাবি, অবিলম্বে এ অবৈধ কারখানা বন্ধ করে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে ক্ষতিগ্রস্ত পশু মালিকদের ক্ষতিপূরণ দিতে প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

