মাছের আড়তের শ্রমিক বাবার ছেলে এখন ম্যাজিস্ট্রেট

উপজেলা প্রতিনিধি, পুঠিয়া (রাজশাহী)
প্রকাশ : ২১ অক্টোবর ২০২৫, ১৫: ০৩

রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার গাঁওপাড়া গ্রামের আব্দুস সাত্তার পেশায় একজন মাছের আড়ৎ শ্রমিক। অন্যের মাছ বাজারজাত করণে কাজ করে, রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে, তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে পরিবারের হাল ধরেছেন তিনি। আর সেই শ্রমের সফলতার ছেলে মো. শাহরিয়ার হোসেন এখন একজন গর্বিত বিসিএস ক্যাডার। ৪৩তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে দেশের গর্ব হয়ে উঠেছেন। ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে এলাকায় আনন্দের জোয়ার বইয়ে দিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

বর্তমানে তিনি নড়াইল জেলায় সহকারী কমিশনার হিসেবে কর্মরত। বর্তমানে বুনিয়াদি প্রশিক্ষণের জন্য ঢাকার সাভারে অবস্থান করছেন। তার এই অর্জনের পেছনে লুকিয়ে আছে এক সংগ্রামী বাবার অব্যাহত পরিশ্রম ও পরিবারের ত্যাগ।

অভাব-অনটনের মাঝেও পিতা আব্দুস সাত্তার রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে অন্যের মাছ বাজারজাত করণের কাজ করে ছেলেকে গড়ে তুলেছেন। শাহরিয়ার সারা বাংলাদেশে ২৩২তম স্থান অর্জন করে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে চূড়ান্তভাবে সুপারিশপ্রাপ্ত হন। তার এই অর্জনে গাঁওপাড়াসহ পুরো এলাকায় বইছে আনন্দের বন্যা। শিক্ষক, প্রতিবেশী ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা তার সাফল্যে গর্বিত ও আশাবাদী।

শাহরিয়ারের বাবা আব্দুস সাত্তার জানান, আমি ৩৫ বছর ধরে পুঠিয়ার আমিনুল ইসলাম মন্ডলের মাছের আড়তে খেটে খেটে আমার ছেলেকে পড়াশোনা করিয়েছি। রোদে পুড়েছি, বৃষ্টিতে ভিজে কাজ করেছি, যেন ছেলেটা মানুষ হয়। আমি খুব কষ্ট করে ছেলেকে বড় করেছি। আজ সে ম্যাজিস্ট্রেট হয়েছে, আমি চাই সে দেশ ও মানুষের জন্য কাজ করুক।

তার মা ফেরদৌস আরা বেগম বলেন, আমার ছেলে ম্যাজিস্ট্রেট হয়েছে, আমরা খুব খুশি। সামান্য সামান্য করে টাকা দিয়ে তার পড়ালেখা চালিয়েছি। ছেলেকে পড়াতে গিয়ে প্রতিমাসে ১-২ হাজার টাকা করেও পাঠিয়েছি। অনেক কষ্ট করেছি। আজ সে সফল, আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করি। আপনারা সবাই আমার ছেলের জন্য দোয়া করবেন।

এ বিষয়ে গাঁওপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা রুবাইয়া সুলতানা বলেন, একজন ছাত্র সফলতা অর্জন করলে শিক্ষক সমাজের কি যে আনন্দ হয় তা আর বোঝানোর ভাষা থাকে না। শাহরিয়ার ম্যাজিস্ট্রেট হয়েছে এই কথা শুনে অনেক আনন্দিত হয়েছি, আবেগাপ্লুত হয়েছি। দোয়া করি সে যেন আরো সফলতা অর্জন করে।

এ বিষয়ে শাহরিয়ারের শিক্ষিকা আঞ্জুমান আরা তিনি বলেন, পরের বাচ্চাদেরকে পড়াশুনা করে তারা সফলতা অর্জন করলে, শিক্ষক হিসেবে আমাদের খুবই ভালো লাগে। ছাত্রদের সফলতা আমাদের শিক্ষকতার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। শাহরিয়ারের জন্য অনেক দোয়া রইল। শাহরিয়ারের এই সাফল্যে শুধু পরিবার নয়, পুরো গ্রাম আজ গর্বিত। তার মত একজন কর্মঠ, মেধাবী ও মানবিক ম্যাজিস্ট্রেট দেশ ও জাতির জন্য এক আশার আলো।দোয়া করি সে যেন আরো অনেক বড় কিছু হয়।

শাহরিয়ার জানান, এই অর্জন আমার বাবার কঠোর পরিশ্রম ও আমার শিক্ষকদের দোয়ার ফল। আমি চাই দেশের জন্য, মানুষের জন্য কাজ করতে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত