জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত কুড়িগ্রামের দুই সৈনিকের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। রোববার বিকালে জানাজা নামাজ শেষে নিজ নিজ গ্রামের বাড়িতে তাদেরকে কবরস্থ করা হয়।
এর আগে রোববার দুপুর আড়াইটার দিকে হেলিকপ্টার যোগে নিহত দুই শান্তিরক্ষী সেনা সদস্য মমিনুল ইসলাম (৩৮) এবং শান্ত মন্ডলের (২৬) লাশ কুড়িগ্রাম পৌঁছায়।
লাশবাহী হেলিকপ্টারটি জেলার উলিপুর উপজেলার হেলিপ্যাডে অবতরণ করে। পরে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধায়নে সেখান থেকে নিহত দুই সেনা সদস্যকে নিজ নিজ বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।
শহীদ শান্ত মন্ডলের (২৬) বাড়ি কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার সদর ইউনিয়নের সাটমাধাই ডারারপাড় গ্রামে। তার বাবা সাবেক সেনা সদস্য (মৃত) নুর ইসলাম মন্ডল এবং মা সাহেরা বেগম। আরেক শান্তিরক্ষী মমিনুল ইসলামের (৩৮) বাড়ি জেলার উলিপুর উপজেলার পান্ডুল ইউনিয়নের পারুলেরপাড় গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের আব্দুল করিমের ছেলে।
বেলা সাড়ে ৩ টার দিকে পান্ডুলের পারুল গ্রামে মমিনুল ইসলামের জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। তার বাবা, ভাই, নিকটাত্মীয় ও গ্রামবাসী ছড়াও স্থানীয় প্রশাসনের প্রতিনিধি জানাজায় অংশ নেন। তার আগে সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি দল নিহত শান্তিরক্ষীকে গার্ড অব অনার প্রদান করেন। পরে বাড়ির পাশে পারিবারিক কবরস্থানে মমিনুল ইসলামকে দাফন করা হয়।
এই শান্তিরক্ষী বাবা-মা ও ভাই ছাড়াও স্ত্রী ও দুই মেয়ে রেখে গেছেন। বড় মেয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। ছোট মেয়ের বয়স ৪ বছর। নিহত হওয়ার মাত্র ৩৩ দিন আগে মমিনুল সুদানে গিয়েছিলেন বলে পরিবার সূত্রে জানা গেছে।
মমিনুলের বাবা আব্দুল করিম বলেন, ‘আমার ছেলে অনেক ভালো মানুষ ছিলো। এলাকার সবাই তাকে ভালোবাসতো। আমার বাবা দেশের জন্য জীবন দিয়েছে, আমার বাবা শহীদ হয়েছে। আপনারা সবাই আমার বাবার জন্য দোয়া করবেন।’
অপর দিকে নিহত শান্তিরক্ষী শান্ত মন্ডলের জানাজা নামাজ বিকাল সাড়ে ৪টায় তার নিজ গ্রামের বাড়িতে অনুষ্ঠিত হয়। বড় ভাই সেনা সদস্য সোহাগ মন্ডলসহ নিকটাত্মীয় ও এলাকাবাসী জানাজা নামাজে অংশ নেন। সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি দল নিহত শান্তিরক্ষীকে গার্ড অব অনার প্রদান করেন। পরে নিজ বাড়ির আঙ্গিনায় বাবার কবরের পাশে চির নিদ্রায় শায়িত হন তরুণ এই সেনা সদস্য।
শহীদ শান্তর বড় ভাই সোহাগ মন্ডল জানান,‘ শান্ত ২০১৮ সালে সেনা বাহিনীতে সৈনিক পদে যোগদান করেন। তিনি সর্বশেষ বগুড়া ক্যান্টনমেন্টে সৈনিক পদে ছিলেন। গত ৭ নভেম্বর তিনি শান্তিরক্ষী মিশনে সুদানে যান। গত এক বছর আগে শান্ত বিয়ে করেন। তার স্ত্রী বর্তমানে ৫ মাসের অন্তসত্ত্বা।’
উল্লেখ্য, আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) জানায়, সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের আওতাধীন কাদুগলি লজিস্টিক বেসে শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) স্থানীয় সময় আনুমানিক দুপুর ৩টা ৪০ মিনিট থেকে ৩টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠী কর্তৃক ড্রোন হামলা পরিচালনা করা হয়। উক্ত হামলায় দায়িত্বরত ৬ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী শহীদ হন এবং ৮ জন শান্তিরক্ষী আহত হন।
আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

