৪ বছর পার হলেও স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে পারেনি কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

আব্দুল্লাহ আল মুজাহিদ, জেলা প্রতিনিধি (কুড়িগ্রাম)
প্রকাশ : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৮: ০৫

২০২১ সালের (২২ সেপ্টেম্বর) আজকের এই দিনে যাত্রা শুরু করে কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। এ উপলক্ষে সকাল ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. রাসেদুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি আনন্দ র‍্যালি বের করা হয়।

র‍্যালিটি শহরের ভকেশনাল মোড় প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এসে শেষ হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার ৪ বছর পার হলেও এখন পর্যন্ত যেতে পারেনি স্থায়ী ক্যাম্পাসে। একটি ভাড়া বাসায় চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম। এতে করে ব্যাঘাত ঘটছে পড়ালেখা ও গবেষণামূলক কাজে।

বিজ্ঞাপন

ছাত্র-ছাত্রীদের দাবি যেনো দ্রুত স্থায়ী ক্যাম্পাসের ব্যবস্থা করা হয়।

কুড়িগ্রাম-চিলমারী রাস্তার পাশে অবস্থিত ভবনটি দেখে বোঝার উপায় নেই এটি একটি পাব্লিক বিশ্ববিদ্যালয়। দেখে মনে হয় কোনো কোচিং সেন্টার। তবে সাইনবোর্ড দেখে পরিচয় মেলে কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের। শহরের টেক্সটাইল মোড়ে ভাড়া ভবনে ২০২৩ সাল থেকে এভাবেই চলছে কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম।

স্থায়ী কোনো শিক্ষক না থাকায় অতিথি শিক্ষক দিয়ে চলছে পাঠদান। অধিকাংশ সময় অনলাইনেই নেওয়া হচ্ছে ক্লাস। এতে করে প্রকৃত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীরা। ব্যবহারিক ক্লাস করারও নেই পর্যাপ্ত সরঞ্জামাদি। যতটুকু আছে তা দিয়েই কোনোমতে চালিয়ে নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন প্রথম ব্যাচে ভর্তি হওয়া ছাত্র-ছাত্রীরা।

প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়া ছাত্র নাইম হাসান, মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের যে ইন্সট্রুমেন্ট গুলো আছে এগুলো যদিও অপর্যাপ্ত তবুও আমাদের টিচাররা চেষ্টা করছেন ইন্সট্রুমেন্ট গুলো দিয়ে যথাসম্ভব কাজ চালিয়ে নেয়ার জন্য। তবে এর অভাব আমরা অবশ্যই বোধ করছি। এখন এগুলো যতো দ্রুত সম্ভব সমাধান করতে উর্ধ্বতন কর্মকর্তা যারা আছেন তাদের সহায়তা প্রয়োজন।

শিক্ষার্থী দৃষ্টি রায় বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়টি নতুন। আমাদের কোনো স্থায়ী ক্যাম্পাস নেই এবং আমাদের প্রাক্টিকেল করার জন্য যথেষ্ট পরিমান রিসোর্স প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করা হয়নি। সরকারের কাছ থেকে আমরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য যথেষ্ট রিসোর্স চাচ্ছি।

জান্নাতুল ফেরদৌস নওরিস, অর্পিতা পাল বলেন, আমাদের কোনো স্থায়ী ক্যাম্পাস নেই, স্থায়ী কোনো হল নেই। বাইরে থাকার কারণে নিরাপত্তার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। এখানে খেলার কোনো মাঠ নাই, বিনোদনের কোনো ব্যবস্থা নাই। হলের যে প্রকৃত মজা সেটা থেকে আমরা বঞ্চিত। তবে আমাদের চাওয়া, আমরা যে অসুবিধা গুলো ফেস করতেছি… জুনিয়ির যারা আসবে তারা যাতে এই অসুবিধা গুলো ফেস না করে তার জন্য আমাদের স্থায়ী ক্যাম্পাস দরকার।

কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলহাজ্ব সোহেল হোসনাইন কায়কোবাদ বলেন, কুড়িগ্রামের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় “কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়” ৪ বছর পার হলেও এখন পর্যন্ত স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে পারেনি এটা বড়ই হতাশাজনক। কুড়িগ্রাম তথা সারা দেশের শিক্ষার উন্নয়নে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত জায়গায় দ্রুত প্রয়োজনীয় জনবল ও অবকাঠামো নির্মাণ করে পাঠদানের ব্যবস্থা করার জন্য সংশ্লিষ্ট মহলের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।

স্থায়ী ক্যাম্পাসের অবকাঠামোর ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের লিমিটেশনের কথা জানিয়ে কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. রাশেদুল ইসলাম বলেন, গেস্ট টিচার দিয়ে ক্লাস নেওয়ায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় জনবলেরও অভাব রয়েছে। তবে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। আশা করছি আগামী ছয় মাসের মধ্যে আমাদের ফিজিব্লিটি প্রজেক্ট সম্পন্ন হলে ডিপিপি পেয়ে যাবো এবং স্থায়ী ক্যাম্পাসের অবকাঠামো শুরু করতে পারবো।

উল্লেখ্য, ২০২৩-২০২৪ সেশনে কৃষি অনুষদে ৪০ জন ও মৎস্য অনুষদে ৪০ জন ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির মাধ্যমে কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়। স্থায়ী ক্যাম্পাস হিসেবে নির্বাচন করা হয় কুড়িগ্রামের শহরের অদূরে নালিয়ার দোলা জায়গাটিকে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত