আমার দেশ জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পেপার

কোচাশহরে শীতবস্ত্র তৈরিতে ব্যস্ত ৮০ হাজার কারিগর

টুকু প্রধান, গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা)

কোচাশহরে শীতবস্ত্র তৈরিতে ব্যস্ত ৮০ হাজার কারিগর

শীতের আগমনে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের কোচাশহরে জমে উঠেছে হোসিয়ারি শিল্পের বিভিন্ন ধরনের শীতের কাপড়ের কেনাবেচা। এখানে শীতবস্ত্র তৈরিতে তিন হাজার কারখানায় কাজ করছেন ৮০ হাজার শ্রমিক।

হোসিয়ারি কারখানার মালিকরা সারা বছর ধরে তাদের বানানো শীতবস্ত্র নভেম্বরের শুরু থেকে ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই বিক্রি করে থাকে। কিন্তু বৈশ্বিক আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে এ বছর শীত আসতে বিলম্ব হওয়ায় বর্তমানে এ পল্লিতে পাইকারি ক্রেতাদের খুব একটা ভিড় নেই। তবে ক্রেতাদের চাহিদা বিবেচনায় এখানকার তৈরি করা কার্ডিগান, সোয়েটার, মোজা, জাম্পার, মাফলারসহ বিভিন্ন রকমের শীতবস্ত্রের প্রচুর মজুত রয়েছে। শীতের তীব্রতা একটু বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই এসব কাপড়ের চাহিদা বাড়বে। তাই শীতবস্ত্র তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন হোসিয়ারি পল্লির হাজার হাজার শ্রমিক। প্রতি বছর এ এলাকার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা বাস ও ট্রাকযোগে এখান থেকে এসব শীতবস্ত্র কিনে নিয়ে যান। তবে কোচাশহর থেকে নয়ারহাটে যাতায়াতের রাস্তাটি সরু হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে দূর-দূরান্ত থেকে যানবাহন নিয়ে আসা পাইকারদের। এ মৌসুমে শীতের তীব্রতা বাড়লে এখানকার হোসিয়ারি শিল্প থেকে প্রায় ৭০০ কোটি টাকার তৈরি শীতবস্ত্র বিক্রি হবে বলে হোসিয়ারি ব্যবসায়ীরা জানান।

বিজ্ঞাপন

গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কোচাশহর ইউনিয়নের নয়ার হাটসহ আশপাশের বিভিন্ন গ্রামে শীতের পোশাক তৈরির জন্য প্রায় চার যুগ আগে ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে উঠেছিল হাতে গোনা মাত্র কয়েকটি হোসিয়ারি কারখানা। এ বছরেও শীতের আগমনের আগেই সরগরম হয়ে উঠেছে হোসিয়ারি পল্লি এলাকাটি। বর্তমানে অত্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করছেন কারখানার শ্রমিকরা।

প্রতিটি কারখানায় পুরুষের পাশাপাশি কাজ করছেন নারী শ্রমিকরা। তারা দিন-রাত পরিশ্রম করে তৈরি করছেন আধুনিক ডিজাইনের মোজা, মাফলার, সোয়েটার, জাম্পার, কার্ডিগান, কানটুপিসহ নানা ধরনের শীতের পোশাক। অত্যাধুনিক ডিজাইনের সব ধরনের শীতবস্ত্র তৈরিতে অগ্রগামী ভূমিকা রাখছে এখানে গড়ে ওঠা কারখানাগুলো। শ্রমিকদের নিপুণ হাতে তৈরি করা এসব রকমারি পোশাক দেশের বিভিন্ন জেলায় গরম কাপড়ের চাহিদা মেটাচ্ছে। শীতের আমেজ বইতে শুরু করায় বাজারে পাইকারি ক্রেতা আসতে শুরু করেছেন। উপজেলার কোচাশহর ইউনিয়নের পেঁপুলিয়া, বনগ্রাম, কানাইপাড়া, রতনপুর, শক্তিপুর, ছয়ঘরিয়া গ্রামসহ পার্শ্ববর্তী চারদিকের অর্ধশতাধিক গ্রামে এ শিল্পের বিস্তার লাভ করেছে। গ্রামগুলোর প্রতিটি বাড়িতে ছোট-বড় প্রায় তিন হাজার কারখানা গড়ে উঠেছে, যেখানে নারী-পুরুষসহ প্রতিদিন ৮০ হাজার শ্রমিক কাজ করছেন। হোসিয়ারি পল্লির তৈরি গরম কাপড় বাজারজাত করার জন্য নয়ারহাটে অবস্থিত বিপণিবিতানগুলো সাজিয়ে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

নয়ারহাটের হোসিয়ারি ব্যবসায়ী মোফাখ্খর হোসেন ইকবাল বলেন, এখানে চলাচলের রাস্তার বেহাল দশার কারণে বাইরে থেকে যানবাহন নিয়ে আসা ক্রেতারা অনেকটা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। কোচাশহর বন্দর থেকে নয়ারহাট পর্যন্ত সড়কটি অত্যন্ত সরু হওয়ার কারণে মালামাল বহনকারী যানবাহনগুলোকে চলাচলে প্রতিনিয়তই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তাই এখানকার হোসিয়ারি ব্যবসার প্রসার করার জন্য সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা খুবই জরুরি।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশন (বিসিক) গাইবান্ধার সহকারী ব্যবস্থাপক আব্দুল্লাহ আল ফেরদৌস জানান, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কোচাশহর এলাকায় গড়ে ওঠা এই শিল্পপল্লির কারখানায় উৎপাদিত শীতবস্ত্র সারা দেশে সুনাম অর্জন করেছে। তাই জরুরি ভিত্তিতে সেখানকার যোগাযোগব্যবস্থার আরো উন্নয়নসহ বিদ্যুৎ সংকট নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলেও তিনি জানান।

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর

খুঁজুন