আমার দেশ জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পেপার

সুরমা-কুশিয়ারার মরণ দশা, হুমকিতে জকিগঞ্জের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

এখলাছুর রহমান, জকিগঞ্জ (সিলেট)

সুরমা-কুশিয়ারার মরণ দশা, হুমকিতে জকিগঞ্জের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য
জকিগঞ্জ উপজেলার শাহগলী বাজারসংলগ্ন সুরমা নদীর নাব্য সংকট ও শুষ্ক মৌসুমে পানিশূন্যতা। আমার দেশ

সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত সুরমা ও কুশিয়ারা নদী দিন দিন নাব্য সংকটে মরণ দশায় পরিণত হচ্ছে। এ দুটি নদীর নাব্যতা রক্ষায় নেওয়া হচ্ছে না কোনো উদ্যোগ। এ দুই নদীতে এখন শুষ্ক মৌসুমে পানিপ্রবাহ থাকে না। অনেক জায়গায় জেগে উঠছে চর, বন্ধ হয়ে যাচ্ছে নৌ চলাচল। গত কয়েক বছর ধরে শুষ্ক মৌসুমে এ দুই নদী একদম পানিশূন্য থাকে। বিষয়টি জকিগঞ্জবাসীর জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কুশিয়ারা তীরের বাসিন্দা লাল মিয়া বলেন, ‘দেশ স্বাধীনের সময় এ কুশিয়ারা নদীতে স্রোত ছিল, তখন প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। তখন শুষ্ক মৌসুমেও নদী থাকত পানিভর্তি। লঞ্চ, স্টিমার ও ইঞ্জিন নৌকা চলাচল করত। তখন যাতায়াতের মাধ্যম ছিল নৌপথ । তা আজ সবই স্মৃতি। স্রোতঃস্বিনী কুশিয়ারা-সুরমা এখন মৃত-বিরানভূমি।

বিজ্ঞাপন

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুরমা–কুশিয়ারা নদীর এমন পরিস্থিতির পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো উজানে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হওয়া, নদীর তলদেশে অতিরিক্ত পলি জমে নাব্যতা হ্রাস, অপরিকল্পিত নদী দখল ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। শুষ্ক মৌসুমে নদীতে ন্যূনতম পরিবেশগত প্রবাহ বজায় না থাকায় নদীর স্বাভাবিক বাস্তুতন্ত্র মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে।

নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়ায় ইতোমধ্যে পুরো উপজেলায় দেখা দিয়েছে তীব্র পানি সংকট। সুরমা–কুশিয়ারা নির্ভর বহু মানুষ পানি, সেচ ও গৃহস্থালি কাজে নদীর ওপর নির্ভরশীল। নদীতে পানি কমে যাওয়ায় স্বভাবতই ভূগর্ভস্থ পানির ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হয়েছে , যা দীর্ঘমেয়াদি পানির স্তর নেমে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে । সেই সঙ্গে কৃষি উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে। ফলে ইতোমধ্যে খাদ্যনিরাপত্তাও হুমকির মুখে পড়েছে। এছাড়া নদীর পানি কমে যাওয়ায় মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে মৎস্যসম্পদ। ডিম ছাড়ার মৌসুমে পর্যাপ্ত পানির অভাবে কমে যাচ্ছে দেশি প্রজাতির মাছ। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেÑ জেলে ও নদীভিত্তিক জীবিকায় যুক্ত মানুষ। নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ না থাকায় পানিদূষণ হচ্ছে, কারণ কম পানিতে শিল্প ও নগর বর্জ্য ঘনীভূত হয়ে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি তৈরি করেছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য শুধু ড্রেজিং নয়, বরং সমন্বিত নদী ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা জরুরি। উজান থেকে ভাটির স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ বজায় রাখা, নদী দখল ও দূষণ রোধ এবং পরিবেশগত প্রবাহ নিশ্চিত না করা গেলে সুরমা–কুশিয়ারা ভবিষ্যতে আরো সংকটাপন্ন হয়ে উঠবে। এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে এ দুই নদী শুষ্ক হয়ে পড়া শুধু পরিবেশগত নয়, বরং সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসও মো. জসিম উদ্দিন জানান, সুরমা–কুশিয়ারা নদীর নাব্যতা সংকট ও শুষ্ক মৌসুমের পানি স্বল্পতা নিয়ে তারা সচেতন। নদীর বিভিন্ন অংশে ড্রেজিং, সেডিমেন্ট ব্যবস্থাপনা ও সমন্বিত নদী ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার আওতায় কাজ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নিয়মিত পানির স্তর পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে পরিস্থিতি নজরদারিতে রাখা হচ্ছে বলেও জানান তারা। তিনি বলেন, ‘সীমান্তবর্তী এলাকা ছাড়া সুরমা-কুশিয়ারার বিভিন্ন স্থানে খননের কাজ প্রক্রিয়াধীন আছে। দুই-এক বছরের মধ্যে এ কাজটি শুরু হবে ইনশাআল্লাহ।

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর

খুঁজুন