পালিয়ে যাওয়া ঠিকাদারদের প্রকল্পে নতুন করে দরপত্র

ইমদাদ হোসাইন
প্রকাশ : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮: ৫৫
আপডেট : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৫: ৪২

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত বছরের ৫ আগস্টের পর দেশের বিভিন্ন প্রকল্পের ঠিকাদার পালিয়ে যাওয়ায় উন্নয়ন কার্যক্রম ব্যাহত হয়। যেসব প্রকল্পের ঠিকাদার পালিয়ে গেছেন, সেগুলোয় নতুন করে দরপত্র আহ্বানের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

গতকাল বুধবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে ২০২৪-২৫ ও ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। আন্তঃমন্ত্রণালয়ের এ সভায় সভাপতিত্ব করেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। সভায় সব মন্ত্রণালয়ের সচিব উপস্থিত ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

অন্তর্বর্তী সরকার নজরদারি বাড়ানোয় দুর্নীতির পথ কঠিন হয়ে পড়েছে আমলাদের জন্য। এজন্য কেউ প্রকল্প পরিচালক হতে চাচ্ছেন না। এজন্য প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ ও বদলিতে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়নের সিদ্ধান্ত হয় গতকালের সভায়।

অর্থনীতির অন্যতম দুর্বল দিক হলো উন্নয়ন ব্যয়ের ধীরগতি। নতুন অর্থবছর শুরুর প্রথম দুই মাস (জুলাই-আগস্ট, ২০২৫-২৬) এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ২ দশমিক ৩৯ শতাংশ, যা আগের বছরের একই সময়ের ২ দশমিক ৫৭ শতাংশ থেকেও কম। যদিও আগস্ট মাসে বাস্তবায়ন সামান্য উন্নতি হয়েছে, তবে সামগ্রিক অগ্রগতি কাঙ্ক্ষিত নয়। এতে বোঝা যায় প্রকল্প বাস্তবায়নে কাঠামোগত সমস্যাগুলো কাটেনি।

সভায় প্রকল্প বাস্তবায়ন ও ব্যবস্থাপনায় সীমাবদ্ধতার বিষয়গুলো পর্যালোচনা করা হয়। এ সময় বেশকিছু প্রস্তাব পেশ করা হয়। এর মধ্যে ত্রুটিপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবের (ডিপিপি) বিষয়টি তুলে ধরা হয়। এজন্য জনবলের দক্ষতা বাড়ানো, ডিপিপি প্রণয়নে সংস্থাপর্যায়ে বাজেট বরাদ্দ, ডিপিপি প্রণয়নের শুরু থেকেই ফোকাল পারসন নিয়োগ এবং পরে তাকেই প্রকল্প পরিচালক নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়।

দেশের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর মূল সমস্যা দক্ষ প্রকল্প পরিচালক (পিডি) না থাকা। এটি গতকালের পর্যালোচনা সভায়ও আলোচনা করা হয়। এজন্য পিডি পুল গঠন, সার্টিফিকেশন সিস্টেম চালু করা, পিডিদের প্রণোদনার ব্যবস্থা চালু, প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ ও বদলিতে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়নের প্রস্তাব করা হয়। তাছাড়া সভায় সম্ভাব্যতা সমীক্ষার দুর্বলতা ও তথ্যের অসংগতি নিয়েও কথা হয়।

পর্যালোচনায় সভার বিষয়ে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ আমার দেশকে বলেন, ‘আমরা সভায় সব মন্ত্রণালয়ের সচিবকে ডাকি প্রকল্প বাস্তবায়নের হার কেন কম সে বিষয়ে জানতে। আমাদের সক্ষমতার অভাব কোথায় তা জানতে চেয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘এবার আগামী নির্বাচনের আগেই আরএডিপি চেয়েছি। আমরা সব সময় দেখি জানুয়ারি পর্যন্ত ৫০ শতাংশের কম বাস্তবায়ন থাকে। সচিবরা বলেছেন, সব সময় এরকমই হয়ে থাকে। আমরা জানিয়েছি, অর্থনীতি একটি চলমান প্রক্রিয়া, এটি থেমে থাকে না। আগের বছর বিশেষ কারণে বাস্তবায়ন কম হয়েছে, এবার কোনো অজুহাত চলবে না।’

পিডিদের ক্ষেত্রে তিনি বলেন, দেশের উন্নয়ন প্রকল্পে পিডিরাই সব। কিন্তু যারা এটিকে বাড়তি দায়িত্ব হিসেবে নেন, তারা অনিয়ম করেন; অদক্ষতার পরিচয় দেন। স্বাস্থ্য খাতের প্রকল্প বাস্তবায়ন সবচেয়ে কম। সেখানে প্রকল্প পরিচালক বানানো হয় চিকিৎসকদের। চিকিৎসকরা আয়-ব্যয় ও প্রকল্প ব্যবস্থাপনা কীভাবে বুঝবেন? অনুমোদনের আগে পিয়ার রিভিউ বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় ছয় মাসের প্রকল্প কোনো কোনো ক্ষেত্রে ছয় বছরের বেশি সময় লেগে যায়। সেজন্য সভায় ভূমি অধিগ্রহণ ও ইউটিলিটি স্থানান্তরের জন্য আলাদা প্রকল্প গ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছে।

ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, অধিকাংশ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয় ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে। দুই মাসের প্রকল্পে দেখা যায় আট থেকে ১০ বছরও সময় লাগে শুধু ভূমি অধিগ্রহণের কারণে। আমরা বলেছিÑআগে ভূমি অধিগ্রহণ করে দেখান, পরে প্রকল্প অনুমোদন।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, শতাধিক প্রকল্পের ঠিকাদার কাজ না করে পালিয়ে গিয়েছেন। বিশেষ করে তারা টাকাও তুলে নিয়ে গেছেন। তিস্তা সেচ প্রকল্পের ৮০০ কোটি টাকার কাজ বাকি রেখে উধাও হয়েছেন ১৬ ঠিকাদার। তারা কাজ না করে আগেভাগে বিল তুলে ৫ আগস্টের পর থেকে পলাতক। পাঁচ হাজার ৭৯১ কোটি টাকার আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া চার লেন সড়ক প্রকল্পের কাজ এক বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড জুলাই অভ্যুত্থানের পর ভারতে ফিরে যাওয়ায় এ কাজ পড়ে রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, নতুন করে কেউ প্রকল্প পরিচালক হতে চাচ্ছেন না। আর যেসব প্রকল্পের ঠিকাদার পালিয়ে গেছেন তাদের প্রকল্পে নতুন করে দরপত্র আহ্বানের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখন অপেক্ষা নতুন ক্রয় বিধিমালার। বিশেষ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড, সংস্থাটি দরপত্র দিচ্ছে না। কারণ হিসেবে তারা বলছে, যেসব ঠিকাদার পালিয়েছে, নতুন দরপত্র দিলে তারা বেনামে দরপত্র বাগিয়ে নেয়। নতুন ক্রয়নীতির গেজেট হলে পালিয়ে যাওয়া ঠিকাদারদের এ সুযোগ থাকবে না।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত