জামিন না দেয়ায় বিচারককে আ.লীগের দালাল বললেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা

বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৮ মে ২০২৫, ১৪: ২৩
আদালত

হত্যাচেষ্টা মামলায় এক আসামিকে জামিন না দেয়ায় বিচারককে আওয়ামী লীগের দালাল বলেছেন বিএনপিপন্থি কয়েকজন আইনজীবী। ঢাকার জেষ্ঠ্য বিচারিক হাকিম মো. জুনাইদের আদালতে শনিবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, কেরানীগঞ্জ মডেল থানার একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় আসামি হানিফ মেম্বার ১২ মে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

গত বৃহস্পতিবার তার জামিন চেয়ে আবার আবেদন করেন আইনজীবীরা। সেদিন তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করা হয়। শনিবার আবার জামিনের আবেদন করা হয়। এদিনও আবেদন জামিন নামঞ্জুর হলে এ ঘটনা ঘটান বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা।

সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, খোরশেদ আলমসহ কয়েকজন আইনজীবী জামিন শুনানি করেন। আদালত জামিন নামঞ্জুর করলে আইনজীবীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান। এসময় তারা স্যারকে (বিচারক) ফ্যাসিবাদের দোসর, দালাল বলে মন্তব্য করে আদালতের কজলিস্ট ছুড়ে ফেলে দেন।

তিনি বলেন, জামিন নামঞ্জুরের পর আইনজীবীরা বিষয়টা বিবেচনার আবেদন করেন। স্যার বলেন, অর্ডার তো দিয়ে দিয়েছি। যদি আবার শুনানি করতে চান তাহলে সিজেএম স্যারের কাছে স্পেশাল পুটআপ দিতে পারেন। প্রয়োজনে আমি আবার শুনবো। কিন্তু তারা তা না করে শুনানি করতে জোরাজুরি করেন। স্যার বলেন, প্রকাশ্য আদালতে জামিন নামঞ্জুর হয়েছে, এখন করার কিছুই নেই। এরপর তারা স্যারের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন, হুমকি দেন।

এ বিষয়ে বিচারকের সাথে আসামিপক্ষের আইনজীবীদের একটি কথোপকথনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

এ বিষয়ে আসামি পক্ষের আইনজীবী আবদুল খালেক মিলন বলেন, ‘বৃহস্পতিবার আমরা হানিফের জামিন আবেদন করি। শনিবার শুনানির জন্য ছিল। শুনানির পর জামিন নামঞ্জুর হয়। আমরা চলে আসি। পরে জিআরওকে ধমকান। বলেন, আপনি কি ভয় পান জামিনের বিরোধিতা করতে। জিআরও আমাদের সাপোর্ট করেছেন।'

তিনি বলেন, 'আমরা বলি নেগেটিভ (জামিন নামঞ্জুর) কিছু হলে রিকলের আবেদন করি। তিনি শোনেননি। পিটিশন রাখেননি। উল্টো জিআরওকে ধমক দেন।'

মামলার বাদী ফজলুল হক বলেন, ‘হানিফ মেম্বার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। ১৫ বছর নির্বাচন ছাড়া শাক্তা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের মেম্বার ছিলেন। লোকজন নিয়ে জমি দখল করতো সে। একসময় নৌকা বাইতো। বৃষ্টি নামলে ঘরে থাকতে পারতো না, ভিজে যেত। এখন সে কয়েক হাজার কোটি টাকার মালিক। বহু মানুষের জমি দখল করছে। জালিয়াতি করে মসজিদের জমিও রেজিস্ট্রি করে বিক্রি করছে। এক পাগলের ২৪ শতাংশ জমি জাল করে বিক্রি করছে। তিতাস গ্যাসের লাইন এনে দিবে হাজার হাজার লোকের কাছ থেকে এক লাখ-দেড় লাখ করে টাকা নিছে। অবৈধ গ্যাসের লাইন এনে দিয়েছিল। কিছু দিন পরে তিতাসের লোকজন এসে গ্যাস লাইন কেটে দেয়। আমি হজে থাকাবস্থায় আমার বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা দেয়।

প্রসঙ্গত, ৬ মে ফজলুল হক হানিফ মেম্বারসহ ১০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ৭০-৮০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা দায়ের করেন।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, কেরানীগঞ্জ মডেল থানার শাক্তা ইউনিয়নের আরশিনগরে ১৩ শতাংশ জমির ওপর বাড়ি করেছেন তিনি। তবে আসামিরা জমিটি দখলের পাঁয়তারা করছে। গত ২৫ ও ২৭ জানুয়ারি তাকে আসামিরা গালিগালাজ করেন এবং জমিটি ছেড়ে দিতে বলেন। জমি না ছাড়লে মেরে ফেলার হুমকি দেন। ২৯ জানুয়ারি তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন ফজলুল হক। ৫ মে তারা ফজলুল হকের বাড়িতে গিয়ে ভাঙচুর চালায়। তার কেয়ারটেকারকে হত্যার উদ্দেশ্যে হাত-পা বাঁধে। তখন তার স্ত্রী এগিয়ে এলে আসামিরা তাকে শ্লীলতাহানি করে। তার বাড়ির দেয়াল ভেঙে ফেলে। জিনিসপত্র লুটপাট করে নিয়ে যায়। এ সময় আসামিরা এক কোটি টাকা চাঁদাও দাবি করে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত